গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না

গর্ভধারণের পর থেকে নিজের এবং গর্ভের সন্তানের যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে খাবার দাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার রাখা উচিত নয়। কেননা এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সে জন্য গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা থেকে সেই সব খাবার বাদ দিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের যদি পুষ্টিকর খাবার বা নিয়মিত খাবার না খায় তাহলে বাচ্চা ও মায়ের  সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভকালীন সময় মায়ের সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা কি কি খাবার খেতে পারবে এবং কি কি খাবার খেতে পারবে না তার উপর খেয়াল রাখা খুবই জরুরী। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

পৃথিবী একজন নারীর জীবন পরিপূর্ণ হয়ে থাকে মা হওয়ার মধ্যে দিয়ে। আবার একজন নারীর সবচেয়ে বড় সার্থকতার মধ্যে মা হওয়ার সার্থকতা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু একজন নারীর মা হওয়ার গল্পটা মোটে সহজসাদ্য কোনো গল্প নয়। এর জন্য অনেক বাঁধার সম্মূখীন হতে হয় প্রতি নিয়ত।

আর এসব বাঁধা বিপত্তি মোকাবেলা করার ফরেই একজন নারী মা হয়ে থাকেন। কিন্তু একজন নারী যখন প্রথম গর্ভধারণ করে থাকেন, তখন গর্ভধারণ জার্নি সম্পর্কে অনেক তথ্যই অজানা থাকে। যার ফলে ছোট খাটো কিছু ভুলে জন্য ঘটতে পারে অনেক বড় দূর্ঘটনা।

বিশেষ করে গর্ভধারনের প্রথম তিন মাস খুবই স্পর্শকাতর। কেননা এই সময় ছোট খাটো ভুলের জন্য যেকোনো সময় ঘটতে পারে গর্ভপাতের মতো দূর্ঘটনা। সুতরাং গর্ভধারণ এর পর থেকে বাচ্চা হওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন প্রতিটি সময় সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু খাবার রয়েছে সেগুলো খাওয়া মাত্রই ঘটতে পারে যেকোনো ধরনের বড় বিপত্তি। সুতরাং আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন যে, গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এবং সেই সাথে আরও জানতে গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া যাবে না সেসব সব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু ফল খেলেই ঘটতে পারে মারাক্ত দূর্ঘটনা। সেই ফল গুলো হল-

আনারস: আনারস খুবই উপকারি একটি ফল। কেননা এতে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যামাইনো এসিড সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। কিন্তু এতো উপকারি ফল হওয়া সত্ত্বেও গর্ভাবস্থায় এই আনারস খেলে ঘটতে পারে গর্ভপাতের মতো দূর্ঘটনা। কেননা আনারসে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান জরায়ুকে নরম করে দিয়ে থাকে।

যার ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যার জন্য চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে নিষেধ করে থাকেন। সুতরাং আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন, তাহলে আনারস খাওয়া উচিৎ নয়। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না আনারস সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

পেঁপে: পেঁপে খুবই উপকারি একটি ফল হওয়া সত্ত্বেও গর্ভকালীন অবস্থায় পেঁপে এড়িয়ে চলা উচিৎ। কেননা পেঁপে লাটেক্স নামক এক ধরনের পদার্থ থাকে। যার ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় পেঁপে খেলে ভ্রণের বিকাশেও বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে। এই গর্ভাবস্থায় পেঁপে এড়িয়ে চলা উচিৎ।

কামারাঙ্গা: গর্ভাবস্থা ভুলেও কামারাঙ্গা খাওয়া যাবেনা। কেননা এই কামারাঙ্গা খাওয়ার ফলে ঘটতে পারে গর্ভপাতের মতো দূর্ঘটনা। সুতরাং গর্ভাবস্থায় কামারাঙ্গা খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।

