বর্তমান যুগে, যেখানে ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন শপিং, এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটছে, একটি ভিসা কার্ড (Visa Card) আপনার আর্থিক জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগের চেয়ে এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবন আরও ডিজিটাল হয়ে উঠেছে, এবং এর সঙ্গেই আমাদের আর্থিক লেনদেনের পদ্ধতি ও মাধ্যমও পাল্টেছে।
এক সময় ক্যাশ বা চেকের মাধ্যমে লেনদেন করাই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি, কিন্তু বর্তমানে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন করা সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ। সেই লেনদেনের মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ভিসা কার্ড।
উপস্থাপনা
ভিসা কার্ড বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত পেমেন্ট সিস্টেমগুলোর মধ্যে একটি। এর মাধ্যমে আপনি আন্তর্জাতিক লেনদেন, অনলাইন কেনাকাটা, বিল পেমেন্ট, টাকা পাঠানো এবং আরও অনেক সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
শুধু তাই নয়, ভিসা কার্ড আপনাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সুবিধা প্রদান করে, যা আপনাকে সারা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সহজে লেনদেন করতে সক্ষম করে। তবে, অনেক মানুষ জানেন না ভিসা কার্ড কিভাবে বানানো যায় এবং এটি পাওয়ার জন্য কোন যোগ্যতা প্রয়োজন। এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো ও ভিসা কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাব।
ভিসা কার্ড কি
ভিসা ইনকর্পোরেটেড বা ভিসা কার্ড হল একটি আমেরিকান বহুজাতিক আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যার সদর দপ্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। এই আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সারা পৃথিবীতে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে সকল সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার সরবরাহ করে থাকে। সাথে সারা বিশ্বের মানুষকে ভিসা ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করে।
যদিও আগেই বলেছি তারা সারা বিশ্বের মানুষকে ভিসা ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করে থাকে কিন্তু তারা মোটেই সরাসরি সাধারণ মানুষকে এই সেবা দেয়না।
তারা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের কাষ্টোমারদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের প্রয়োজন ও সুবিধামত এই এই কার্ড দিয়ে থাকে।
কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো
ভিসা কার্ড ব্যবহার করতে গেলে অবশ্যই যে ব্যাংকের ভিসা কার্ডে বেশি সুবিধা রয়েছে ওই ব্যাংকের ভিসা কার্ড ব্যবহার করা প্রয়োজন। আমাদের বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক রয়েছে তবে প্রত্যেকটি ব্যাংকের ভিসা কার্ডের সুবিধা একই নয়। বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক রয়েছে এই ব্যাংকের ভিসা কার্ডগুলোর সুবিধা এক এক রকম। আমাদের দেশের কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
- ডাচ বাংলা ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক
ডাচ বাংলা ব্যাংক: আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের বেশ কিছু কার্ড পাবেন এর মধ্যে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ভিসা কার্ড। এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের যেকোনো বৃহৎ এটিএম নেটওয়ার্ক এ লেনদেন সুবিধা নিতে পারবেন। পাশাপাশি অনলাইন শপিং বিল পেমেন্ট করতে পারবেন। বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনের জন্য বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবেন। কার্ডের ধরন অনুযায়ী বার্ষিক চার্জ প্রযোজ্য হয়। ডাচ বাংলা ব্যাংকের কার্ডের বার্ষিক চার্জ কার্ডের ধরন অনুযায়ী ৪০০-১০০০ টাকার মধ্যে।
