আপনি কি ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি? ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে তা জানতে চাচ্ছেন? আমরা যতো বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছি ঠিক ততো বেশি পরিমানে প্রয়োজন বাড়ছে অনলাইন সিকিউরিটির। ব্লকচেইন কে ওয়েব ৩.০ এর আওতায় রাখা হয়েছে। বর্তমান সময় আমরা যে সকল সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলো হচ্ছে মূলত ওয়েব ২.০ এর আওতায় পরে।
ওয়েব ৩.০ কি এটা আমরা অন্য কোনো আর্টিকেলে বিস্তারিত আপনাদের জানাবো। আজকে আমরা শুধু ওয়েব ৩.০ এর একটা প্রযুক্তি ব্লক চেইন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো। আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা ব্লক চেইন কিভাবে কাজ করে এবং এর কি কি সুবিধা রয়েছে তা জানেন না। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি
বলা হয় যে আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে ইন্টারনেট দুনিয়ায় রাজ করবে ব্লক চেইন প্রযুক্তি। ব্লক চেইন প্রযুক্তি ইন্টারনেট কে আরো বেশি সেফ পর্যায় নিয়ে যাবে। তবে চলুন ব্লক চেইন প্রযুক্তি মূলত কি সেই বিষয়ে ক্লিয়ার ধারনা নেওয়া যাক।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে ব্লক চেইন প্রযুক্তি হচ্ছে মূলত একধরণের ডিস্ট্রিবিউট লেজার প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তকে সুরক্ষিত রাখা হয়।। এটা সব গুলো স্টোরে একই সাথে স্থানান্তর করা হয়। আর যদি কেউ পূর্বের ডেটা এডিট করতে চায় তাহলে সব গুলো ডেটা ইনভ্যালিড হয়ে যাবে।
কিছুটা কঠিন লাগছে তাইতো? আরো সহজ ভাবে যদি বুঝাই তাহলে উদাহরণ এর মাধ্যমে বোঝাতে হবে – মনে করুন, বর্তমানে তথ্য আদান প্রদান এর জন্য সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেসবুক। এখন, ফেসবুক কিন্তু আমাদের অজান্তে আমাদের ব্যাক্তিগত ডেটা চুরি করে বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছে বিক্রি করে। যার ফলে আমরা যে সব বিষয় গুলো সম্পর্কে সার্চ করি বা অন্যের সাথে কথা বলি। সেগুলোর বিজ্ঞাপন আমাদের সামনে চলে আসে।
এখন, ডেটা কে সাধারণত দুটি উপায় সংরক্ষণ করা হয়।
- সেন্ট্রাল ডেটা স্টোর
- ডিসেন্ট্রাল ডেটা স্টোর
আপনি যখন মেসেঞ্জারে কোন বন্ধুর সাথে কথা বলেন তখন এই ডেটা গুলো সেন্ট্রাল ডাটাবেজে স্টোর হয়। যদি ফেসবুকের মালিক চায় তো সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ থেকে আমরা কি নিয়ে কথোপকথন করেছি সেটা সে জানতে পারবে। আবার এই ডেটা কে আবার যে কেউ চাইলে হ্যাক বা হাতিয়ে নিতে পারবে বা এডিট করতে পারবে।
সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ গুলো একদম এই সেইফ না কারণ এখানে ৩য় ব্যাক্তি আপনার ডেটা কে সহজেই দেখতে পারে। আর আপনি চাইলেও এটাকে লুকাতে পারবেন না। তাই এগুলোকে ওয়েব ২.০ এর আওতায় ধরা হয়।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আপানি যখন কাউকে “Hello” লিখবেন তখন এই তথ্যটি আপনার বন্ধুর কাছে এবং আপনার কাছেই স্টোর করা থাকবে। মোট কথা এই তথ্যটি আপনি আর আপনার বন্ধু ব্যতিত অন্য কেউ দেখতে পারবে না। আর যদি কেউ হ্যাক করে দেখতে চায় সেটাও সম্ভব না যদি এখানে ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
মূলত ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় ডিসেন্ট্রাল ডাটা স্টোর করার ক্ষেত্রে। ব্লক চাইন মূলত ডেটা গুলো কে লেজার এর মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করে দেয়। অর্থ্যাৎ সবার ডিভাইসে নির্ধারিত ডেটা গুলো সেফ করে রাখে। আর প্রতিটি নতুন নতুন ডেটার জন্য একটা করে ব্লক তৈরি করে। প্রতিটি ব্লক এর সাথে প্রতিটি ব্লক চেইন দিয়ে কানেক্টেড থাকে।
ব্লক চেইন প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে
বর্তমানে সময়ে বড় বড় নামি দামি কোম্পানি গুলো ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সকল ধরণের লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে। বিশ্বের মদ্যে সব বড় ব্যবসায়িদের ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এর সিকিউর একটা নেটওয়ার্ক আসলে কাজ কিভাবে করে। ব্লক চেইন প্রযুক্তি মূলত ০৩ টি প্রযুক্তির সমন্বয়ে কাজ করে থাকে –
- ক্রিপ্টোগ্রাফিক্স কি
- পেয়ার টু পেয়ার নেটওয়ার্ক
- রেকর্ড অফ দ্যা নেটওয়ার্ক
১। ক্রিপ্টোগ্রাফিক্স কি
এটা মূলত দুটি চাবি নিয়ে গঠিত একটা হচ্ছে প্রাইভেট আর অন্যটি পাবলিক। এই প্রযুক্তির মূল কাজই হচ্ছে চদুইজন এর মধ্যে সফল ভাবে লেনদেন সম্পন্ন করা। আর এই পদ্ধতিতে দুজনের কাছে দুটি করে চাবি থাকবে। যেটা দিয়ে তারা তাদের লেনদেন এর প্রমান দেখাতে পারবে। আর এটাকে বলা হয় ডিজিটাল সিগনেচার যা শুধু মাত্র বিশ্বের মধ্যে ব্লকচেইন প্রযুক্তি দিতে পারে। আর এই ডিজিটাল সিগনেচার লেনদেন এর সকল তথ্য বহন করে থাকে।
২। পেয়ার টু পেয়ার নেটওয়ার্ক
পেয়ার টু পেয়ার নেটওয়ার্ক হচ্ছে মূলত ডিজিটাল সিগনেচার কে দুটি নেটওয়ার্ক কে একত্রে যুক্ত করে দেয়।
৩। রেকর্ড অফ দ্যা নেটওয়ার্ক
লেনদেন এর হিসাব গুলো দুটো নেটওয়ার্ক এর সাথে ব্লক করে লকড হয়ে যায়। যার ফলে যার ডিভাইস সে শুধু মাত্র এসকল তথ্য দেখতে পারে। তবে তৃতীয় কোন ব্যক্তি যদি সেই নেটওয়ার্কে কোনভাবে প্রবেশ করে তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত তথ্য গুলো দেখার চেষ্টা করতে হবে তবেই প্রথম ব্লক টি লক হবে।
ব্লকচেইন জনপ্রিয় কেন
ব্লক চেইন খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি কারণ হলো – এদের সিকিউরিটি ব্যাবস্থা। ধরুন – ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনি আপনার বন্ধুকে কিছু টাকা পাঠালেন। এখন আপনার লেনদেনের সকল তথ্য কিন্তু ব্যাংকের নির্দিষ্ট ডেটা স্টোরে গিয়ে জমা হলো।
এখান থেকে তৃতীয় ব্যাক্তি সব কিছু দেখে নিয়ে আপনার টাকা হাওয়া করে দিতে পারে। কিন্তু ব্লক চেইন পদ্ধতিতে ডেটা স্টোর নেই যার ফলে একটা সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যায় তা হচ্ছে কেউ চাইলেও কোনো ধরণের তথ্য দেখতে পারে না। তো আশা করছি আপনারা হয়তো এতক্ষণে এই অংশ থেকে ব্লকচেইন জনপ্রিয় কেন তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, ব্লকচেইনের ধরণ সমূহ জেনে নেওয়া যাক।
ব্লকচেইনের ধরণ
ব্লক চেইন মূলত বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। ব্লকচেইনের প্রকার গুলো নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হল –
১। প্রাইভেট ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক
বড় বড় কোম্পানি গুলো প্রাইভেট ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি ডিভাইস একটি মাত্র নেটওয়ার্ক এর মধ্যে যুক্ত থাকে। আর এখানে তৃতীয় কোনো নেটওয়ার্কের ডিভাইস যুক্ত হতে পারে না। এ ধরণের নেটওয়ার্ক শুধু মাত্র একজনেই ম্যানেজ করতে পারে।
২। পাবলিক ব্লক চেইন নেটওয়ার্ক
পাবলিক ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক গুলো তে যে কেউ চাইলে একসেস নিতে পারবে আর ব্যবহার করতে পারবে। বিটকয়েন ও অন্য সব ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো পাবলিক ব্লক চেইন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকে।
৩। কন্সরটিউম ব্লক চেইন নেটওয়ার্ক
এই নেটওয়ার্কের আওতায় পাবলিক ও প্রাইভেট দুটো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যায়। ইউজার এর পছন্দ অনুযায়ী সে সিলেক্ট করে নিতে পারবে সে কোন ধরণের নেটওয়ার্ক এখানে ব্যবহার করবে।
৪। সাইড চেইন নেটওয়ার্ক
সাইড চেইন হলো একটি আলাদা ধরণের ব্লক চেইন পদ্ধতি। যেখানে ইউজার দের বাড়তি অনেক ধরণের সুবিধা প্রদান করা হয়। বিশেশ করে ব্লক চেইন এর সকল ফিচার এই প্রযুক্তি তে ব্যবহার করা যায়। সাইড চেইন যে কোনো লেনদেন ক্ষেত্রেও ভালো ভাবে ব্যবহার করা যায়।
তাহলে আশা করছি আপনারা এই অংশটুকু পড়ে এতক্ষনে ব্লকচেইনের ধরণ সমূহ জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, ব্লক চেইন প্রযুক্তির সুবিধা কি কি তা জেনে নেওয়া যাক।
