আঁচিল শরীরের একটি সমস্যার নাম, ছোট বড় অনেকের এটি হতে দেখা যায়। এ সমস্যা অনেকেই গুরুত্বসহকারে দেখে না, তবে পরবর্তীতে আঁচিল থেকে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। তাই আঁচিল সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত।
আঁচিল এ নামটি আমরা শুনে থাকলেও সঠিকভাবে চিনি না অনেকেই। ফলে এ থেকে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা এবং এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আঁচিল ভালোভাবে চিনে, তা দূর করতে হবে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে আঁচিল চেনার উপায় এবং আঁচিল দূর করার উপায় সম্পর্কে। তো চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিন আঁচিল চেনার উপায় এবং আঁচল দূর উপায় সম্পর্কে।
আঁচিল চেনার উপায়
আঁচিল হলো এক ধরনের বিনাইন টিউমার, এগুলো থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। চামড়ার সাথে যুক্ত হয়ে এটি বের হয়। নারী অথবা পুরুষ উভয়ের আঁচিল হয়ে থাকে। তবে বয়স্কদের এটি হতে বেশি দেখা যায়। শরীরের যেকোনো স্থানে আঁচিল হতে দেখা যায়। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা আঁচিল সঠিকভাবে চিনতে পারেন না। বিশেষ করে আঁচিল ও তিল এ দুটো জিনিসের পার্থক্য বুঝতে পারে না অনেকেই। তাই চলুন জেনে নিন আঁচিল চেনার উপায় সম্পর্কে।
- প্রথম দিকে আঁচিল ত্বকের মতো রঙের ফুসকুড়ি আকারে ছোট হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এটি বড় হতে থাকে। তবে সব আঁচিল বড় হয় না।
- আঁচিল অমসৃণ ও শক্ত হয়ে থাকে।
- আঁচিল কখনও ব্যাথা হয় না এবং চুলকায় না।
- আঁচিল শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে। তবে ঘাড়ে, বগলে, চোখের পাতায় অর্থ্যাৎ শরীরের যে স্থানগুলোতে ভাঁজ পড়া সে স্থানগুলোতে বেশি হয়ে থাকে।
আঁচিল দূর করার উপায়
ত্বকের একটি বিব্রতকর সমস্যা হলো আঁচিল। ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় আঁচিলের কারনে। আঁচিল এ সাধারণত কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এটি যে সম্পূর্ন নিরাপদ তা কিন্তু নয়। আঁচিল যদি ক্রমাগত বড় হতে থাকে তাহলে অবশ্যই সচেতন হওয়া জরুরি। আঁচিল আপনি কোন কোন উপায়ে দূর করবেন জানেন কি? চলুন জেনে নিই আঁচিল দূর করার উপায় সম্পর্কে।
আঁচিল দূর করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আঁচিল সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারেন। আঁচিল যদি গুরুত্বর হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারি চিকিৎসা নিতে হবে। বাংলাদেশে আঁচিলের বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। চিকিৎসকেরা আপনার আঁচিলের সাইজ ও ধরনের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেবেন। আঁচিলের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
স্যালিসিলিক এসিড: বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড হলো স্যালিসিলিক এসিড। ত্বকের আঁচিল দূর করতে খুবই কার্যকারী এ এসিড। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করা যাবে না।
ইলেকট্রো সার্জারি: যেকোনো ধরনের আঁচিল দূর করতে ভালো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ইলেকট্রো সার্জারি। এটির খরচও তুলনামূলকভাবে কম এবং এক সেকশনে চিকিৎসা হয়ে থাকে।
লেজার চিকিৎসা: আঁচিল অপসারণের জন্য ভালো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো লেজার চিকিৎসা। এ চিকিৎসা পদ্ধতির খরচ বেশি হয়ে থাকে, তবে এটি নিরাপদ। অনেকেই লেজার চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়। এর কারণ হলো যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে। তাই রোগির আগে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে তারপর এ চিকিৎসা নিতে হবে।
