পুদিনা পাতার নাম আমরা সকলেই সেই ছোট্ট বেলা থেকে শোওনে আসছি। এবং এর ঔষধি গুনাগুনের কথাও হয়তো আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু পুদিনা পাতা খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় আবার এটি খেলে কি কি ক্ষতি হয় তা হয়তো আমরা জানি না। যারা পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানেন না তারা অবশ্যই সুস্থ্য থাকতে পুদিনা পাতার কিছু গুনাগুন জেনে নেওয়া উচিত।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ জুড়ে থাকেন, তাহলে পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা, পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে পুদিনা পাতার উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
পুদিনা পাতার উপকারিতা
পুদিনা পাতা একটি উপকারি ভেষজ। এই পাতার নানান রকমের উপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন পুদিনা পাতার উপকারিতা বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: পুদিনা পাতা দেহের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে থাকে। কারন এতে ভিটামিন সি বিদ্যামান। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
হাঁপানির সমস্যা কমায়: যারা প্রতিনিয়ত হাঁপানিজনিত ভিবিন্ন সমস্যায় ভুগেন তারা এই সমস্যা কিছুটা কমাতে নিয়মিত পুদিনা পাতা খেতে পারেন। কেননা “মেন্থল” তৈরীতে পুদিনা পাতা মুখ্য ভূমিকা রাখে।
হজমে সহায়তা করে: পুদিনা পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মেন্থল, ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। পুদিনা পাতার এই সকল উপাদানগুলো আমাদের হজম সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করে।পুদিনা পাতা পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কমায়।
বদ হজম দূর করে: পুদিনা পাতার মধ্যে যেই পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা বদ হজম দূর করে সহায়তা করে থাকে। তাই আপনারা যদি হজম শক্তি বাড়াতে চান বা আগের চেয়ে হজম শক্তি উন্নত করতে চান, তাহলে নিয়মিত পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
নিঃশ্বাসের দূর্গন্ধ দূর করে: পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধ যুক্ত পাতা। যা সেবন করলে আমাদের নিঃশ্বাসের দূর্গন্ধ নিমিষেই দূর হয়ে যায় এবং একই সাথে নিঃশ্বাসে ফিরে আসে সতেজতা। তাই নিঃশ্বাসের দূর্গন্ধ দূর করার জন্য পুদিনা পাতা অন্যতম ভূমিকা রাখে।
ক্লান্তি দূর করে: অনেক সময় আমাদের শরীরে ক্লান্তি ভাব আসে। আর কাজের সময় ক্লান্তি ভাব খুবই বিরক্তকর। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে আমাদের এই সমস্যার সম্মূখীন বেশি হতে হয়। তাই আপনি যদি মনে করেন যে আমি পুদিনা পাতার খাওয়ার মাধ্যমে দেহের ক্লান্তি দূর করব তাহলে দেরি না করে পুদিনা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে অথবা জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলুন। তাহলে দেখবেন আপনার দেহের ক্লান্তি খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে।
মাথা ব্যথা দূর করে: মাথা ব্যথা অর্থাৎ মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকারী এই পুদিনা পাতা। মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করার জন্য আপনি কয়েকটা একেবারে টাটকা পুদিনা পাতা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তারপরে আপনার এই পাতার ঘ্রান নাকের কাছে নিয়ে নিতে হবে। তাহলে দেখবেন এই পাতার ঘ্রান আপনার মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করবে খুব সহজেই।
পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা
পুদিনা পাতার জুস খাওয়ার যে উপকারিতা রয়েছে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। পুদিনা পাতার জুস নিয়মিত খাওয়ার ফলে পেটের নানান ধরণের জটিলতা সমস্যা দূর হয়ে যায়। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে বা যাদের পেট ফাঁপা ভাব অনুভূত হয় তাদের ক্ষেত্রে এর জুস বেশ উপকারি ভূমিকা রাখে।
এমনকি যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা রয়েছে, তারা এই পাতার জুস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে। আবার আপনি চাইলে পুদিনা পাতা পরিমাণ মতো নিয়ে তাতে সামান্য পানি, লেবুর রস, ভাজা জিরার গুঁড়া, স্বাদমতো চিনি এবং লবণযুক্ত করে খেতে পারেন।
অনেক সময় আমরা অনেকেই রমজান মাসেও এ পুদিনা পাতার শরবত বানিয়ে খেতে পছন্দ করি। তাই আপনিও চাইলে রমজান মাসে পুদিনা পাতার জুস বা শরবত বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার শরীর ভালো এবং ঠান্ডা থাকবে।
পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা
বেশি করে চা খেলে শরীর খারাপ হয় এটা আমরা অনেকেই জানি। বিশেষত আমাদের দেশের মতো গরম দেশে দেশি চা খাওয়া শরীরের পক্ষে খুব একটা ভালো না। বহুদিন আগে একজন কৃষিবিজ্ঞানী পুদিনা পাতা দিয়ে একরকম চায়ের উদ্ভাবন করেছিলেন। যা খেলে চায়ের তৃষ্ণা মেটে ও শরীর ঠান্ডা থাকে।
পুদিনা পাতার চা বানাতে হলে প্রথমে আপনাকে নরমাল চা বানানোর মত চা পাতার বদলে পুদিনা পাতা নিবেন তারপরে চাইলে সা্মান্য দুধ, গোলমরিচ ও মৌরী দিয়ে চা তৈরী করে ফেলুন। এই চা খেতে সুস্বাদু এবং পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিয়ে থাকে। শরীরের পক্ষে পুষ্টিকর এবং হিতকর পানীয়। খিদে ও পরিপাক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভালো এবং সব দিক থেকে অনেক উপকারী।
পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
পুদিনা পাতার চাটনি: পুদিনা পাতার চাটনি খাওয়া বেশ উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতায় শুকনো খেজুর, গোলমরিচ, লবণ, হিং, জিরা ও কালো আঙ্গুর পরিমাণ মতো মিশিয়ে নিয়ে একসাথে পিষে নিয়ে চাটনি তৈরী করা যায়। এতে পাতি লেবুর রস মেশালে আরও অনেক ভালো হবে।
পুদিনা পাতা আর তুলসি পাতার ক্বাথ: টাটকা পুদিনা পাতা ও তুলসি পাতা একসাথে পিষে নিয়ে পানিতে মিশিয়ে পাত্র ঢাকা দিয়ে ঘন ঝোল বা ক্বাথ তৈরী করুন। আপনি যদি এই ক্বাথ নিয়িমিত খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার প্রতিদিন যে জ্বর তা সারাতে সহায়তা করবে।
পুদিনা পাতা, সবুজ তুলসি ও কৃষ্ণ তুলসির রস: এই তিন রকমের পাতা একসাথে মিশিয়ে থেঁতো করে রস বের করে নিতে হবে। এই রসের সাথে অল্প চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে টাইফয়েড রূগীদের জন্য বেশ উপকারী।
পুদিনা পাতা ও আদার রস: পুদিনা পাতা আদার সাথে খেলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে পুদিনা পাতা ও আদার রস মিশিয়ে নিতে হবে। এরপরে সেই মিশ্রনে সামান্য পরিমাণ লবণ দিয়ে নিবেন। তারপরে সেই রস খেয়ে নিবেন। তো আশা করছি আপনারা পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবার রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার জেনে নেওয়া যাক।
রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
যেকোনো মাংস অর্থাৎ কাশি কিংবা মুরগির মাংসে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে। পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে এ সকল খাবারের স্বাদ দেবেন বৃদ্ধি পায়। রান্নার কাজে পুদিনা পাতার উপকারিতা অপরিসীম। মাছের সাথে পুদিনা পাতা রান্না করতে পারেন।
যেকোনো ধরনের রান্না শেষের পথে এ পুদিনা পাতা ছোট করে কেটে রান্নার উপরে ভালো করে ছিটিয়ে দেবেন। দেখবেন রান্নার স্বাদ দেবেন। পুদিনা পাতা রুচি কর এক ধরনের খাবার।
সবজির সাথেও পুদিনা পাতা মিক্সড করে রান্না করতে পারেন। পুদিনা পাতা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলে শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় সহায়তা করে। পুদিনা পাতার ছোট ছোট করে কেটে সালাতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলে অনেক উপকারিতার লক্ষ্য করতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই বাসায় বার্গার বানিয়ে খেতে পছন্দ করি। আপনি চাইলে আপনার বাসায় বানানো বার্গারের মধ্যে পুদিনা পাতা দিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া আপনি চাইলে সুপের সাথেও এই পাতা মিশিয়ে খেতে পারবেন। বিভিন্ন খাবারে পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে খাবারের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এবং খাবারে অনেক রুচি বৃদ্ধি করে। তাই বলা যাই রান্নাতে পুদিনা পাতার উপকারিতা অপরিসীম।
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
পুদিনা পাতা রূপচর্চায় ও অনেক উন্নত মানের। রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আমাদের ত্বকে ব্রণের জন্য ও উপকারি পুদিনা পাতা।আপনারা কেউ ব্রণ সমস্যায় ভুগলে ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতা। ত্বককে ভীতর থেকে আদ্রর্তা ও কোমল রাখতে পুদিনা পাতা কার্যকরী, ডার্ক সার্কেল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
উপকারি এই ভেষজের সাহায্য নিয়ে আপনে ত্বকের নানা সমস্যা সমাধান করতে পারেন। ব্রণ সমস্যায় ভুগলে ব্যবহার করুন পুদিনা পাতা। ত্বকের জন্য পুদিনা পাতা যেভাবে ব্যবহার করবেন, প্রথমে পুদিনা পাতা বেটে ওটের গুড়া মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
তার ২০ মিনিট পর অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার এ যাদের তৈলাক্ত ত্বক , তাদের ব্রণ ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।পুদিনা পাতা ত্বকের উপর লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক
আপনারা হয়তো জানেন যে প্রতিটা জিনিসেরই ভালো ও খারাপ দিক থাকে। পুদিনা পাতারও বেশ কয়েকটি কাহ্রাপ দিক বা অপকারিতা রয়েছে। যদিও এর ক্ষতিকর দিকের চেয়ে উপকারি দিকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। তবুও আপনি যদি পরিমানের চেয়ে বেশি গ্রহণ করেন তাহলে তো অবশ্যই সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হবে।
তেমনি পুদিনা পাতাও শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অধিক পরিমাণে সেবন করলে সেটা ভালো নাও হতে পারে। পুদিনা পাতার রস পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অনেক সময় পেট ফেটে যায় যার ফলে হজম শক্তিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
অর্থাৎ অনেকের কিন্তু ইমুনিটি (Uminity) এক নয় বিধায় যাদের পুদিনা পাতা খাওয়া সহ্য না-ও হতে পারে। যদি সহ্য করতে পারেন তাহলে খাবেন আর যদি ক্ষমতার বাইরে হয় তাহলে জোর করে খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
আবার যাদের দেহে অ্যালার্জি বা চুলকানিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় পুদিনা পাতা খেলে কাশি, হাচি , ত্বকে ব্রণ, তক ফুলে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষতিকর লক্ষণ প্রকাশ পাই।
গর্ভাবস্থায় পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন সকালের গড়পাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুদিনা পাতাতে অতিরিক্ত মেন্থল থাকার ফলে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
পুদিনা পাতা পরিমানে বেশি খেলে অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পুদিনা পাতা সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি পুদিনা পাতা সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।