ইসলামী ব্যাংক: কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো এর মধ্যে একটি রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত একটি ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী লেনদেনের সুবিধা দেয়। ইসলামী ব্যাংকের কার্ডের সুবিধার মধ্যে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, প্রিপেইড কার্ড এর সুবিধা পাওয়া যায়।
ইসলামী ব্যাংকের এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে আপনি ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী লেনদেন করতে পারবেন। হজ ও ওমরা কিংবা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বিশেষ সুবিধা পাবেন। ই-কমার্স ও অনলাইন কেনাকাটার জন্য এই কার্ডগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় অনুযায়ী লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের বাৎসরিক কার্ডের চার্জ ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে ৫০০-৭০০ টাকা। ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে ১০০০-১৫০০ টাকা, যা সময় অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।
ব্র্যাক ব্যাংক: কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো এর মধ্যে একটি হল ব্র্যাক ব্যাংক। ব্র্যাক ব্যাংকে ভিসা কার্ডগুলোর মাধ্যমে আপনি একই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংকের ভিসা কার্ডের রিওয়ার্ড পয়েন্ট অফার পাওয়া যায়। ব্র্যাক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, প্রিমিয়াম প্লাটিনাম কার্ড নিতে পারবেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে আপনি যে কোন কিছুতে পেমেন্ট করলে রিভার্ড পয়েন্ট পাবেন। দেশীয় ভ্রমণ ও ইন্টারন্যাশনাল ভ্রমণের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ অফার। আপনি ব্র্যাক ব্যাংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে দৈনিক ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করতে পারবেন। ব্র্যাক ব্যাংকের বাৎসরিক চার্জ ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে ৬০০-৮০০ টাকা। ক্রেডিট কার্ড ও প্রিমিয়াম প্লাটিনাম কার্ডের ক্ষেত্রে ১৫০০-২৫০০ টাকা।
প্রিয় পাঠক উপরে কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো সেগুলোর তুলনায় করেছি। আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী ও চাহিদা অনুযায়ী সেই ব্যাংকগুলো থেকে ভিসা কার্ড সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।ত
ভিসা কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে হয়। এদের মধ্যে রয়েছে:
১. বয়স
ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য সাধারণত আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। কিছু ব্যাংক ২১ বছরের উর্ধ্বে আবেদনকারীদের জন্য ভিসা কার্ড ইস্যু করে থাকে।
২. আয়
আপনার মাসিক আয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ব্যাংক নির্দিষ্ট আয়ের সীমা নির্ধারণ করে থাকে, যেগুলো পূর্ণ হলে আপনি ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন। সাধারণত, মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য ভিসা কার্ডের সহজ প্রবেশাধিকার থাকে।
৩. কৃতিত্ব বা ক্রেডিট ইতিহাস
ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য আপনার ক্রেডিট ইতিহাসের ভালো হওয়া জরুরি। যদি আপনার আগের কোনো ক্রেডিট বা লোন পরিশোধে সমস্যা থাকে, তবে ব্যাংক আপনার আবেদন গ্রহণ নাও করতে পারে। সুতরাং, একটি পরিষ্কার আর্থিক ইতিহাস থাকা প্রয়োজন।
৪. স্থিতিশীল কর্মজীবন
আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী চাকরি করেন অথবা আপনার ব্যবসা স্থিতিশীল হয়, তবে ব্যাংক আপনার আয়ের স্থায়িত্ব যাচাই করে আপনাকে ভিসা কার্ড ইস্যু করতে সক্ষম হবে।
৫. ন্যূনতম ডিপোজিট
কিছু ব্যাংক ভিসা কার্ড ইস্যু করার জন্য একটি ন্যূনতম ডিপোজিট রাখার শর্ত দেয়। এর মাধ্যমে ব্যাংক আপনার আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করতে চায়।
৬. সঠিক ডকুমেন্টেশন
আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টাদি সঠিকভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে প্রদান করা জরুরি। যদি কোন ডকুমেন্ট মিসিং থাকে, তবে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