তেঁতুল: নারীদের টক জাতীয় ফল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পছন্দের ফল হল তেঁতুল। এই তেঁতুল দেখলে জীভে পানি আসেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু গর্ভাবস্থায় অধিক পরিমান তেঁতুল খেলে ঘটতে পারে যেকোনো ধরনের বড় দূর্ঘটনা। কেননা তেঁতুলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

এর মধ্যে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদানের জন্য তেঁতুল খেলে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনকে দমন করে থাকে। আর এই প্রোজেস্টেরনের মাত্রা তুলনামূলক কমে গেলে তা আপনার সন্তানের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে এবং সেই সাথে গর্ভপাতেরও প্রবল সম্ভাবনা দেখা দেয়।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

সুতরাং আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই গর্ভকালীন সময়ে তেঁতল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না তার মধ্যে তেঁতল অন্যতম একটি ফল।

খেজুর: খেজুর আমাদের সবার পছন্দের একটি ফল। কেননা এতে প্রচুর পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আর খেঁজুরে বিদ্যমান ভিটামিন, প্রটিন খুবই উঁচু মানের এবং এতে প্রচুর পরিমান আয়রন রয়েছে। তাই খেঁজুর খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। 

আর এর ফলে জরায়ু মুখের সংকোচন বৃদ্ধি পায়।যা ভ্রুণের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর হয়ে থাকে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া থেকে বিরিত থাকা উচিৎ।

আঙ্গুর: আঙ্গুর পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ একটি ফল হলে গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ। কেননা আঙ্গুরে বিদ্যমান রেসভেরাট্রল নামক যৌগ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে থাকে, সেই সাথে এটিতে রয়েছে তাপ উৎপাদন কারী উপাদানা। যা একজন গর্ভবতী মা এবং বাচ্চার জন্য খুবই ক্ষতিকর।

হিমায়িত ফল: গর্ভাবস্থায় কোনো ভাবে কোনো রকম হিমায়িত ফল খাওয়া উচিৎ নয়। কেননা হিমায়িত ফল শিশুর জন্য বিষাক্ত হতে পারে। সুতরাং আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সবসময় তাজা ও মৌসুমী ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে মা ও শিশু দুই জনেই সুস্থ্য থাকবেন।

ক্যানড টমেটো: ক্যানড টমেটো বা কোনো প্রকার প্রক্রিয়াজাত ফল বা ফলের জুস গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিৎ নয়। এমন কি ফরমানিল যুক্ত যে কোনো ধরনের ফল খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। তা না হলে ঘটতে পারে বিপত্তি।

গাজর: গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস গাজর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে গর্ভাবস্থায় অনেক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে , গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

গর্ভবতী মায়েদের কোন ধরনের কাঁচা শাকসবজি না খাওয়াই উত্তম। এর কারণ হলো কাঁচা শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের পরজীবী ও ময়লা থাকতে পারে। আর এগুলো খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী নারীর ও গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। কোন কোন সবজি খাওয়া যাবেনা তার নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

করলা: গর্ভবতী নারীদেরকে করোলা এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ সেপনিক,মারোডিসিন,গ্লাইকোলাইসিস নামক ক্ষতিকর পদার্থ থাকে করলাতে যা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করে।

কাঁচা ও পাকা পেঁপে: গর্ভবতী নারীদের পেঁপে খাওয়া মোটেও উচিত হবে না। কারণ লাটেক্স নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে পেঁপেতে যা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করে থাকে।

আনারস: অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল হল আনারস। কিন্তু এই ফলটি গর্ভস্থ নারীর খাওয়া যাবে না। কারণ এই ফলে ব্রোমালিন নামক এক উপাদান রয়েছে যা গর্ভের শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অ্যালোভেরা: পেট পরিষ্কার রাখার জন্য ও সৌন্দর্য বা রূপচর্চার জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার অনেক জনপ্রিয়। এবং এই অ্যালোভেরাটি মহিলারা আরো বিভিন্ন উপকারের জন্য ব্যবহার বা খেয়ে থাকেন। কিন্তু গর্ভবতী মেয়েরা অ্যালোভেরা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় এটি খেলে গর্ভপাত ধরতে পারে।

