বেকার এবং প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সম্পর্কে জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হলো বাংলাদেশের প্রবাসীদের জন্য জন্য একটি বিশেষায়িত ব্যাংক যার মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার জন্য বা দেশে ফিরে এসে ব্যবসা করার জন্য লোন নেওয়া যায় এবং বিভিন্ন আর্থিক চাহিদা পূরণ হয়।
বেকারত্ব বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমস্যা। আর এই বেকারত্বের হার কমাতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দেশের বাইরে গিয়ে টাকা ইনকাম করা ইচ্ছুক প্রবাসীদের হাউজ লোন দিয়ে সাহায্য করে থাকে। অনলাইন এবং অফলাইন উভয়ের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম করার মাধ্যমে হাউজ লোনের জন্য আবেদন করা যাবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সিস্টেম চালু করেছে। যাইহোক, নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে হাউজ লোন প্রদান করা হয় যদি কোন প্রবাসী যেকোনো দেশে গিয়ে যেকোনো কারণে সেই দেশ থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে আসে এবং তার কাছে পুনর্বাসনের জন্য কোন অর্থ না থাকে তাহলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে হাউজ লোন নেওয়ার মাধ্যমে ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে হাউজ লোন নেওয়ার জন্য তাদের বেশ কিছু শর্ত রয়েছে সেগুলো মানতে হবে এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং বেশ কিছু ডকুমেন্ট এবং তথ্য দিয়ে সেই ফরমটি পূরণ করতে হবে।
উপরের অংশে আপনাদেরকে বলেছি যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে প্রায় সেগুলোই ডকুমেন্টস ব্যাংক হাউজ লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে। এছাড়াও আপনারা pkb.gov.bd এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করে আরো বেশ কিছু তথ্য জেনে নিতে পারেন।
এরপর সকল শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে আবেদন পত্র পূরণ করে ব্যাংকে জমা দিয়ে আপনার যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন সেই পরিমাণ অর্থ লোন নিতে পারেন। লোন নেওয়ার পরে সেই লোন আপনি ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারবেন কিনা সেই দিক বিবেচনা করে সেই পরিমাণ লোন নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন কারা পাবে
- প্রবাসী বাংলাদেশিরা: যারা বিদেশে কর্মরত আছেন এবং বৈধ উপার্জন করেন, তারা এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- বাংলাদেশি নাগরিক: যারা দেশে বসবাস করছেন এবং নির্দিষ্ট আয়ের প্রমাণপত্র জমা দিতে পারেন, তারাও আবেদন করতে পারেন।
- বয়স: সাধারণত ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এই লোনের জন্য যোগ্য।
- আয়ের উৎস: আবেদনকারীর অবশ্যই স্থিতিশীল আয়ের উৎস থাকতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন পাওয়ার যোগ্যতা
সকল আবেদনকারীই এই লোন নিতে পারবে না। এই লোনের জন্য উপযোগীদেরই কেবল ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার যোগ্যতা হলো নিম্নরূপ-
- আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক ও বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে।
- যে শাখায় আবেদন করবে আবেদনকারীকে সেই শাখার বাসিন্দা হতে হবে।
- অন্যকোনো ব্যাংক বা NGO এর সাথে ঋণ খেলাপির ইতিহাস থাকা যাবে না।
- আবেদনকারীর সপক্ষে কমপক্ষে ২ জন জামিনদার থাকতে হবে এবং ঋণ পরিশোধে তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে হবে।
- পুনর্বাসন ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যবসায় বা প্রকল্পের ঠিকানা, উদ্দেশ্য সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিয়ে হবে।
- অভিবাসন ঋণ পেতে আবেদনকারীর বিদেশে কাজের জন্য বৈধ ভিসা পেতে হবে।
উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে আপনি Probashi Kallyan Bank Loan এর জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন নিতে কি কি লাগে
অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রমের মতো এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আপনাকে কিছু বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কি কি কাগজপত্র লাগে তা ঋণের ধরন ও টাকার পরিমাণের উপর নির্ভর করছে।
তবে সাধারণত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন নিতে যা যা কাগজপত্র লাগে তা হলো:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভিসার ফটোকপি
- বিএমইটি কার্ডের ফটোকপি
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ্য দলিল
- আবেদনকারীর সদ্যতোলা ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- দুই জন জামিনদারের প্রত্যেকের ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রামাণ্য দলিল
- জামিনদারের যেকারো সাক্ষরকৃত ৩টি বৈধ ব্যাংক চেক
- ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি (পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু অভিবাসন ঋণের ক্ষেত্রে)
- প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, ঠিকানা ও সর্বশেষ ১ বছরের আয়-ব্যয় বিবরণী সম্বলিত প্রতিনেদন (পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু অভিবাসন ঋণের ক্ষেত্রে)