ক্রাইওথেরাপি: ক্রায়োথেরাপি একটি তরল নাইট্রোজেন যার মাধ্যমে আঁচিল সমস্যার সমাধান করা যায়। এ পদ্ধতিতে অল্প সময়ের মধ্যে আঁচিল দূর করা যায়। এটি একটি ব্যাথাহীন চিকিৎসা। যার কারণে বাচ্চাদের জন্য এ চিকিৎসা খুবই জনপ্রিয়।
এ ছিল আঁচিল দূর করতে ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতির নাম। তবে এমন অনেক আঁচিল রয়েছে যেগুলো ঘরোয়া উপায় এবং ওষুধের মাধ্যমে দূর করা যায়। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়–ন।
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়
চর্মজনিত একটি রোগ হলো আঁচিল। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা খুব সহজেই একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে সক্রমিত হতে পারে। এটি শুরুতে তেমন বিপজ্জনক নয়, তবে পরবর্তীতে কিছু আঁচিলের ক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই আঁচিল দেখা দিলে শুরু থেকে এটি দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। আঁচিল প্রাথমিক অবস্থায় বের হলে তা ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে দূর হয়ে যেতে পারে। তাই শুরুতে আঁচিল দূর করতে ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহার করতে পারেন। জেনে নিন আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়গুলো কি কি।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার: অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এর মধ্যে তুলো ভিজিয়ে, সে তুলো আঁচিলের উপর সারা রাত রেখে দিন। এভাবে প্রতিদিন টানা পাঁচদিন করবেন, ভিনেগারের মধ্যে থাকা এসিড আঁচিল সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
রসুন: রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসিন নামক উপাদান, যা আঁচিল দূর করতে সহায়তা করে থাকে। সেক্ষেত্রে রসুনকে পিসে আঁচিলের ওপর লাগান।
কাঁচা গোল আলু: আঁচিল দূর করতে সতেজ একটি কাঁচা আলু গোল করে কেটে আঁচিলের উপর ঘষুন। যদি আপনার আঁচিল প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাহলে এভাবে কয়েকদিন করলে দূর হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরা: প্রাকৃতিক এ উপাদানটি আঁচিল সমস্যার জন্যও খুবই কার্যকারী। আঁচিল দূর করতে অ্যালোভেরার জেল বের করে তা আঁচিলে লাগিয়ে রাখুন। কয়েকদিন এভাবে জেল লাগালে আঁচিল পড়ে যাবে।
কলার খোসা: আঁচিল দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন কলার খোসা। সেক্ষেত্রে কলার খোসার ভেতরের অংশ দিনে কয়েকবার আঁচিলের উপর ঘষুন। অথবা কলার খোসার পেস্ট বানিয়ে রাতে ব্যবহার করতে পারেন। কয়েকদিন করলে আঁচিল দূর হয়ে যাবে।
ভিটামিন ই’ ক্যাপসুল: ভিটামিন ই ক্যাপসুল আঁচিল দূর করতে উপকারী। যে স্থানে আঁচিল হয়েছে সে স্থানে ই ক্যাপসুলের তেল বের করে লাগিয়ে তার উপর ব্যান্ডেজ করে সারারাত রেখে দিন। এভাবে টানা ১৫ দিন করলে উপকার পাবেন।
টি ট্রি অয়েল: টি ট্রি অয়েলের মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে, যা আঁচিল দূর করতে সহায়তা করে থাকে। আঁচিল দূর করতে টি ট্রি অয়েল আঁচিলের স্থানে কয়েক ঘন্টা লাগিয়ে রেখে দিন। এভাবে দিনে কয়েকবার করলে আঁচিল কমে যাবে।
উপরের বলা ঘরোয়া উপায়গুলোর সাহায্যে আঁচিল সেরে যেতে পারে। তাই আঁচিল দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় এ ঘরোয়া উপায়গুলো ধৈর্য্য নিয়ে করুন।
আঁচিল দূর করার ওষুধ
শরীরের যেকোনো স্থানে আঁচিল দেখতে কার না খারাপ লাগে। অনেকের আবার শরীরে বিভিন্ন অংশ ভর্তি থাকে আঁচিলে। আঁচিল সাধারনত কোনো ক্ষতি করে না। তবে এটি দেখতে খুবই অস্বস্তিকর এবং একেবারে এটিকে নিরাপদ বলা যায় না। তাই আঁচিল হলে এটিকে দূর করার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকেই আঁচিল দূর করার ওষুধ সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন।