ব্লক চেইন প্রযুক্তির সুবিধা কি
ব্লক চেইন প্রযুক্তির সুবিধা আসলে সকল ক্ষেত্রেই। আমরা সব ক্ষেত্রেই ৩য় কোনো ব্যাক্তির কাছে যাই। যেমন ধরুন ব্যাংক। আমরা টাকা জমানোর জন্য ব্যাংক কে আমরা বিশ্বাস করি আর সারাজীবন ধরে সঞ্চয় করি। এখানে, ব্যাংকের যিনি মালিক তিনি চাইলে আমার একাউন্ট এর সব কিছু পরিবর্তন করে টাকা গুলো অন্যের নামে দিয়ে দিতে পারে। কারন ব্যাংক গুলোতে আপনার ডেটা গুলো নির্দিষ্ট একটি সার্ভারে স্টোর করা আছে।
আপনার সমস্ত তথ্য যেহেতু তাদের নিকট রয়েছে এজন্যই আপনি ব্যাংকের কাছে নির্ভর করে আছেন। আবার এমনও হতে পারে যে সেখান থেকে বাইরের কেউ হাতিয়ে নিয়ে সমস্ত তথ্যাদি বদল করে দিতে পারে।
যদি কোনো ব্যাক্তি এই তথ্য গুলো কে পরিবর্তন করতে চায় তবে সব গুলো ডিস্ট্রিবিউট করা স্টোর এর ডেটা পরিবর্তন করতে হবে। আবার এই ডিস্ট্রিবিউট করা ডেটা গুলোর ব্লক গুলো লক হয়ে যায়। আর লক হওয়া ব্লকের ডেটা দেখতে চাইলে সব ডেটা ইনভ্যালিড হয়ে যায়। তাই হাজার চেষ্টা করলেও এটা কখনো সম্ভব না।
নিচে আমরা ব্লক চেইন প্রযুক্তির এর কয়েকটি সুবিধার দিক উল্লেখ করলাম –
১। সুরক্ষা: ব্লক চেইন প্রযুক্তি অনলাইনে আপনাকে সবচেয়ে বেশি পরিমান সুরক্ষা ব্যবস্থা দিতে সক্ষম। বিশেষ করে যারা বেশি বেশি টাকা লেনদেন করে তাদের ক্ষেত্রে বেশি সুবিধাজনক।
২। ডিসেন্ট্রাল স্টোর: সাধারনত ব্লক চেইন প্রযুক্তির যেগুলো তথ্য রয়েছে সেগুলো ডিস্ট্রিবিউট করা থাকে। তাই সহজেই ডেটা চুরি বা হ্যাক হয়ে যায় না।
৩। দ্রুত লেনদেন সুবিধা: ব্লক চেইন ব্যবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে লেনদেন করা যায়।
৪। অর্থনৈতিক সুবিধা: শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয় বরং এর পাশাপাশি হেলথ ও কেয়ার সহ আরও অন্যান্য যাবতীয় সমস্ত দিক সমূহ দিক থেকে এই প্রযুক্তি আপনাকে সুবিধা প্রদান করবে।
৫। লেনদেন সুবিধা: প্রাচীন কাল থেকে মানুষ লেনদেন এর ক্ষেত্রে ৩য় ব্যাক্তির কাছে টাকা গচ্ছিত রাখে তবে এই প্রযুক্তি পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক। তাই আপনি যার সাথে লেনদেন করবেন সেটা ছাড়া আর কাউকে আপনার প্রয়োজন পরবে না।
ব্লক চেইন এর উদ্ভাবক কে
আপনারা হয়ত নিশ্চয়ই বিটকয়েনের নাম শুনেছেন। মূলত এই বিটকয়েন ব্যাবস্থায় ব্লক চেইন প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। ব্লক চেইন এর উদ্ভাবক সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি তবে ধারণা করা হয় ব্লক চেইন প্রযুক্তির উদ্ভাবক হলেন – সাতোশি নাকামোতো (Satosi Nakamoto)। তবে বলতে এই ব্যক্তি এখনও অনেকেইর কাছে অপরিচিত।
ব্লক চেইন প্রযুক্তি সম্পর্কে শেষ মতামত
ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি আশা করি সেটা বুঝতে পেরেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি একদম সহজ ভাষায় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। তবে একটা কথা আছে, ঘর যতই মজবুত হোক না কেন যদি দরজা শক্তিশালী না হয় তবে কোনো লাভ নেই। তো ব্লক চেইনের ও অনেক দূর্বলতা আছে যা অনেক এক্সপার্ট প্রোগ্রামার রা এর ত্রুটি তুলে ধরেছেন।
আমরা ইতিমধ্যে ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি, ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে এবং ক চেইন প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনি এই যদি পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ অবদি পড়েন তাহলে আশা করছি ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি তা জেনে আপনাদের উপকারে আসবে।
এই পোষ্টটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরকেও ব্লক চেইন প্রযুক্তি নিয়ে জরুরি পোষ্টটি জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে ব্লক চেইন প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করলাম। এমন আরও প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক ব্লগ পোষ্ট পড়তে আমাদের এই সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো ধন্যবাদ।