উপরে সকল ধরণের স্কিমের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কথা উল্লেখ করেছি। এছাড়া এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন নেওয়ার নিয়ম
এতক্ষণে আমরা এই ঋণের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আশা করবো এসব তথ্য ও সুবিধা সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছে।
ব্লগের এই অংশে আমরা জানবো প্রবাসী কল্যাণ ব্যংক হাউজ লোনের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয়, কোথায় আবেদন করতে হয় সে সম্পর্কে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন পাওয়ার নিয়ম হলো:
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ: উপরে আমরা উল্লেখ করেছি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি কাগজপত্র লাগে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করবেন। এরপর আবেদনকারী ও জামিনদারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফেলুন।
অ্যাকাউন্ট খোলা: ঋণ নেওয়ার জন্য দ্বিতীয় ধাপ হলো এই ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যাংক লোন নগদ টাকায় দেওয়া হয় না, বরং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে উত্তোলন করে নিতে পারবেন।
আবেদন ফরম পূরণ: এ পর্যায়ে এসে ব্যাংক থেকে একটি প্রবাসী কল্যাণ ঋণের আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। আবার চাইলে অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে তা পূরণ করে নিয়ে যেতে পারেন। ব্যাংকের শাখায় বিনামূল্যে এই ফরম সরবরাহ করা হয়।
আবেদনপত্র জমাদান: সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করার পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাতে সংযুক্ত করতে হবে। এরপর ব্যাংকের শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে হবে।
ঋণ মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর: ব্যাংকের ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আপনার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। এরপর সকল তথ্য সঠিক থাকলে এবং আপনি উক্ত ঋণের জন্য উপযুক্ত হলে আপনাকে ঋণ প্রদান করা হবে। আর যদি কোথায় ভুল-ত্রুটি কিংবা অসামঞ্জস্য থাকে তাহলে আবেদন নামঞ্জুর করে দিবে।
এই কয়েকটা ধাপ অনুসরণ করে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ পেতে পারেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সুবিধা
- বাড়ি কেনা, নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য: লোনের টাকা বাড়ি কেনা, নির্মাণ বা সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা যায়।
- তুলনামূলকভাবে সহজ শর্তে লোন প্রদান করা হয়।
- বিদেশে গিয়ে ইনকাম করার পর এই লোন পরিশোধ করা যায়।
- সুদের পরিমাণ ৭ থেকে ৯ শতাংশ।
- বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া যাবে। যদিও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায় তবে সেটি ঋণের ধরনের উপর নির্ভর করে।
- দেশে এসে ব্যবসা করার জন্য এই লোন পাওয়া যায়।
- প্রবাসে থাকা অবস্থায় আর্থিক সমস্যা হলে সেক্ষেত্রেও লোন পাওয়া যায়।
- লোনের মেয়াদ দীর্ঘ হওয়ায় মাসিক কিস্তি কম।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ ঋণের অসুবিধা
- জামিন প্রদানের প্রয়োজনীয়তা
- সময়মত কিস্তি পরিশোধ না করলে জরিমানা
- ঋণের উপর বিভিন্ন ফি প্রযোজ্য
- লোনের আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
- লোনের জন্য অনেক ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
- লোনের জন্য জামানত বা সিকিউরিটি প্রদান করতে হতে পারে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সুদের হার
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের হাউজ লোনের সুদের হার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, এই ব্যাংকের হাউজ লোনের সুদের হার ৪% থেকে ৬% পর্যন্ত হতে পারে। তবে, সুদের হার ঋণের ধরন, মেয়াদ এবং অন্যান্য শর্তের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সর্বশেষ সুদের হার জানতে ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা শাখায় যোগাযোগ করা উচিত।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোনের মেয়াদ
হাউজ লোনের মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে, লোনের পরিমাণ এবং আবেদনকারীর আয়ের উপর ভিত্তি করে মেয়াদ পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন পরিশোধের নিয়ম
- মাসিক কিস্তি: লোনের টাকা সাধারণত মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।
- ইএমআই (EMI): লোনের পরিমাণ, সুদের হার এবং মেয়াদের উপর ভিত্তি করে ইএমআই নির্ধারণ করা হয়।
- আগামী পরিশোধ: কিছু শর্ত সাপেক্ষে লোনের টাকা আগাম পরিশোধ করা যায়।
আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.probasibank.gov.bd ভিজিট করতে পারেন বা নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।
দ্রষ্টব্য: ঋণের শর্তাবলী এবং সুদের হার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য সরাসরি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
লেখকের শেষ মতামত
এই ছিল আজকের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।
তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন নিয়ে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন। এরপরও যদি বুঝতে অসুবিধা মনে হয় তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।