একটি দম্পতি হিসাবে, আপনি হয়তো যৌন সুরক্ষা দ্বারা শিশু গর্ভধারণ না করার চেষ্টা করে অনেক বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। এখন, আপনি গর্ভবতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবং তা দ্রুত হতে চান। এই প্রবন্ধটি গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করার জন্য সেরা সময় এবং প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যবান শিশুর গর্ভধারণ করার জন্য কয়েকটি দরকারী কৌশল এবং পরামর্শের সাথে আপনি একটি শিশুকে গর্ভে ধারণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন এমন পদ্ধতিগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
যদিও গর্ভধারণ না করতে পারার পিছনে অনেক কারণ থাকে। তার মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক উভয় কারণই হতে পারে। এই সব কারনের পিছনে বেশির ভাগ জ্ঞান এবং তথ্যের অভাব হয়। কিন্তু এই সব কারণ ছাড়াও অন্য কারণ হয় যার ফলে মহিলারা গর্ভধারণ করতে পারে না। কারণ সঠিক সময় সহবাস না করা। বেশিরভাগ দম্পতি জানেন না যে গর্ভধারণ করার জন্য সঠিক সময়ে সহবাস করা জরুরী।
গর্ভবতী হওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম
সহবাস বা যৌনসঙ্গম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক রকম ভুল ধারণা, কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। এই ব্যাপারগুলো সংবেদনশীল মনে করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতেও অনেকে সংকোচ বোধ করেন। দেখা যায়, সহবাস নিয়ে ভুল ধারণাগুলোর ওপর ভিত্তি করে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর ফলে সৃষ্টি হয় নানান শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক জটিলতা।
বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম কী? এই প্রশ্নের একটি বহুল প্রচলিত উত্তর হলো মিশনারি অবস্থান। এই অবস্থানে সহবাসের সময় পুরুষ ওপরে ও নারী নিচে থাকে। এই অবস্থানে সহবাস করলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে দাবি করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত কিছু ভিডিওতে বিশেষ কিছু অবস্থানে সহবাসের মাধ্যমে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় সহবাস করলে, কিংবা সহবাসের পর মেয়েরা দৌড়ঝাঁপ করলে গর্ভধারণ সম্ভব হবে না এমন ধারনাও প্রচলিত।
কিন্তু বিজ্ঞান বলে এগুলোর কোনটাই সঠিক নয়। নির্দিষ্ট একটা বা দুইটা অবস্থানে সহবাস করলে সন্তানধারণের সম্ভাবনা বেশি এই দাবিগুলো মোটেও বিজ্ঞান সমর্থিত নয়।
সন্তান ধারণের জন্য শুক্রাণু যোনিপথ বা মাসিকের রাস্তায় পৌঁছানো প্রয়োজন। এমনকি বীর্য যোনিপথের কাছাকাছি পৌঁছলেও গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। তাই যেসব অবস্থানে সহবাস করলে মাসিকের রাস্তায় বীর্যপাত হয়, কনডম বা অন্য কোনো জন্মনিরোধক ব্যবহার না করা হলে, সেসব অবস্থানের সবগুলোতে গর্ভধারণে সম্ভাবনা থাকে। কোন একটা অবস্থান অন্যটির চেয়ে বেশি ভালো বা কার্যকর বিষয়টি এমন নয়।
যে অবস্থানেই সহবাস হোক না কেন, পুরুষের বীর্যপাতের পরে নারীর যোনিপথ থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রাণু পৌঁছে যায় জরায়ুমুখে। তাই নির্দিষ্ট একটা বা দুটো অবস্থানে সম্ভাবনা বেশি বা সেগুলো ছাড়া সন্তান হবে না, এমন কথা মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়।
অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন যে বীর্যপাতের পর মাসিকের রাস্তা দিয়ে বীর্য বের হয়ে আসার অর্থ হলো সব শুক্রাণু সব বের হয়ে যাওয়া এবং নারীর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়া। এই বেরিয়ে আসা বা ফ্লোব্যাক ঠেকানোর জন্য ইন্টারনেটে নানা পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ পাওয়া যায়, যেমন—
- নারীকে আধা ঘণ্টা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে হবে
- কোমরের নিচে বালিশ দিয়ে উঁচু করে রাখতে হবে
- শুয়ে পা দুটো উঁচু করে রাখতে হবে
এছাড়া অনেকে প্রশ্ন করে থাকে, সহবাসের পর কতক্ষণ শুয়ে থাকতে হয়। এসম্পর্কে ধারণা হলো সহবাস করার পর কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে কিংবা পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে রাখলে শুক্রাণু জরায়ুতে পৌঁছতে পারবে।