সজনে: সজনে অনেক জনপ্রিয় একটি সবজি এবং এর পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক। কিন্তু এই সজনে গর্ভবতী নারীদের খাওয়া ঠিক হবে না, কারণ সজনেতে আলফা সিটেস্টেরল না আমার এক ধরনের উপাদান থাকে যা গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত ঘটাতে পারে।

আধা সিদ্ধ বা হাফ বয়েল ডিম: গর্ভকালীন সময়ে কখনোই হাফ বয়েল,অল্প সিদ্ধকৃত বা আদা সিদ্ধ ডিম খাওয়া ঠিক না। কারণ এতে সালমোনেলার দূষণের ঝুঁকি থাকে। যা বমিও ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।

দোকানের কেনা সালাদ: দোকান থেকে কখনই গর্ভবতী নারীদের সবজির সালাত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া অথবা জীবাণু জন্ম জন্মাতে পারে। যা গর্বের শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতকর।

না ধোয়া সবজিওফল: না ধোয়া সবজি ও ফল খাওয়া যাবেনা গর্ভবতী নারীর। কারণ না ধোয়ার সবজি ও ফলের খোর সাথে শুধু হার্বিসাইডই ও ক্ষতিকর কীটনাশক থাকতে পারে না, সেগুলোতে লিস্টিরিয়া ও টক্সেপ্লাজমার মত মারাত্মক প্যাথোজেনদের ও আবাসস্থল হয়।

লেবু,স্প্রাউট ও বাঁধাকপির মত কাঁচা শাকসবজি না ধুয়ে খাওয়া, বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের এগুলো সম্পন্ন পরিহার করতে হবে। পাতাওয়ালা সবজিগুলোকে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রান্না করে খেতে হবে। এবং দীর্ঘদিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করা ফলমূল থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি - গর্ভাবস্থায় লেবু খেলে কি হয়

এতক্ষণ আমরা উপরের উল্লেখিত খাবার গুলো সম্পর্কে জানলাম যা গর্ভবতী নারীদের খাওয়া উচিত না। 

গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি

গর্ভধারনের প্রথম তিন মাস খুবই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে খাওয়ার ব্যাপারে। কেননা অনেক ধরনের খাবার রয়েছে, যার ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভপাত ও হয়ে যায়। তাহলে চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি না এ সম্পর্কে-

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই লেবু খাওয়া যাবে। তবে পরিমানের অধিক লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় সব ধরনের খাওয়া উচিৎ নয়। কেননা খাবারের মাধ্যমে অনেক সময় গর্ভপাত হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ। যা ইতিমধ্যে অনেক গুলো খাবার সম্পর্কে জেনে গেছেন যেগুলো খাওয়া যাবে না সেগুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি না এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

শসা খুবই উপকারি ও জনপ্রিয় একটি খাবার। শসা গর্ভাবস্থায় অবশ্যই খাওয়া যাবে কিন্তু তা পরিমান মতো খেতে হবে। তাহলে কোনো অসুবিধা হবেনা।

গর্ভাবস্থায় টক খাওয়া যাবে কি

গর্ভধারণ করার বিষয়টির সাথে টক জাতীয় খাবার যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন তার মাঝে টক জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রতি আলাদা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় খাবার যেমন- আমড়া, জলপাই, তেঁতুল, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি খাবার গুলো খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবানুর থেকে শরীরকে সুস্থ সবল রাখার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর উল্লেখিত খাবার/ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় সবাই ভাবতে থাকেন যে গর্ভাবস্থায় টক খাওয়া যাবে কি না। প্রিয় পাঠক, আপনি নিয়মিতভাবে এসব ফলগুলো খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় সুস্থা সবল থাকতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

