ধার দেওয়ার জন্য সঠিক চুক্তি তৈরী করা উচিত। চুক্তিতে লিখিত হতে হবে ধারদার এবং ঋণদাতার নাম, টাকার পরিমাণ, চুক্তিতে উল্লেখিত সুদের হার, মেয়াদ এবং পরিশোধের উপযোগী সময়সীমা। ধার দেওয়ার সময় সুদের হার নির্ধারণ করা উচিত। সাধারণত সুদের হার আবদ্ধ মূল্যের উপর নির্ভর করে উল্লেখিত হয়। এছাড়াও, সুদের হার সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকলে ব্যবহারকারীর পক্ষে পরামর্শ দেওয়া উচিত।
চুক্তিতে লিখিত হতে হবে ধারদার ঋণের মেয়াদ বা টার্ম। মেয়াদ শেষ হলে ঋণদাতার দাবি করা যাবে যে টাকা ফেরত প্রদান করা হবে। তো আপনি কি টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি এখন সঠিক স্থানেই এসেছেন। কেননা আমরা এই সম্পন্ন ব্লগপোষ্টজুড়ে টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ধাপে ধাপে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে কর্জ কি সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
কর্জ কাকে বলে?
কর্জ হল একটি অর্থনৈতিক শব্দ যা অর্থ করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ বা অন্যান্য সম্পদ বিনিময়ে নেয়া বা উধার নেওয়া যাক। এটি পরিবারের জন্য হতে পারে যখন একটি ব্যক্তি অন্যকে টাকা বিনিময়ে নেয় এবং একটি সংস্থার জন্য হতে পারে যখন অর্থ লাভ করার জন্য উধার নেওয়া হয়।
সাধারণত এই ধরনের ঋণ হল অস্থায়ী এবং এর জন্য সাধারণত কোনও সুদ প্রদান করতে হয়। কর্জ উধার নেওয়া সম্পদ হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হলে অর্থ উপলব্ধি করার সময়কাল বা টার্ম অনুযায়ী সম্পদ পরিশোধের শর্ত এবং সুদের হার উল্লেখ করা হয়।
টাকা ধার দেওয়ার জন্য ক্ষেত্রে বিবেচ্য কি?
কোনও নামধারী বা অস্বীকৃত ব্যক্তিকে টাকা ধার দেওয়া উচিত নয়। কোনও ব্যবসা বা কোম্পানি যার সাথে আপনার কোনও সম্পর্ক নেই বা কোনও ধার নেই সেই সম্পদ দখল করতে উচিত নয়। কোনও ব্যক্তি যার টাকা ধার দেওয়ার জন্য সন্দেহজনক সম্পদ অথবা অস্থায়ী অবস্থায় আছে সেই ব্যক্তিকে টাকা ধার দেওয়া উচিত নয়।
ধার নেওয়ার জন্য আবেদনকারীর ক্রেডিট হিসাব অথবা ঋণ হিসাব খাতে মোটামুটি কোনও নিঃশব্দ বা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন না থাকলে টাকা ধার দেওয়া উচিত নয়। সম্পদ কিংবা সেবা বিক্রয়ে নিজের আধারে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন বা অল্পসময়ের প্রতিনিধির বিজ্ঞাপনে ভরসা করে টাকা ধার দেওয়া যাবে না।
ইসালামিক নীতিতে কর্জে হাসানা বলতে কি বুঝায়? করজে হাসানার অর্থ হচ্ছে ঋণ বা করজ দেয়া যা সময়মতো পরিশোধ করা হবে, কিন্তু দাতা কোনো অতিরিক্ত অর্থ বেনিফিট নিতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য হল, সমাজের ঋণগ্রস্ত মানুষের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের নানা সময়ে নানা কারণে সাময়িক ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র কি?