বিজ্ঞান যা বলে: মাসিকের রাস্তা দিয়ে বীর্য বেরিয়ে আসাকে বলা হয় ফ্লোব্যাক। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি ঘটনা। একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে ৯৪ শতাংশ সহবাসের পরেই এই ফ্লোব্যাক দেখা যায়। সেটা বিছানায় শোওয়া অবস্থায় হতে পারে, উঠে হাঁটতে গেলে হতে পারে, আবার প্রস্রাব করার সময়েও হতে পারে। এটা দুশ্চিন্তার কোন বিষয় নয়।
এজন্য বিশেষ কোনো কাজ করার বা বিশেষ অবস্থানে শুয়ে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। এমনকি শুক্রাণু জরায়ুতে পৌঁছানোর জন্যও বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই। শুক্রাণু সাধারণত দেহের গতানুগতিক প্রক্রিয়াতে যোনিপথ থেকে খুব দ্রুত জরায়ুতে পৌঁছে যায়। তাই এই বিশেষ কাজগুলোর কোনোটাই গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় এমন কোন প্রমাণ নেই। তবে এতে আপনার ভালো লাগলে করতেই পারেন।
মোট কথা, বীর্য বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। বরং বাচ্চা নিতে চাইলে শুক্রাণু নারীদেহে একটা অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। মাসের কয়েকটা নির্দিষ্ট দিনে নারীদেহ শুক্রাণুর জন্য খুব সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে।
দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার উপায়
কিভাবে দ্রুত গর্ভবতী হওয়া যায় এবং প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্যবান শিশুর গর্ভধারণ করার জন্য কয়েকটি দরকারী কৌশল এবং পরামর্শের সাথে আপনি একটি শিশুকে গর্ভে ধারণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন এমন পদ্ধতিগুলি নিয়ে আলোচনা করে।
35 বছরের কম বয়সী অল্প বয়স্ক দম্পতি হিসাবে, যদি আপনি নিয়মিত অরক্ষিত যৌন যঙ্গম করেন, তবে শিশুকে গর্ভে ধারণের জন্য সর্বাধিক 6 মাস সময় লাগতে পারে। তবে, আপনি যদি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ না করে থাকেন, তবে সম্ভবত চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে। একই সুপারিশ 35 বছরের বেশী বয়সের দম্পতিদের জন্য যায়, যারা 6 মাস পরেও গর্ভধারণ করেননি।
একই সময়ে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে গর্ভধারণ করতে সময় লাগতে পারে। অনুমান করা হয় যে, 30 বছর বয়স্ক এক সুস্থ মহিলার যে কোনো প্রদত্ত মাসে গর্ভবতী হওয়ার শুধুমাত্র 20% সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, একটি দম্পতি হিসাবে, আপনি গর্ভবতী না হওয়ায় মানসিক চাপ নেবেন না, এবং অবশ্যই নিয়মিত আপনার যৌন জীবন উপভোগ করবেন।
আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি মৌলিক পদক্ষেপ আপনাকে নীচে দেওয়া হল:
আপনি নিয়মিত যৌন সঙ্গম করছেন তা নিশ্চিত করুন।
প্রজনন বিশেষজ্ঞের মতে, আপনার নিয়মিত যৌন সঙ্গম করা উচিত, কিন্তু রোজ নয়, কারণ শুক্রাণু সহজেই ৭ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। শুক্রাণু গড়ে তুলতে যথেষ্ট সময় দেওয়ার জন্য, যৌন সঙ্গমের ঘটনাগুলির মধ্যে পর্যাপ্ত সময়ের ফাঁক বজায় রাখুন। উপরন্তু, মাসে মাত্র ৬ দিন থাকে যখন আপনি একটি শিশুকে গর্ভে ধারণ করতে পারেন। সেটি হল ডিম্বস্ফোটনের আগের ৫ দিন, সাথে ডিম্বস্ফোটনের দিনটি।
আগে থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করুন।
হরমোনের আকারে পাওয়া যায় এমন কিছু জন্ম নিয়ন্ত্রকগুলি ব্যবহার বন্ধ করার পরেও আপনার ফার্টিলিটি কমাতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ির ক্ষেত্রে, তার হরমোন প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না এবং আপনি এই বড়িগুলি ব্যবহারের পূর্বেকার আপনার নিয়মিত মাসিক চক্রগুলিতে ফিরে যেতে সক্ষম হবেন। আপনি যদি ইন্ট্রাইউটেরিন ডিভাইস (আইইউডি) ব্যবহার করেন।
তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার ফার্টিলিটি পুনরুদ্ধারের জন্য একজন স্বাস্থ্য-সেবা পেশাদার দ্বারা ডিভাইসটি সরিয়ে নিয়েছেন। ডেপো-প্রোভেরার প্রভাবগুলি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে; অতএব গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য, গর্ভধারণ করার চেষ্টা করার অন্তত এক বছর আগে থেকে শটগুলি নেওয়া বন্ধ করুন।