সকল গর্ভবতী মায়ের একই প্রত্যাশা যে তিনি যেন সুন্দর, ফর্সা এবং সুস্থ একটি সন্তান জন্ম দিতে পারেন। এই জন্য গর্ভবতী মায়েরা প্রচলিত সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলেন। তারা গর্ভবতী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সাদা খাবার খান, এই ভেবে যে তাদের গর্ভের সন্তান ফর্সা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার নির্বাচনের উপর সন্তানের রং কেমন হবে তা নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে বাবা মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জিনের উপর। তবে প্রচলিত কিছু ধারণা রয়েছে, গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাবেন তার উপরে সন্তানের গায়ের রং নির্ভর করে। আপনার যদি বিশ্বাস থাকে পুরানো কথার উপরে তাহলে খাদ্য তালিকায় এসব সাদা খাবার যোগ করতে পারেন। 

যদিও এসব খাবার খেলে সন্তান ফর্সা হবে এটা কোনো চিকিৎসকই নিশ্চিয়তা দিতে পারছেন না। তবে আপনারা চাইলে নিচের খাবারগুলো খেতে পারেন।

কমলালেবু: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হলো কমলালেবু। যা শিশুর শরীর গঠনের জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় শিশুর ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই গর্ভবতী নারীর বেশি বেশি কমলা লেবু খাওয়া প্রয়োজন।

নারিকেল: নারিকেলের ভেতরের সাদা শাঁস গর্ভের শিশুর বর্ন ও রং ফর্সা করে। গর্ভাবস্থায় মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয় অতিরিক্ত নারিকেল খাওয়া। কিন্তু পরিমিত খেতে পারেন।

দুধ: দুধে থাকা পুষ্টি উপাদান যা হাড় ও দাঁত গঠনের সহায়তা করে ও ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য খুব প্রয়োজনীয়, প্রচলিত ধারণা দুধ ত্বকের রং ফর্সা করতে সহায়ক।

জাফরান দুধ: জাফরান দেয়া দুধ যেটা গর্ভবতী অবস্থায় অনেক মহিলা পান করে থাকেন। দুধে থাকা জাফরান গর্ভের শিশুর গায়ের রং ফর্সা করে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। গর্ব অবস্থায় রক্তচাপ ও মোর সুইং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে জাফরান,একটু গবেষণা করে দেখে গেছে।

এই সময় অতিরিক্ত জাফরান খাওয়া ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। যার কারনে জরায়ু সংকোচন হতে পারে প্রি-চার্ম বা গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা প্রথম ট্রাইমেস্টারে জাফরান না খাওয়ার পরামর্শ দেন।

এগুলো ছাড়াও আরো কিছু খাবার রয়েছে যেমনঃ

  • ডিম
  • টমেটো
  • চেরিও বেরি জাতীয় ফল ইত্যিদি

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

সন্তান যেন বুদ্ধিমান ও মেধাবী হয়- এ প্রত্যাশা সব বাবা-মায়েরই থাকে। এ কারণেই গর্ভবতী নারী শিশুর কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চলেন। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার জন্ম নেওয়া শিশু পরর্তিতে নানা সমস্যায় ভুগতে পারে।

আরো পড়ুনঃ-  ২৫ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে করণীয়

যেহেতু বুদ্ধিমান ও মেধাবী সন্তান চান বাবা-মায়েরা, কাজেই তার মস্তিষ্ক গঠনের ওপর জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। জন্মের প্রথম দুই বছর সন্তানের জন্য দরকার মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ। এর জন্য গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খেতে হবে তা জেনে নিন।

মাছ: স্যামন, টুনা, ম্যাকারেল ইত্যাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড সমৃদ্ধ। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে দুবারের বেশি মাছ খায় তাদের সন্তানের বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ বেশি হয়।

ডিম: ডিম অ্যামিনো এসিড কোলিন সমৃদ্ধ। যাতে মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয় ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী নারীদের দিনে অন্তত দুটো করে ডিম খাওয়া উচিত যার থেকে কোলিন মেলে। ডিমে থাকা প্রোটিন ও আয়রন জন্মের সময় ওজন বাড়িয়ে দেয়।

দই: সন্তানের স্নায়ুকোষ গঠনের জন্য আপনার শরীর প্রচুর পরিশ্রম করে। এ জন্য আপনার বাড়তি কিছু প্রোটিন লাগবে। আপনাকে প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। যেমন : দই। দইয়ে ক্যালসিয়াম আছে যা গর্ভাবস্থায় প্রয়োজন হয়।

আয়রন: আয়রন সন্তানকে বুদ্ধিমান হতে সাহায্য। এই খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় অবশ্যই খাওয়া উচিত। আয়রন গর্ভের শিশুর কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এ ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে আপনার আয়রনের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত।

ব্লুবেরি: ব্লুবেরির মত ফল, ডাঁটা, টমেটো ও লাল বিন জাতীয় সবজিতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই গর্ভাবস্থায় এই ফলগুলো আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের টিস্যুকে রক্ষা করে ও বিকাশে সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি: শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েদের ভিটামিনের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম থাকে তাদের বাচ্চার মস্তিষ্ক দুর্বল হয়। ডিম, পনির, মাংস, লিভার ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভিটামিন ডি এর ভাণ্ডার সূর্যের আলো তো আছেই।

আয়োডিন: আয়োডিনের অভাব, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে সন্তানের আইকিউ কম করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ খান। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দই ইত্যাদি খেতে পারেন।

সবুজ শাক-সবজী: পালং শাকের মতো পাতাবহুল শাক, ডাল ইত্যাদি ফলিক এসিড সরবরাহ করে। এ ছাড়াও ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন বি-১২- এর সঙ্গে খাওয়া উচিত।

গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার খাওয়া যাবে না

গর্ভবতী মায়ের চিনিযুক্ত ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া একদম ঠিক নয়। এই জাতীয় খাবার গুলোতে স্যাচুরেটেড বা ক্ষতিকর ফ্যাট বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য ভালো না।

গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি বা জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমন কিছু খাবারের নাম নিচে তুলে ধরা হলো-

  • ক্রিম
  • চিপস
  • চকলেট
  • ঘি-ডালডা
  • কেক পেস্ট্রি
  • মাখন
  • মিষ্টি
  • পুডিং
  • ভাজাপোড়া
  • বিস্কুট
  • আইসক্রিম
  • কোমল পানীয়

এছাড়াও এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত। কেননা এই খাবার গুলো আপনার গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। যেমন-

  • ছাগল, গরু ও ভেড়ার কাঁচা দুধ।
  • অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় পানীয়।
  • কাঁচা বা ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া মাংস, মাছ ও ডিম।
  • কোনো প্রানীর যকৃত (লিভার)।
  • কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরি করা খাবার।
  • ভেষজ ঔষধ বা হারবাল।
  • অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে তৈরি করা খাবার (যেমন: সুশি)।
  • আপনার শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার।
  • ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় (যেমন: চা, এনার্জি ড্রিংক, কফি ও ক্যাফেইন যুক্ত কোমল পানীয়)।
  • প্রক্রিয়াজাত বা ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়া ফ্রোজেন মাংস (যেমন: সালামি, সসেজ ও পেপারনি)।

লেখকের শেষ মতামত

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। সেই সাথে আরও জেনেছেন যে গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সুতরাং আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন, তাহলে উপরে বর্ণিত খাবার গুলো এড়িয়ে চলুন।

সেই সাথে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং কোনো ধরনের সমস্যা বুঝতে পারলে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় অবশ্যই প্রথম তিন মাস খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

তো বন্ধু আশা করছি আপনি আমার এই পোস্টটি পড়ে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না খুব সহজেই জানতে পেরেছেন। এরপরও যদি বুঝতে কোথাও অসুবিধা মনে হয় তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে তারাও গর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।

Leave a Comment