চুক্তি আইনটি মূলত ১৮৭২ সালে প্রণীত হয়েছিল এবং সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে যে একজন আইনি বয়সের ব্যক্তি, যদি তিনি একই শর্তে অন্য ব্যক্তির সাথে অর্থের বিনিময়ে কিছু বা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিময় করতে লিখিতভাবে সম্মত হন সেটিকেউ চুক্তিনামা বা চুক্তিপত্র বলা হয়।
টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নথি যা শর্তাবলীর রূপরেখা দেয় যার অধীনে একটি ঋণ প্রদান বা গ্রহনের ক্ষেত্রকে সহজ করে তোলে। এটি দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে, আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং কাঠামো প্রদান করে। এটিকে একটি চুক্তি হিসাবে ভাবুন যা সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব এড়াতে প্রতিটি বিবরণ সংজ্ঞায়িত করে।
টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
টাকা লেনদেন করার ক্ষেত্রে 300 টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করতে হয়। যে ঋণ দেবে এবং যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করবে এই দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং সাথে দুই ব্যক্তির সাক্ষীর স্বাক্ষর প্রদান করা হয়।
নমুনা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
টাকা ধার (ঋণ) দেওয়া/নেওয়ার চুক্তিপত্র
মোঃ মোসাদ্দেক আলী, পিতা মৃত মোঃ মজিবর রহমান, মাতা- এলিনা বেগম, বর্তমান ঠিকানা : ৩৫৬, বিনোদপুর বাজার, থানা- মতিহার, জেলা- রাজশাহী । স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- ডাসমারী, ডাকঘর- বিনোদপুর বাজার, থানা- মতিহার, জেলা- রাজশাহী, মোবাইল নং ০১৯********, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- **********, জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসায়ী। ……………..প্রথমপক্ষ / ঋণ দাতা।
মোঃ জামিল ইবনে হাসান, পিতা মোঃ মোস্তফাকামাল, মাতা- আনোয়ারা বেগম, বর্তমান ঠিকানা – ২০, আরিচা মোড়, মহনপুর বাজার, রাজশাহী । স্থায়ি ঠিকানা: প্রাম- মন্ডুমালা, পোঃ- হাসানহাট, থানা- তানোর, জেলা- রাজশাহী, মোবাইল নং ০১৭********, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ***********, জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- চাকরী। …………দ্বিতীয়পক্ষ / ঋণ গ্রহিতা।
পরম করুনাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরন করিয়া অত্র টাকা ধার /ঋণ দেওয়া চুক্তিপত্র দলিলের বয়ান আরম্ভ করিতেছি, যেহেতু আমি দ্বিতীয় পক্ষ আমার ব্যবাসিয়ক কাজে নগদ টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় আপনি ১ম পক্ষের (ঋণ দাতা) কাছে ১০,০০,০০০/- ( দশ লক্ষ) টাকা ধার / ঋণ হিসাবে নেওয়ার প্রস্তাব করিলে আপনি ১ম পক্ষ / ঋণ দাতা উহাতে সম্মত হন । সেমতে আমরা উভয় পক্ষ নিম্নবর্নিত শর্তাবলীতে একমত হইয়া অত্র চুক্তিপত্র দলিল সম্পাদন কলিাম ।
✅শর্তাবলী✅
১) অদ্য ০১/০১/২০২২ইং তারিখে আমি ২য় পক্ষ (ঋণ গ্রহিতা) আপনি ১ম পক্ষের (ঋণ দাতা) নিকট হইতে ধার /ঋণ বাবাদ এককালিন ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা জনতা ব্যাংক, কাওরান বাজার শাখার ১২৩৪৫৬৭ নং চেকের মাধ্যমে গ্রহন করিলাম এবং উক্ত টাকা আমি ২য় পক্ষ আমার ব্যবসায়িক কাজে বিনিয়োগ করিব ।
২) উপরোক্ত ঋণের বিপরিতে আমি ২য় পক্ষ /ঋণ গ্রহিতা আপনি ১ম পক্ষ/ঋণ দাতাকে প্রতি মাসে ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকা করিয়া ব্যবসার লভ্যাংশ বাবদ প্রদান করিব ।
৩) আমি ২য় পক্ষ / ঋণ গ্রহিতা উপরে বর্নিত লভ্যাংশের টাকা পরবর্তি মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে প্রদান করিব এবং করিতে বাধ্য ধাকিব ।
৪) উপরে বর্নিত ধার্যকৃত মাসিক লভ্যাংশের পরিমান কোন অবস্থাতেই বৃদ্ধি করা যাবে না ।
৫) প্রকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন সরকারী বিধিনিষেধের কারনে ব্যবসা পচিালনায় বিধ্ন ঘটিলে উভয় পক্ষের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মাসিক লভ্যাংশের পরিমান মওকুফ বা কমানো যেতে পাওে, বিষয়টি অবশ্যই উভয় পক্ষের মানবিক দিক বিবেচনায় করা হবে ।
৬) ১ম পক্ষ/ঋণ দাতার নিজস্ব প্রয়োজনে উক্ত ধার দেওয়া টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়লে, ২য় পক্ষ/ঋণ গ্রহিতা ০২ বা ০৩ মাস আগে জানাইবেন। ২য় পক্ষ ঋণ গ্রহিতা কোন ধরনের গরিমসি না করেই উক্ত সময়ের মধ্যে ১ পক্ষ/ঋণ গ্রহিতাকে তার দেওয়া ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা এককালিন পরিশোধ করিয়া দিবেন এবং দিতে বাধ্য রহিলেন ।