ভিসা ডেবিট কার্ড এর সুবিধা
সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। এক সময় ছিল যখন আমরা ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা ডিপোজিট বা উত্তোলনের কাজ করালাম তবে বর্তমান যুগে প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাতে অনেক সহজ এবং আমাদের জীবন যাত্রার মান আরো উন্নত করে তুলেছে।
এই আধুনিক প্রযুক্তির অবাক করা মত একটি আবিষ্কার হচ্ছে কার্ড। আমরা কমবেশি অনেকেই ভিসা কার্ড এবং মাস্টার কার্ড সহ বিভিন্ন কার্ডের নাম শুনেছি। নিচে ডেবিট কার্ডের সুবিধা গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- ভিসা কার্ডের মাধ্যমে আপনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে খুব সহজেই টাকা আদান-প্রদান করতে পারবেন।
- ভিসা কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করার মাধ্যমে আপনি ভিসা থেকে বিভিন্ন ধরনের অফার উপভোগ করতে পারবেন।
- সাধারণভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনে বিভিন্ন ধরনের রিস্ক থেকে থাকে তবে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার থাকবে না।
- আপনি একসাথে অনেকগুলো লেনদেন সম্পূর্ণ করতে চাইলে তা ভিসা কার্ড দিয়ে খুব সহজেই করতে পারবেন।
- কোথাও শপিং করতে গেলে সেখানকার যদি পেমেন্ট মেথড ভিসা কার্ড হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে খুব সহজেই আপনি ভিসা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
- ভিসা কার্ডে পেয়ে যাবেন আপনি বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ট্রানজেকশনের সুবিধা।
- ভিসা কার্ড ব্যবহার করে আপনি অনলাইন রিচার্জ করতে পারবেন।
- ভিসা কার্ড থেকে নগদ এবং বিকাশ একাউন্টে টাকা আনতে পারবেন।
- বিশ্বের যে কোন দেশে টাকা লেনদেন করতে ভিসা কার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- এছাড়াও ভিসা কার্ডে আরো অনেক ধরনের সুবিধা ও পেয়ে যাবেন। যখন আপনি এটি ব্যবহার করবেন তখন নিজে থেকে এর সুবিধা গুলো উপভোগ করতে পারবেন।
ভিসা কার্ড করতে কত টাকা লাগে
অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে ভিসা কার্ড করতে কত টাকা লাগে। আসলে ভিসা কার্ড করতে কত টাকা লাগে এটি মূলত নির্ভর করে ব্যাংকের ওপর। কারণ প্রতিটি ব্যাংকের ভিসা কার্ডের রিকোয়ারমেন্ট একই হয় না বরং ব্যাংক অনুযায়ী এর ধরন সবস্ময় ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই ভিসা কার্ড করতে কত টাকা লাগে এইটা বলা বেশ কঠিন।
এজন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে আপনি যে ব্যাংকের আওতায় ভিসা কার্ড তৈরি করে নিতে চাচ্ছেন ওই ব্যাংক থেকেই ভিসা কার্ড করতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানত সেই ব্যাংকে যোগাযোগ করুন। আমরা তো ইতিমধ্যে আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি যে কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো।
ভিসা কার্ড দিয়ে সর্বোচ্চ কত টাকা তোলা যায়
ভিসা কার্ড দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা তোলা যায়। অর্থাৎ ভিসা কার্ড দিয়ে আপনি একদিনে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে ২০,০০০ টাকা পরে ২০,০০০ টাকা এবং পরে ১০,০০০ টাকা মোট ৩ বারে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত তুলনায় পারবেন।
ভিসা কার্ড সম্পর্কে আমাদের মতামত
ভিসা কার্ড আমাদের প্রতিনিয়ত বেশ কিছু সুবিধা দেয়। ভিসা কার্ড একটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পেমেন্ট কার্ড। ভিসা কার্ডের মাধ্যমে প্রত্যেকটি দেশের দৈনিক আর্থিক লেনদেন করা যায়। পাশাপাশি অনলাইন শপিং এর জন্য বাইরের দেশে পেমেন্ট করতে অত্যন্ত উপযোগী। ভিসা কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
আশা করি আপনি আমাদের পোস্টটি পড়ে কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো – ভিসা কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও কোন ব্যাংকের ভিসা কার্ড ভালো সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। এমন প্রয়োজনীয় ব্লগ পড়তে লার্ন-বিডি.কম ভিজিট করার অনুরোধ রইলো ধন্যবাদ।