উপরন্তু, একটি স্বাস্থ্যকর শিশু গর্ভে ধারণ করতে যে কোনও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যেমন ধূমপান এবং অ্যালকোহল ব্যবহার পরিত্যাগ করতে হবে। ফোলিক এসিডের নিয়মিত ডোজ নিলে (গর্ভধারণের চেষ্টা করার অন্তত এক মাস আগে) আপনার সম্ভাবনাগুলি বাড়াতে পারে এবং আপনার শিশুর কোনও জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমাতে পারে। শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখলে এবং প্রতিদিন আপনার ক্যাফিন খাওয়া 16 আউন্সে সীমিত রাখলে সাহায্য করতে পারে।
বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়
গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল ডিম্বস্ফোটনের সময়কালে, যে সময়কালে ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিপক্ক ডিম মুক্ত হয়ে যায়। যদিও শুক্রাণু যৌনতার পর 48 থেকে 72 ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, পরিপক্ক ডিম্বাণু ডিম্বস্ফোটনের পর মাত্র 12 থেকে 24 ঘন্টার জন্যই বাঁচতে পারে। এর মানে হল যে মহিলা ডিম্বাণুটি মুক্তি পাওয়ার পর মাত্র 12-24 ঘণ্টার মধ্যেই নিষিক্ত হতে পারে।
অতএব, আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য, ডিম্বস্ফোটনের মোটামুটি 2-3 দিন আগে যৌন সঙ্গম করা ভাল। এটি নিশ্চিত করে যে, ডিমটি অবশেষে যখন মুক্ত হয় তখন সেটিকে নিষিক্ত করার জন্য ফ্যালোপিয়ান টিউবে যথেষ্ট পরিমাণে শুক্রাণু থাকে।
আপনার ডিম্বস্ফোটন কখন ঘটবে তার পূর্বাভাস পেলে, আপনার শিশু গর্ভে ধারণ করাতে অত্যন্ত সাহায্য হতে পারে। কোনও মহিলার গড় ২৮ দিনের মাসিক চক্রের মধ্যে থাকলে, ডিম্বস্ফোটন শুধুমাত্র একবার ঘটে এবং সাধারণত পরবর্তী চক্রের শুরু হওয়ার প্রায় 14 দিন আগে ঘটে।
যাইহোক, ২৮ দিনের মাসিক চক্রের মহিলারা সংখ্যালঘুদের মধ্যে পড়েন, কারণ বেশিরভাগ মহিলাদের ২৪ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে মাসিক চক্র থাকে। যেহেতু চক্রের শেষ দিনের বা যে দিন আপনার পিরিয়ড হয় তার ১৪ দিন আগে ডিম্বস্ফোটন ঘটে, এর মানে হল যে ২৪ দিনের মাসিক চক্রের মহিলার জন্য ১০ তম দিনে বা ৩৫ দিনের মাসিক চক্রের কোন মহিলার ২১ তম দিনে এটি হতে পারে।
নিয়মিত মাসিক চক্র যুক্ত মহিলারা প্রতি মাসে ডিম্বস্ফোটনের সময়ের পূর্বাভাস পেতে, ডিম্বস্ফোটন ক্যালকুলেটরের মতো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। উপরন্তু, আপনার ঋতু পর্যায় জুড়ে আপনার হরমোন মাত্রা পরীক্ষা করে যে ডিম্বস্ফোটন পূর্বাভাস কিট, সেটি আপনার কোন দিন ডিম্বস্ফোটন হবে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে।
অনিয়মিত পিরিয়ড যুক্ত নারীদের ক্ষেত্রে, কখন ডিম্বস্ফোটন ঘটবে তার পূর্বাভাস পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে।
আপনার মাসিক চক্রটি যদি অনিয়মিত হয়, তবে আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি সন্ধান করতে পারেন যা ডিম্বস্ফোটন ঘটছে তা নির্দেশ করতে পারে:
আপনার মৌলিক শরীরের তাপমাত্রার কোন বৃদ্ধি ঘটছে কিনা নোট করুন।
আপনার শরীরের মৌলিক তাপমাত্রা হল বিশ্রামের সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রা ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়ার সময় সামান্য বৃদ্ধি পায়। আপনি আপনার বিছানা থেকে ওঠার আগে প্রতিদিন সকালে একটি থার্মোমিটার ব্যবহার করে আপনার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। আপনি আপনার রেকর্ডিং থেকে আপনার তাপমাত্রার ধরণগুলি সনাক্ত করতে পারেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির 2-3 দিন আগে ফার্টিলিটি সর্বোচ্চ থাকবে।
যোনি স্রোতে কোন পরিবর্তন হলে নোট করুন।
ভিজা এবং চটচটে যোনি স্রোত বৃদ্ধি পেলে লক্ষ্য রাখুন, যা ডিম্বস্ফোটনের ঠিক আগে ঘটে। ডিম্বস্ফোটনের পরে, সার্ভিকাল মিউকাস কমে যায় এবং ঘন ও থকথকে দেখতে লাগে।
বাচ্চা নেওয়ার সঠিক বয়স
যে দম্পতি ১টি সন্তান চান, তারা যদি ৩২ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন, তাহলে তাদের সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। এর পর থেকে সেই সম্ভাবনা আস্তে আস্তে কমে যাবে। ৩৭ বছর বয়সে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেমে আসে ৭৫ শতাংশে। আর ৪১ বছর বয়সে তা ৫০ শতাংশে নেমে যায়।
২টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৭ বছর বয়সে চেষ্টা শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩৪ বছর বয়সে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে চলে যায়। আর বয়স যদি ৩৮ বছর হয়ে যায়, তবে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেমে আসে ৫০ শতাংশে।
৩টি সন্তান নিতে চাইলে, ২৩ বছর বয়সে চেষ্টা করতে শুরু করলে সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। ৩১ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলে সেই সম্ভাবনা কমে ৭৫ শতাংশে আসে। আর ৩৫ বছর বয়সে গিয়ে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ।
সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ সফলতার সম্ভাবনা চাইবেন, নাকি ৭৫ বা ৫০ শতাংশ – এটা একান্তই একটি দম্পতির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিছু কিছু দম্পতির কাছে সন্তান নেওয়াই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা করতে রাজি থাকেন।
তারা হয়তো ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেবেন। আবার কেউ কেউ জীবনের বিভিন্ন অবস্থা বিবেচনা করে ৭৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেন। সব দিক বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত ধারণা নিয়ে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করাই আর্টিকেলটির উদ্দেশ্য।
সন্তান ধারণে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো যাতে আপনার অবস্থার সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।
বাচ্চা নেওয়ার আগে পুরুষের করনীয়
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা আছে। কিন্তু গুরুতর এজোস্পার্মিয়া যদি হয় সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। যেমন-
১. যদি কোনো পুরুষের শরীরে হরমোনের ঘাটতি থাকে তাহলে তাকে হরমোন চিকিৎসা দিলে স্পার্মাটোজেনেসিস বা শুক্রাণু তৈরি হতে পারে। হরমোনের ঘাটতি না থাকলে অন্য কোনো কারণের জন্য হরমোন চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই।
২. একজন পুরুষ যদি দীর্ঘ সময়ে খুব গরমে কাজ করেন তাহলে কিছু সময়ের জন্য ঠাণ্ডায় অবস্থান করা উচিত। সুবিধা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ পেশা পরিবর্তন করতে হবে।
৩. রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে কৃষকদের এজোস্পার্মিয়া বেশি হয়। সেজন্য এগুলো যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত।
৪. কীটনাশকযুক্ত খাবার পরিহার করে অর্গানিক খাবার খাওয়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।
৫. কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা তৈরি করলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে তা বন্ধ রাখতে হবে।
৬. ক্যানসারের চিকিৎসা, কেমোথেরাপি নেওয়ার আগে শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে।
৭. প্রয়োজনে আইইউআই বা আইভিএফ চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। আইইউআই চিকিৎসার জন্য শুক্রাণুর সংখ্যা কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন হতে হবে। শুক্রাণুর সংখ্যা ১০ মিলিয়নের নিচে হলে টেস্টটিউব পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
টেস্টটিউব চিকিৎসার আবার দুটি ভাগ, যেমন- শুক্রাণু ৫ মিলিয়নের বেশি হলে আইভিএফ এবং ৫ মিলিয়নের কম হলে ইকসি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ইকসি বা টেস্টটিউব চিকিৎসা করা যাবে।
৮. শুক্রাণু তৈরি হচ্ছে কিন্তু বীর্যে আসতে পারছে না বা শুক্রাণু বের হওয়ার নালী বন্ধ থাকলে সার্জারি করা যেতে পারে।
তবে বীর্যে একেবারেই যদি শুক্রাণু পাওয়া না যায় তাহলে তাদের জন্য কোনো চিকিৎসা নেই।
লেখকের শেষ মতামত
আশা করি গর্ভবতী হওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গর্ভবতী হওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবে। এমন প্রয়োজনীয় ব্লগ পড়তে লার্ন-বিডি.কম ভিজিট করার অনুরোধ রইলো ধন্যবাদ।