৭) অনুুরুপ ভাবে ২য় পক্ষ /ঋণ গ্রহিতা, ঋণ হিসাবে গ্রহনকৃত উক্ত ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা ফেরৎ প্রদনি করিতে চাহিলে ১ মাস আগে ১ম পক্ষ/ঋণ দাতাকে জানাইবেন এবং উক্ত সময়ের পর লভ্যাংশের টাকা সহ মুল টাকা ১ম পক্ষ/ঋন দাতাতে ফেরৎ প্রদান করিবেন । এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ ও স্থির মস্তিস্কে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র চুক্তিপত্র দলিল আমরা উভয় পক্ষ পাঠ করিয়া ইহার মর্ম ও ফলাফল ভালোভাবে অবগত হইয়া আমরা উভয় নিজ নিজ সহি সম্পাদন করিলাম।
ইতি তারিখ
১ঃস্বাক্ষীগনের স্বাক্ষর ও ঠিকানা
২) …………………… ১ম পক্ষ /ঋণ দাতার স্বাক্ষর …………………. দ্বিতীয় পক্ষ ঋন গ্রহিতার স্বাক্ষর
পাওনা টাকা আদায়ের চুক্তিপত্র
আপনি যদি পাওনা টাকা আদায়ের চুক্তিপত্র সম্পর্কে জানতে চান তবে এই পর্বটি আপনার জন্য। পাওনা টাকা আদায় করার চুক্তিপত্র সম্পর্কে জানতে এই পর্বটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন আজকের এই পর্বের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক পাওনা টাকা আদায়ের চুক্তিপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত।
মোঃ আশিক আলী সরদার, পিতা মোঃ আলম সরদার, মাতা মোছাঃ মনোয়ারা পারভিন, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বারঃ ১৯২৩৪৫******, মোবাইল নাম্বারঃ০১৭*********, বর্তমান ঠিকানা তাহেরপুর, বাগমারা রাজশাহী। জাতীয়তা বাংলাদেশী, ধর্ম ইসলাম, পেশাঃ চাকুরি।
প্রথম পক্ষ(দাতা)
নামঃ…………………. পিতার নাম……………………. মাতার নাম……………………. এনা আইডি কার্ডের নাম্বার……………………. বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম/মহল্লাঃ………………. স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম/মহল্লাঃ …………… ডাকঘর……………………. উপজেলা…………………… জেলা……………………… জাতীয়তা বাংলাদেশী, ধর্ম ইসলাম ও পেশা হচ্ছে চাকরিজীবি।
দ্বিতীয় পক্ষ (গ্রহণকারী)
প্রথম পক্ষ হইতে আমার দ্বিতীয় পক্ষের জন্য নগদ টাকার এজন্য তার নিকট নগদ ১ লক্ষ টাকা লোন হিসেবে গ্রহণ করিলাম।
উক্ত টাকা আমি দ্বিতীয় পক্ষ অমুক (এখানে আপনাদের চুক্তি মোতাবেক তারিখ উল্লেখ করে দিবেন) তারিখের রোজ শনিবার হতে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করিব। আমি যদি উক্ত তারিখের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে না পারি সেক্ষেত্রে আমার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আমি দ্বিতীয় পক্ষের কোন আপত্তিক থাকবে না।
সাক্ষী গনের নাম ও স্বাক্ষর
১। …………………………
২। ………………………..
৩। ……………………..
টাকা পরিশোধের চুক্তিপত্র
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা টাকা পরিশোধের চুক্তিপত্র সম্পর্কে জানতে চান। এজন্য আমরা আজকের পোষ্টের শেষ পাঠে টাকা পরিশোধ এর চুক্তিপত্র কিভাবে লেখা যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
- চুক্তিপত্রের শুরুতে দুই পক্ষের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকতে হবে।
- আপনি যার কাছ থেকে যেই তারিখে টাকা লোন নিয়েছিলেন সেই তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
- আবার আপনি কত তারিখে সেই টাকা পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন সেই তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
- আপনি উনার কাছে যেই পরিমাণ টাকা নিয়েছিলেন সেটি উল্লেখ থাকতে হবে।
- আবার যেই তারিখে টাকা পরিশোধ করছেন সেই তারিখ অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।
- এবার সবশেষে দুই পক্ষের স্বাক্ষর অবশ্যই দিতে হবে।
লেনদেন চুক্তিপত্র সম্পর্কে লেখকের মতামত
আশা করছি আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয় টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানতে পেরেছেন। আজকের এই পোষ্টটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরকেও টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে টাকা লেনদেনের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করলাম। এমন আরও প্রয়োজনীয় তথ্যমূলক ব্লগ পোষ্ট পড়তে আমাদের এই সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো।