মেথি ভেষজ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। যা সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে মেথির মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ উপকারী গুন রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি না। তাই চলুন আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
শরীর স্বাস্থ ভালো রাখার পাশাপাশি চুলের স্বাস্থের জন্যও বেশ উপকারী মেথি। মেথির মধ্যে রয়েছে অসংখ্যা পুষ্টিগুন। তবে মেথি খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের জেনে নিতে হবে মেথি খাওয়ার উপকারিতা কি। তার সাথে জেনে নিতে হবে মেথির কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কি না। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা
আমরা রান্নার কাজে এমন কিছু মসলা ব্যবহার করি যা ঔষধিগুন সম্পন্ন। যেগুলোর মধ্যে মেথি অন্যতম একটি মসলা। মেথির মধ্যেও রয়েছে অসাধারন ঔষধি গুনাগুন। মেথি দানার মধ্যে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। মেথির মধ্যে থাকে ফলিক এসিড, ভিটামিন এ’, সি, বি৬, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজসহ আরও অসংখ্যা উপাদান। আর এসব পুষ্টি উপাদান পুরুষদের স্বাস্থের জন্য গুরুত্বপূর্ন। আমরা অনেকেই সঠিকভাবে জানি না পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা গুলো কি কি।
- পুরুষদের যৌন স্বাস্থের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে থাকে মেথি। মেথি খাওয়ার ফলে পুরুষদের সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বাড়ে। যার ফলে যৌন স্বাস্থের উন্নতি ঘটে এবং শক্তি বাড়ে।
- মেথি পুরুষদের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। নিয়মিত মেথি খেলে শারিরিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয় এবং শরীর হয় শক্তিশালী।
- মেথি পুরুষদের পেশি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা কওে থাকে।
ক্স হজম শক্তি বৃদ্ধি করতেও দারুন কার্যকারী মেথি। নিয়মিত মেথি খেলে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও বদহজমের সমস্যায় ভালো উপকার পাবেন। - মেথি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পুরুষদের হৃদরোগের সমস্যা হতে প্রায় দেখা যাচ্ছে, তাই হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন মেথি। মেথি শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
- শরীরের জন্য উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল খুবই ক্ষতিকর, এতে বাসা বাঁধে বিভিন্ন রোগ। তাই যেসব পুরুষদের উচ্চ কোলেস্টরল রয়েছে তারা মেথির উপর ভরসা করতে পারেন।
- নারী হোক অথবা পুরুষ সুন্দর চুল সবার প্রত্যাশা। তাই পুরুষদের চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-চুল পড়া, চুলে খুশকি, চুল পাকা প্রতিরোধ করতে মেথি দিয়ে নিতে পারেন চুলের যতœ। মেথির ব্যবহার চুলে করলে চুলের স্বাস্থ ভালো থাকবে।
মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা
শারিরিক স্বাস্থ থেকে শুরু করে ত্বক ও চুল এর জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক উপাদান মেথি। মেয়েদের জন্য মেথির দানা বিভিন্ন উপকারে আসে। মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান মেয়েদের স্বাস্থ, ত্বক ও চুলের যত্নে খুবই উপকারী। মেথির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন মেয়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ন। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা সম্পর্কে।
পিরিয়ডের সমস্যায় উপকারী: অনেক মেয়েরায় পিরিয়ডের সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। অনেকের পেটে ব্যাথা, ক্রাম অথবা জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। আর এসব সমস্যায় সমাধান দিতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে মেথি। তাই পিরিয়ডের সমস্যা হলে পানির সাথে মেথি গুড়া মিশিয়ে খাবেন।
ওজন কমায়: পুরুষের তুলনায় নারীরা ওজন নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকে। কারণ অতিরিক্ত ওজন মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়, এমনকি কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন গর্ভধারনেও বাধাগ্রস্থ করে। তাই অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে আনা জরুরি। আর ওজনকে কমাতে ভরসা রাখতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদান মেথি দানা। মেথি দানার গুড়ো প্রতিদিন সকালে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে চর্বি কমে, ফলে ওজন অনেকটাই কমে আসে। তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে প্রাকৃতিক উপাদান মেথিকে বেছে নিতে পারেন।
চুলের স্বাস্থের জন্য উপকারী: মেথির বীজ থেকে প্রোটিন ও নিকোটিনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা চুলের স্বাস্থের জন্য উপকারী। মেথি বীজ দিয়ে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক বানিয়ে চুলে লাগালে অথবা মেথি বীজের পানি পান করলে চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ভালোভাবে হয়।
ত্বকের স্বাস্থ ভালো রাখে: মেথির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-ব্রণ, ত্বকের প্রদাহ, শুষ্ক ত্বক, র্যাশ ও অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ে এবং ত্বক সুন্দর থাকে। তাই ত্বকের স্বাস্থ ভালো রাখতে নিয়মিত মেথি দানার ফেইস প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন।
পিসিওএস এর সমস্যায় উপকারী: বর্তমানে অনেক মেয়েদের পিসিওএস এর সমস্যা হতে দেখা যাচ্ছে। রক্তের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্য বিঘিœত হওয়ার কারনে পিসিওএস এর সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা এজন্য শর্করার ভারসাম্য ঠিক রাখতে বলে থাকেন। আর মেথি শর্করার ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য কর। এর সাথে পিসিওএস সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এছারাও আরও বেশি কিছু উপকারীতা মেয়েরা মেথি খাওয়ার ফলে পেয়ে থাকে। তবে গর্ভবতী মেয়েরা মেথি খাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকবেন। কারন অতিরিক্ত মেথি খেলে অকাল প্রসবের ঝুঁকি থাকতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্য তালিকায় মেথি যোগ করবেন।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
আমাদের একটি পরিচিত সমস্যা হলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। ছোট কিংবা বড় সবার এ সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। দৈনন্দিন জীবনে এ সমস্যা যেন লেগেই থাকে। আর এ সমস্যার সমাধানের জন্য বেছে নিতে পারেন মেথি। শরীরের নানা সমস্যার সমাধানে কাজ করে থাকে মেথি। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্যও দারুন উপকারী মেথি। তবে জানেন কি গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়মত সম্পর্কে? তো চলুন সঠিক উত্তরটি জেনে নিন গ্যস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য কোন নিয়মে মেথি খাবেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় মেথি খাওয়ার নিয়ম: এক গ্লাস পানির মধ্যে দিয়ে দিন এক চা চামচ মেথি। সারারাত মেথি ভিজানো পানি রেখে দিন। এরপর সকালে উঠে খালি পেটে এ মেথি ভিজানো পানিটুকু ছেকে খেয়ে নিন। এ নিয়মে মেথি খেলে কয়েকদিনের মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান পাবেন। এছারাও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পানির সাথে মেথি গুড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন কিংবা এক চা চামচ মেথির বীজ ২ কাপ পানিতে দিয়ে ১৫ মিনিট মতো সময় ধরে ফুটিয়ে নিন। এরপর ছেকে চা বানিয়ে পান করুন।
মেথি ভেজানো পানি থেকে প্রচুর ফাইবার পাওয়া যায়। যা অন্ত্রের জন্য দারুন উপকারী। যার ফলে এ পানি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটিসহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কমে। এছারাও এ নিয়মে মেথি খেলে মেদ কমে, হাই ব্লাড সুগার দূরে যায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনে থাকে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কৃমির সমস্যা প্রভৃতি দূর হয়।
মেথির সাহায্যে যদি আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান পেতে চান তাহলে প্রায় ৬ সপ্তাহ মতো মেথি ভিজানো পানি পান করতে হবে। দিনে দুইবার যদি খেতে পারেন তাহলে আরও ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগের নাম। এ রোগ কারও হয়ে গেলে তা একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। যতদিন বাঁচবে ততদিন শরীরে থেকে যাবে এ রোগ। তবে সুস্থ থাকতে এ রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা জরুরি। আর ডায়াবেটিস রোগিরা রোগ নিয়ন্ত্রন রাখতে প্রতিদিনই সেবন করে থাকেন ঔষধ। তবে প্রতিদিন ঔষধ সেবন না করে, ডায়েটে প্রাকৃতিক উপাদান মেথি যুক্ত করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। মেথি আমরা মসলার কাজে ব্যবহার করলেও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এর অনেক ভেষজ গুন রয়েছে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে মেথি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য মেথি দানার ব্যবহার সম্পর্কে জানেন কী? জানেন কি কোন নিয়মে মেথি খেলে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রনে রাখাব সম্ভব? তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য এক গ্লাস গরম পানির সাথে ১ চা চামচ মেথি দানা আধা ঘন্টা মতো ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে পানিটুকু ছেকে পান করুন। ু
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে মেথি চা বানিয়েও খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে চুলায় পানি গরম করতে দিন পানি ফুটে আসলে এক চা চামচ মেথি গুড়ো দিন এবং তার সাথে দিন তুলসি পাতা ও মধু। এরপর ছেঁকে পান করুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
- অঙ্কুরিত মেথি দানা খেলেও ডায়াবেটিসের জন্য উপকার পাওয়া যায়। এজন্য মেথি দানাকে প্রথমে পানিতে দিয়ে অঙ্কুরিত করতে দিন। এরপর স্যালাড বানিয়ে অথবা মুড়ির সাথে খেতে পারেন অঙ্কুরিত মেথি। নিয়মিত এ পদ্ধতিতে মেথি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য মাঝেমধ্যে ঔষধের পরিবর্তে ডায়েটে রাখুন ভেষজ উপাদান মেথি। উপরের নিয়মগুলো ফলো করে ধৈর্য ধরে মেথি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে বলে আশা করা যায়।
ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম
স্বাভাবিকের তুলনায় শরীরের অতিরিক্ত ওজন হতে পারে বিভিন্ন সমস্যার কারণ। বয়স ও উচ্চতার তুলনায় অতিরিক্ত ওজন মানেই রোগ হওয়ার ঝুঁকি। নারী কিংবা পুরুষ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা সারাবিশ^ জুড়ে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের সমস্যা, হৃদরোগ, ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ওজন শুধু স্বাস্থের ক্ষতি করে না পাশাপাশি অবসাদ ও মানসিক অশান্তির কারন হয়ে দাড়ায়।
তাই ওজন বাড়তে শুরু করলে শরীরের সঠিক যতœ নেওয়া প্রয়োজন। এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে শরীরের ওজন কমানো যায়। যার মধ্যে মেথি অন্যতম। মেথি বীজের তবে জানেন কি ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। জেনে নিন ওজন কমাতে মেথি কোন কোন নিয়মে খাবেন।
- ওজন কমাতে মেথি বীজ ও তার সাথে খেতে পারেন মধু। মধুর মধ্যে রয়েছে কম ক্যালোরি ফলে এটি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। ওজন কমানোর জন্য মেথি বীজের পেস্ট বানিয়ে তার সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খান।
- ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার কার্যকারী একটি নিয়ম হলো সকালে খালি পেটে মেথির জল পান করা। এক চা চামচ মেথি বীজ নিয়ে তা সারারাত এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে এ জল পান করুন। নিয়মিত এ পদ্ধতিতে মেথি খেলে ওজন কমে আসবে
- ওজন কমাতে মেথি বীজের গুড়া বানিয়েও খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে একটি পাত্রে মেথি বীজ নিয়ে তেল ছাড়া হালকা আঁচ দিয়ে ভেজে নিন। ভেজে সেটির গুড়া বানিয়ে নিন। এরপর মেথি বীজের গুড়া হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খাবেন। এ পদ্ধতিতে নিয়মিত মেথি গুড়া খেলে ওজন কমে যাবে।
অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় উপরের নিয়মগুলো ফলো করে মেথি খাবেন। ধৈর্য ধরে এ নিয়মগুলো অনুসরণ করে মেথি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।
চুলের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম
সুন্দর চুল আমরা সবাই চাই। তবে চুলের মধ্যে হওয়া বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুল পড়া, চুলের আগা ফাটা, খুশকি ইত্যাদি আমাদের চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। প্রতিদিন ১০০ টি চুল পড়া কোনো সমস্যার মধ্যে পড়ে না, এটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এর থেকে বেশি চুল পড়া চিন্তার বিষয়।
তবে আমরা অনেকেই মনে করি সুন্দর চুল পেতে শুধু চুলের বাহ্যিক যত্নই নিতে হবে। এটি একটি ভুল ধারনা। সুন্দর চুল পেতে বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি খাদ্যাভাস দিকে নজর দেওয়া জরুরি। খাদ্য তালিকায় প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার গুলো থাকলে চুল সুন্দর থাকে। এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা খেলে চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে মেথি। তবে জানেন কি চুলের জন্য মেথি কিভাবে খেতে হবে। জেনে নিন চুলের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে মেথি মিশিয়ে খেলে চুলের স্বাস্থ ভালো থাকে। মেথি বীজের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক এসিড, আয়রন ও প্রোটিন চুলের জন্য খুবি ভালো। যার ফলে মেথি খেলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে এবং চুলের বৃদ্ধি কম হচ্ছে তারা দৈনিক এক গ্লাস মেথি ভিজানো পানি খাবেন। এ নিয়মে মেথি ভিজানো পানি খেলে আপনি সুন্দর চুল ফিরে পাবেন।
চুলের জন্য মেথি খাওয়ার পাশাপাশি হেয়ার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মেথি দিয়ে বানানো হেয়ার প্যাক চুলের জন্য দারুন উপকারী।
মেথি খাওয়ার অপকারিতা
মেথি স্বাস্থের জন্য উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। মেথির মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের স্বাস্থের জন্য উপকারী। তবে মেথির মধ্যে স্বাস্থ উপকারী রয়েছে তাই বলে কি ইচ্ছামতো যতটুকু খুশি খেতে পারবেন। আমরা অনেকেই মনে করি পুষ্টিকর খাবার বেশি খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে এটি সম্পূর্ন ভুল ধারনা। যেকোনো খাবার পুষ্টিকর হলেও পরিমিত খেতে হবে। অতিরিক্ত খাবার স্বাস্থের জন্য বিপজ্জনক। আবার সব খাবার সবার জন্য পুষ্টিকর নয়। তাই কোনো খাবার খাদ্য তালিকায় রাখার আগে উপকারিতার পাশাপাশি জেনে নিতে হবে অপকারিতা সম্পর্কে। তাই চলুন মেথি খাওয়ার আগে জেনে নিন মেথি খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি।
- গর্ভবতী মায়েদের মেথি ভোজানো পানি খাওয়া নিরাপদ নয়। এতে কারও ক্ষেত্রে গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
- যারা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন তারা অতিরক্ত মেথি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে উপকারীতা পেতে মাঝে মধ্যে খেতে পারেন।
- মেথি পেটের সমস্যায় দারুন কার্যকারী। তবে অতিরিক্ত মেথি একবারেই খেলে পেটে বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস, ব্যাথা প্রভৃতি হয়ে থাকে।
- মেথি বীজ কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। তাই অ্যালার্জি হলে মেথি বীজ এড়িয়ে চলতে হবে।
মেথি বীজের অপকারিতা থেকে উপকারিতা অনেক বেশি। পরিমিত মেথি বীজ স্বাস্থের কোনো ক্ষতি করে না। তবে যাদের স্থায়ী রোগ আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেথি খাবেন। আর উপরের বলা বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে মেথি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।