আপনি কি পার্সোনাল লোন নিতে চান? কিন্তু পার্সোনাল লোন কিভাবে নিতে হয়, পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন না। তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কেননা আজকের এই পোস্টটিতে আমরা পার্সোনাল লোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
জীবন চলার পথে আমরা অনেকেই অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে পার্সোনাল লোন গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু আপনি যদি পার্সোনাল লোন নেওয়ার সঠিক নিয়ম না জানেন তাহলে পড়তে পারেন বিপদে। তাই পার্সোনাল লোন নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই পার্সোনাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী। যা আমরা এই পোস্টটিতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
পার্সোনাল লোন কি
পার্সোনাল লোন হলো এমন একটি ঋণ যা মূলত ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক কোনো আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য নেওয়া হয়। আর বিস্তারিতভাবে যদি বলি তাহলে, পার্সোনাল লোন হলো জরুরি ভিত্তিতে গ্রাহকের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ঋণদাতা বা বিভিন্ন আর্থিক সংস্থাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ পাওয়ার একটি সময়োপযোগী ব্যবস্থা।
যেখানে গ্রাহক তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সকল ধরনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য লোন নিয়ে থাকে। আজকাল বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন অ্যাপস বা ওয়েবসাইট এর কল্যাণে যে কেউ যেকোনো সময় ইনস্ট্যান্ট পার্সোনাল লোন খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারে।
আর এই লোন নেওয়ার নিয়মকানুন অনেক শিথিল হওয়ায় এবং লোন নেওয়ার সময় প্রমাণপত্রাদির চাহিদা কম হওয়ায় বর্তমানে অনলাইনে পার্সোনাল লোন অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদেরকে পার্সোনাল লোন প্রদান করে থাকে। সাধারণত এই ব্যাংকগুলো এই লোন একজন ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিগত আয় এবং অতীতের ঋণ নেওয়ার তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রদান করে থাকে।
এছাড়াও পার্সোনাল লোন গুলোর উপর সাধারণত কোন সুদ প্রযোজ্য হয় না, যার কারণে এটি আরো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে পার্সোনাল লোন নেওয়ার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৬০ বছর এর মধ্যে হতে হয়। আশা করছি আপনারা পার্সোনাল লোন কি তা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
পার্সোনাল লোনের ধরণ
পার্সোনাল লোন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন,
- ম্যারেজ লোন
- ট্রাভেল লোন
- স্যালারি লোন
- হোম রেনোভেশন লোন
- এডুকেশন লোন
- মেডিক্যাল লোন
- টপ-আপ লোন
- কনজিউমার ডিউরেবল লোন ইত্যাদি।
পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে
আমাদের মাঝে অনেকেই অনেক সময় প্রশ্ন করে জানতে চান যে পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে? আসলে পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে এই সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে জানতে হবে পার্সোনাল লোন নিতে হলে কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে পার্সোনাল লোনের আবেদন করার জন্য আপনার বয়স অবশ্যই ২১ বছর থেকে ৬০ বছর এর মধ্যে হতে হবে।
আপনাকে অবশ্যই মেট্রো অথবা নন মেট্রো শহরে বসবাস করতে হবে এবং আপনার বেতন কমপক্ষে ১৫,০০০ টাকা হতে হবে। এই যোগ্যতাগুলো থাকলে আপনি পার্সোনাল লোন এর জন্য যেকোনো ব্যাংকে আবেদন করতে পারবেন। এখন আসি পার্সোনাল লোনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর কথাই।
পার্সোনাল লোন গ্রহণ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এবং তথ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রদান করতে হয়। যেই তথ্যগুলো একজন ব্যক্তি বা লেনদেন কারীর প্রতিষ্ঠানের নীতি বা শর্তাদির উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নেওয়ার জন্য সাধারণত নিম্নে উল্লেখিত ডকুমেন্টসগুলোর প্রয়োজন হয়।
- পার্সোনাল লোন এর জন্য আবেদন করা আবেদনপত্র (যেটি আবেদনকারী তার ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্য, কর্মস্থল এবং আয়ের বিবরণী দিয়ে পূরণ করেছে)। এবং আবেদনকারী স্বাক্ষর রয়েছে।
- সদ্য তোলা আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদনকারীর শেষ তিন মাসের সেলারি বা বেতন স্লিপ।
- আবেদনকারের শেষ ছয় মাসের ব্যাংকের স্টেটমেন্ট।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ঠিকানার প্রমাণ পত্র যেমন (ভোটার আইডি কার্ড, PAN কার্ড, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে)।
- আবেদনকারীর এমপ্লয় আইডি।
- আবেদনকারীর EMI তথ্য রয়েছে এমন ব্যাংকের স্টেটমেন্ট।
- আবেদনকারীর বৈদেশিক মূল্যায়ন (কিছু কিছু ব্যাংক দেখতে পারে) ইত্যাদি।
আপনি উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টসগুলো সংগ্রহ করে তারপর যেকোনো ব্যাংকে পার্সোনাল লোন এর জন্য আবেদন করে, পার্সোনাল লোন সংগ্রহ করতে পারবেন।
পার্সোনাল লোন কিভাবে নেব
জীবন চলার পথে আমাদের অনেকেরই অনেক সময় তাৎক্ষণিক অর্থের প্রয়োজন হয়। যা অনেক সময়ই আমাদের আশেপাশে থাকা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চেয়েও পাওয়া যায় না। আর ঠিক এই সময়ই আমাদেরকে ব্যাংকের শরণাপন্ন হতে হয়। আমাদের তাৎক্ষণিক অর্থের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমরা অনেকেই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকি।
আর বর্তমান সময়ে লোন নেওয়াটা যেন আমাদের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আমরা মধ্যবিত্তরা দরকার হলেই লোনের শরণাপন্ন হয়। অবশ্য অনেক অবস্থায় লোন নেওয়া ছাড়া আর কোন পথও খোলা থাকেনা। কারণ, আপনি যে লোনটি নেবেন সেই অর্থ তো আর আপনাকে বিনা সুদে কেউ ধার দেবে না।
আর যদিও কেউ ধার দেয় তাও আবার অনেক বেশি পরিমাণে সুদের বিনিময়ে দেয়। যাই হোক, যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে লোন নেওয়ার পক্ষে নই। তারপরও জীবনে এমন অনেক সিচুয়েশন আছে যে সময় লোন নেওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে যদি আপনি পার্সোনাল লোন নিতে চান তাহলে অবশ্যই নিচে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করবেন।
তাহলে আশা করা যায় আপনি আপনার লোন নিয়ে পরবর্তীতে কোন ঝামেলায় পড়বেন না। পদ্ধতিগুলো হলোঃ
লোন নেওয়ার কারণ নিশ্চিত করুন
পার্সোনাল লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে এটি নিশ্চিত করুন যে আসলে লোনটি আপনার কেন দরকার। আপনি কি বাড়ি কেনার জন্য লোনটি নেবেন, নাকি গাড়ি, জমি, ফোন ইত্যাদি সব জিনিস কেনার কথা ভাবছেন। যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভাবতে হবে সেটা যেন আপনার কাছে ব্যবসায়িক বৃষ্টিতে ভালো কিছু হয়।
অর্থাৎ আপনি আজকে যে লোনটি নেবেন সেই লোনের অর্থ দিয়ে যে জিনিস গুলো কিনবেন সেই জিনিসগুলো থেকে কি আপনার ভবিষ্যতে লাভ হবে কিনা সেট নিশ্চিত করুন। যদি লাভ হয় তাহলে লোনটি গ্রহণ করুন। আর যদি শুধুমাত্র আপনি বিলাসিতার জন্য লোনটি নিয়ে থাকেন তাহলে, লোন নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ পরবর্তীতে এই লোনের অর্থ আপনাকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন
আপনি কেন লোন নিবেন তা নির্বাচন করা হয়ে গেলে। এ পর্যায়ে আপনি একটি ভাল এবং বিশ্বস্ত লেনদেন কারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে আপনি ব্যক্তিগত বা অনলাইন লেনদেন কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
লোনের পরিমাণ নিশ্চিত করুন
যেহেতু লোন নিলে আপনাকে অবশ্যই সেই লোনের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সেহেতু আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন যত কম টাকা লোন নেওয়া যায়। অর্থাৎ আপনার কাজ যতটুকু টাকাই হবে ঠিক সেই পরিমাণই লোন নিবেন। ব্যাংক বেশি দিচ্ছে বলেই যে বেশি টাকা লোন নিবেন তার কিন্তু কোন মানে নেই। মনে রাখবেন বেশি টাকা লোন মানে আপনাকে বেশি পরিমাণে সুদ প্রদান করতে হবে।
কোন ব্যাংক সুদের হার সবচেয়ে কম দিচ্ছে সেটা খোঁজ করুন
পার্সোনাল লোন নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিবেন। যে কোন ব্যাংক কত পারসেন্ট সুদের হারে লোন প্রদান করছে। এক্ষেত্রে যে ব্যাংক আপনার লোনের উপর সবচেয়ে কম পারছেন হারে সুদ ধার্য করবে আপনি সেই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করবেন। আর এটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আপনি ইন্টারনেট অথবা ব্যাংকে গিয়ে কথা বলতে পারেন।
লোন প্রসেসিং চার্জ
যেকোনো ব্যাংকে লোন নিতে গেলে আপনাকে অবশ্যই লোনের প্রসেসিং চার্জ প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক ব্যাংক 5 থেকে 10% পর্যন্ত চার্জ কেটে নিতে পারে। তাই অবশ্যই লোন নেয়ার পূর্বে প্রসেসিং চার্জ কত তা জেনে নেবেন।
লোন পরিশোধের সময় জেনে নেওয়া
এক্ষেত্রে মনে রাখবেন আপনি যত বেশি দিনের জন্য লোন নেবেন আপনাকে তত বেশি পরিমাণে সুদ প্রদান করতে হবে। তাই সর্বদা চেষ্টা করবেন অল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা যায় এমন লোন নিতে। সাধারণত লোনের মেয়াদকাল বেশি হলে মাসিক কিস্তি বা ইএমআই আপনাকে কম দিতে হবে কিন্তু পুরো হিসাব করলে শুধু আসল আপনাকে বেশি দিতে হবে। আর লোনের মেয়াদকাল কম হলে মাসিক কিস্তি বা ইএমআই বেশি হলেও সর্বমোট হিসাব করলে শুধু আসল কম দিতে হবে।
লোন এর অর্থ আগে পরিশোধ করলে কত টাকা আপনাকে খেসারত দিতে হবে সিটি জেনে নেবেন
আমরা সাধারণত দরকারি লোন নিয়ে থাকি। কিন্তু লোন নেওয়ার পরে হঠাৎ করে যদি আমার কাছে টাকা এসে যায়, তাহলে আমি যদি লোনের অর্থ পরিশোধ করতে চাই, তখন আমাকে পেনাল্টি চার্জ কত দিতে হবে তা পরিষ্কারভাবে জেনে নেবেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় এগ্রিমেন্ট পেপারে সব দেওয়া থাকলেও ব্যাংক তাদের নিজেদের ইচ্ছামত কেটে নেই। তাই এটি অবশ্যই মিলিয়ে নেবেন।
দালালের চক্করে না পড়া
পার্সোনাল লোন নিতে সরাসরি ব্যাংকের সাথে কথা বলুন। ভুলেও দালালের চক্করে পড়বেন না। কারণ দালাল আপনাকে তাড়াতাড়ি লোন দেওয়ার নাম করে ঘোরাবে। আর একটা ভালো পরিমাণে টাকা কমিশন নেবে। তাই সর্বদা নিজেই যাবেন এবং সরাসরি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন।
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আপনারা পার্সোনাল লোন কিভাবে নেবেন এই বিষয়টি সম্পর্কে ক্লিয়ার হতে পেরেছেন। তবে আমাদের পরামর্শ হলো সর্বদা লোন থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন, যদি খুবই জরুরী পরিস্থিতি হয় তাহলে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে লোন গ্রহণ করতে পারেন। আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
লেখকের শেষ মতামত
এই ছিল আজকের পার্সোনাল লোন কিভাবে নেব সেই সম্পর্কিত সকল তথ্য। এখানে সংক্ষেপে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি।
তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে পার্সোনাল লোন বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এরপরও বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও পার্সোনাল লোন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবে। ধন্যবাদ।