তাদের ক্ষেত্রে বলতে চাই, আঁচিল দূর করতে কার্যকারী উপায় হলো ঘরোয়া ওষুধ। ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে আঁচিল সমস্যার সমাধান পাওয়াও সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনি উপরের বলা ঘরোয়া উপায়গুলো করতে পারেন। তবে ঘরোয়া উপায়ে যদি আপনি সমাধান না পান তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখে কিংবা কারও মুখের কথা শুনে কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করবেন না। কারণ সবার ক্ষেত্রে ওষুধের ধরন একি রকম হয় না।
মুখের কালো আঁচিল দূর করার উপায়
আঁচিল খুবই বিব্রতকর একটি সমস্যা। বিশেষ করে যদি মুখে হয় তাহলে মুখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় আঁচিল সমস্যার কারনে। মুখের মধ্যে কালো আঁচিল নিয়ে কি আপনিও সমস্যায় আছেন? তাহলে ঘরোয়া চিকিৎসায় সারাতে পারেন এ আঁচিল। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক মুখের কালো আঁচিল দূর করার উপায়গুলো কি।
ক্যাস্টর অয়েল: ক্যাস্টর অয়েল আঁচিল সমস্যা সমাধানের জন্য খুবই উপকারী। সেজন্য আঁচিল দূর করতে ক্যাস্টর অয়েলের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে প্রতিদিন আঁচিলের স্থানে লাগাবেন। এ পদ্ধতি আপনার মুখের আঁচিলগুলোকে ঝড়ে পড়তে সাহায্য করবে।
নারিকেল তেল: মুখের আঁচিল দূর করতে ব্যবহার করুন নারিকেল তেল। এজন্য নারিকেল তেল অল্প করে নিয়ে আঁচিলের উপর মালিশ করুন। নিয়মিত এটি করবেন আঁচিল ধীরে ধীরে ত্বক থেকে চলে যাবে।
মধু: মধু ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি উপাদান। তাই হালকা মধু হাতে নিয়ে আঁচিলের স্থানে মালিশ করবেন। নিয়মিত করলে আঁচিল কমতে শুরু করবে।
পেঁয়াজ: আঁচিল দূর করতে ব্যবহার করুন পেঁয়াজ। দিনের বেলা কয়েক টুকরো পেঁয়াজ কেটে তার সাথে অল্প করে লবন মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। রাতে ঘুমানোর সময় এটি আঁচিলের স্থানে ব্যবহার করুন। এরপর সকালে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। নিয়মিত এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন, আঁচিল সেরে যাবে।
আঁচিল দূর করতে ঘরোয়া উপায়গুলো থেকে ফল পেতে একটু সময় লাগবে। তবে ধৈর্য ধরে চর্চা করুন ফল পাবেন।
আঁচিল দূর করার হোমিও ঔষধ
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিভিন্ন রোগে সফলতা এনে দিয়েছে। বর্তমানে অনেকেই এ চিকিৎসার ওপর নির্ভর করছে। তাই আঁচিল সমস্যায় অনেকেই হোমিও ঔষধ খাওয়ার সিধান্ত নিতে চাইছেন। তবে জানেন কি আঁচিল দূর করার জন্য হোমিও ঔষধ কতটুকু কার্যকর? তো চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক আঁচিল দূর করার হোমিও ঔষধ সম্পর্কে।
আঁচিল হলো চর্মরোগ। আর চর্মরোগের সমস্যাগুলোতে হোমিও ঔষধ খুব ভালো কাজ করে থাকে। আঁচিল সমস্যা সমাধানের জন্য ভালো চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে পাওয়া যায়। আঁচিল সমস্যায় সাধারণত যে হোমিও ঔষুধগুলো ব্যবহার করা হয়। তা হলো-
- থুজা
- নাইট্রিক অ্যাসিড
- স্যালিসিলিক অ্যাসিড
- সিপিয়া
- কস্টিকাম
- নেট্রাম মিউরিটিকাম
- ডালকামারা
- লাইকোপেডিয়াম
- সাইলেসিয়া
- এনাগেলিস ইত্যাদি
ঔষুধগুলো আঁচিল দূর করার জন্য ভালো কাজ করে থাকে।
তাই আঁচিল সমস্যা সমাধানের জন্য বেছে নিতে পারেন হোমিওপ্যাথি ঔষধ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হোমিও ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন। হোমিওপ্যাথি ঔষধগুলো রোগির অবস্থা বিবেচনা করে প্রয়োগ করার পরামর্শ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন।
পরিশেষে বলতে চাই, আঁচিল আপনার হয়ে থাকলে ভয়ের কোনো কারণ নেয়। তবে যদি আঁচিল অস্বাভাবিক আকার নেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।