ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার – ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গ

মশাবাহিত একটি সংক্রামনের নাম হলো ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়ার সংক্রামন মানবদেহে ঘটে থাকলে বেশ কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয় যা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো আমাদের আজকের এ আর্টিকেলে।

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ম্যালেরিয়া রোগের সমস্যা প্রায় অনেকের হতে দেখা যায়। তাই এ রোগের লক্ষণ, উপসর্গ এবং প্রতিকারগুলো আমাদের জেনে রাখা উচিত। ম্যালেরিয়া রোগ সঠিক সময়ে শনাক্ত করার জন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গগুলো আপনাদের জানাতে চাই। তাই চলুন বিস্তারিত শুরু করা যাক।

ম্যালেরিয়া রোগের কারণ

ম্যালেরিয়া সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়া রোগ শরীরের মধ্যে থেকে গেলে দেখা দিতে পারে মারত্মক সমস্যা। বাংলাদেশ ম্যালিরিয়াপ্রবন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শহরগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ম্যালেরিয়া রোগির সংখ্যা। বিশ^ সংস্থায় উঠে এসেছে, প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় প্রায় ২০ কোটির বেশি মানুষ এবং বাংলাদেশে এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২ কোটি মানুষ।
ম্যালেরিয়া রোগটি হওয়ার নির্ধারিত কোনো বয়স নেয়। প্রায় সব বয়সের মানুষের এ রোগটি হতে দেখা গেছে। তবে গবেষনায় প্রমাণিত শিশু ও বৃদ্ধরা এ রোগের ঝুঁকিতে বেশি রয়েছে। এ রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আসলে কি। কি কারণে হয়ে থাকে ম্যালেরিয়া রোগ। তো জেনে নিন ম্যালেরিয়া রোগের কারণ সম্পর্কে।

মশার কামড় দ্বারা মানবদেহে ম্যালেরিয়া রোগের সক্রামন ঘটে থাকে। এ রোগ সৃষ্ট হয় প্লাজমোডিয়াম গনের পরজীবীর মাধ্যমে। গবেষণায় দেখা গেছে স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রামন হয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত সর্বোমোট ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার করা হয়েছে ৬০ এরও বেশি। তবে তার মধ্যে মোট ৪ টি প্রজাতি মানবদেহের ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। ফ্যালসিপ্যারাম, প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ওভাল ও ম্যালেরি এগুলোর মধ্যে জীবানু বহনকারী একটি মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হতে দেখা গেছে। এ ৪ প্রজাতির মধ্যে সবথেকে মারাত্মক হলো ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়া।

আরো পড়ুনঃ-  শরীরের রক্ত বৃদ্ধির উপায় - কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ম্যালেরিয়া হলো প্রানঘাতী একটি রোগ। এ রোগ থেকে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি। তাই জেনে নিতে হবে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। ম্যালেরিয়া রোগির বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যা রোগি আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে তা প্রকাশ পায়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণসমূহ:

  • নিয়মিত জ্বর আসা ম্যালেরিয়া রোগের অন্যতম ও প্রাথমিক লক্ষণ। এ জ্বরের ধরন হবে- সময়ে জ্বর আসবে আবার চলে যাবে। জ্বর এসে ৩ বা ৪ দিন মতো থাকবে এবং শরীর ঘেমে গিয়ে জ্বর কমে যাবে। এর সাথে মাথা ব্যাথা ও সর্দি হয়ে থাকে।
  • খাবারের প্রতি অনীহা এবং তার সাথে দেখা দিবে বমি বমি ভাব, হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া, ক্লান্তি-অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়া এবং খিঁচুনি।
  • শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ।

ম্যালেরিয়া রোগ থেকে প্রতিকারের উপায়:

ম্যালেরিয়া রোগ প্রাথামিক অবস্থায় ধরা পড়লে এ থেকে প্রতিকার পাওয়া অনেক সুবিধা হয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথমে নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কি না। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলাফেরা করুন। তবে এর সাথে প্রতিরোধগুলোও আপনাকে মেনে চলতে হবে। জেনে নিন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো-

  • রাতে অথবা দিনে ঘুমানোর আগে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করুন।
  • আপনার বাড়ির আশেপাশে কোথাও অপরিষ্কার পানি জমে আছে কিনা কিংবা জলাবদ্ধ বা জলাধার গুলো অপরিষ্কার রয়েছে কি না নিশ্চিত করুন। এরপর সেগুলো পরিষ্কার করুন, এতে মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না।
  • মশা জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই এসব স্থানে কেরোসিন বা কীটনাশক ছিটিয়ে দিন।
  • বাড়ির চারপাশে ঝোপঝাড় থাকলে সেগুলো পরিষ্কার রাখুন।
  • যেসব স্থানে মশার চলচল বেশি সেসব জায়গায় গেলে,শরীরে যেসব স্থানে কাপড় থাকেনা যেমন-হাত ও পা, এসব জায়গায় মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহারন করবেন।
  • শিশু, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীরা ম্যালেরিয়া রোগের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা গ্রহন ও বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ-  দাঁত ফাঁকা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার বিস্তারিত জানুন

ম্যালেরিয়া রোগের কোনো প্রতিরোধক টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি। তাই আমাদের সবার উচিত অনান্য যেসব প্রতিরোধক ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো গুরুত্বসহকারে পালন করা। সতর্ক ও সাবধানতায় চলাফেরা করলে এ রোগ প্রতিরাধ করা সম্ভব।

ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গ

ম্যালেরিয়া রোগের সক্রামন খুবই সহজভাবে মানবশরীরে হয়ে থাকে। এ রোগ থেকে সঠিক সময়ে শনাক্ত করতে পারলে তা থেকে খুব সহজেই নিরাময় পাওয়া যায়। ম্যালেরিয়া রোগির মৃত্যুর সবথেকে বড় কারণ হলো এ রোগ সময়মতো শনাক্ত হয় না। ফলে এ রোগ ভয়াভহ আকার নেয় এবং রোগির মৃত্যু হয়। তাই এ রোগ নিরাময়ে জন সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর সেক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গগুলো কি। জেনে নিন ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গ সম্পর্কে।

  • শরীরে শীত শীত অনুভূত হওয়া এবং তার সাথে কাঁপুনি।
  • অতিরিক্ত জ্বর ও মাথাব্যাথা।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • রক্তস্বল্পতার অভ্যাস।
  • চোখ লাল হওয়া বা জ্বালার সৃষ্টি হওয়া।
  • কম বয়সি বাচ্চাদের ডায়ারিয়া হওয়া ইত্যাদি।

উপরিক্ত লক্ষণগুলো দেখার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে মনে রাখবেন এ উপসর্গগুলো দেখা মানেই আপনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত তা কিন্তু নয়। শরীরের উপসর্গগুলো অনেক সময় একই হলেুও রোগ কিন্তু ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে প্রথমে নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কি না।

ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুর নাম কি

ম্যাালেরিয়া একটি প্রচলিত মারাত্মক ব্যাধি। পরজীবী রোগ হলো ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া রোগের একটি প্রধান জীবানু রয়েছে যার মাধ্যমে মানবদেহে ম্যালেরিয়ার সংক্রামন হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়া রোগের জীবানুর নাম হলো প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স। এটি প্রথম জানতে সক্ষম হয়েছেন ফরাসী চিকিৎসাবিজ্ঞানী লাভেরান। তিনি ১৮০৮ খ্রীষ্টাব্দে জানতে পেরেছিলেন প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স নামের জীবানু ম্যালেরিয়া রোগের জন্য দায়ী এবং এটি মানবদেহে ছড়ায় স্ত্রী মশা দ্বারা যার নাম অ্যানোফিলিস।

আরো পড়ুনঃ-  দ্রুত হাইপ্রেসার কমানোর উপায় জানুন

ম্যালেরিয়া কি ভাইরাস ঘটিত রোগ

ভাইরাস হলো একটি অতি সূক্ষ সংক্রামক। এটি এমন একটি পরজীবী যা কোনো ধরনের জীবিত কোষ ছাড়ায় বংশ বংশবিস্তার করতে পারে। অন্যদিকে ম্যালেরিয়া রোগটিও একটি পরজীবীর মাধ্যমে ঘটে থাকে। তবে প্রশ্ন হলো ম্যালেরিয়া কি ভাইরাস ঘটিত রোগ?

এর উত্তরে বলতে চাই, ম্যালেরিয়া কোনো ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ায় ঘটিত রোগ নয়। এটি একটি প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বার সৃষ্ট রোগ। এ রোগটি মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়ে থাকে স্ত্রী মশা অ্যানোফিলিস এর কামড়ে।

ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধের নাম কি

ম্যালেরিয়া প্রচলিত একটি সংক্রামনের নাম। এ রোগের সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আমাদের অনেকেই ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধ সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নিন ম্যালেরিয়া রোগের ঔষধ সম্পর্কে।

ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা সংক্রামনের ধরন, রোগিন বয়স এবং শারিরিক অবস্থা বিবেচনা করে দেওয়া হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়া রোগের অধিকাংশই আর্টিমিসিনিন-ভিত্তিক কম্বিনেশন থেরাপি এবং ঔষধ দেওয়া হয়। এসিটি’ এ চিকিৎসা পদ্ধতিটি ম্যালেরিয়া রোগির জন্য খুবই কার্যকারী। এটি ম্যালেরিয়া ধ্বংস করতে তাড়াতাড়ি সাহায্য করে থাকে।

ম্যালেরিয়া রোগের জন্য ডক্সিসাইক্লিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক অনেকের ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান এনে দেয়। এছারাও রয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, ক্লোরোকুইন,মেফ্লোকুইন, এটোভাকোন + প্রোগুয়ানিল ইত্যাদি ঔষধগুলো ম্যালেরিয়ায় চিকিৎসায় অনেকটা নিরাপদ এবং কার্যকারী।

তবে মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ম্যালেরিয়া রোগের কোনো ধরনে ঔষধ সেবন করবেন না। কারণ রোগির শরীরের কোথায় ম্যালেরিয়া রোগ সংক্রমিত হয়েছে তা শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকরায় বলতে পারবেন। এছারাও ব্যক্তিভেদে ঔষধের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই, ম্যালেরিয়া একটি প্রানঘাতী রোগ। সঠিক জ্ঞান ও সতর্কতায় না থাকার কারনে এ রোগের রোগির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই আমাদের সতর্ক ও সাবধানতার সাথে এ রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। সঠিক প্রতিরোধ এ রোগ থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।

Leave a Comment