সম্মানিত পাঠক, আপনি কি হেবা দলিল খরচ কত ও হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই হেবা দলিল খরচ কত তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে হেবা দলিল খরচ কত তা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি হেবা দলিল কি বাতিল করা যায়, হেবা দলিল কি, হেবা দলিল ফিস পরিশোধের উপায়, হেবার ঘোষণাপত্র দলিল কি বাতিল করা যায় ইত্যাদি সহ হেবা দলিল সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে হেবা দলিল সম্পর্কে কিছু তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা – হেবা দলিল
হেবার ঘোষণা পত্র দলিলটি হচ্ছে শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য ব্যবহৃত একটি দলিল। এই দলিলটি সম্পাদন করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে তা সম্পাদন করতে হয়। এমন কিছু সম্পর্ক আছে যে সকল ব্যক্তি অর্থাৎ ১৪ জন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির সাথে এই দলিলটি সম্পাদন করা যায় না। এটি এমন একটি দলিল যার কোন শর্ত চলে না।
হেবার ঘোষণা পত্র কি
হেবার ঘোষণা পত্র হচ্ছে মূলত এমন একটি দলিল, যা নিরশর্তে দিয়ে দিতে হয় এবং যিনি দলিল দাতা উনাকে দলিল গ্রহীতা কে হেবাকৃত সম্পদ এর দখল পজিশন সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হয়। জেনে রাখা ভালো যে, হেবার ঘোষণা পত্র দলিলটি শুধুমাত্র মুসলিম ধর্মালম্বীদের মধ্যেই সম্পাদিত হয়ে থাকে।
হেবার ঘোষণা পত্র দলিল এবং হেবাবিল এ্যাওয়াজ দলিল দুইটা ভিন্ন ভিন্ন দলিল অনেকে এই দুইটি দলিল একই দলিল মনে করে বসেন, তবে দুইটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হেবার ঘোষণা পত্র দলিলটি হচ্ছে নিঃশর্তে দান পক্ষান্তরে হেবাবিল এ্যাওয়াজ হচ্ছে শর্ত যুক্ত একটি দলিল। অতএব এই দুইটি দলিল কোনভাবেই একই রূপ ধরার অবকাশ থাকে না।
হেবা দলিল খরচ কত
হেবার ঘোষণাপত্র মৌখিকভাবে দেওয়া চলে না। হেবার মন স্থির করলে তা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে এবং উক্ত জমিটি গ্রহীতা কে বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন হয়। আর এই রেজিস্ট্রেশন খরচ চলুন আমরা দেখে নিই-
- রেজিস্ট্রেশন ফ্রি: ১০০/= (দফা-এ)।
- স্ট্যাম্প সুল্ক: ১০০০/= এক হাজার টাকা [দফা-৩২(!)]।
- স্থানীয় সরকার কর: এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
- উৎসে আয়কর: এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
- মূল্য সংযোজন কর: এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
- ই ফি: ১০০/= ১০০ টাকা।
- এন ফি: এক পৃষ্ঠার জন্য প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট ২৪ টাকা।
- নকলনবিশগণের: এক পৃষ্ঠার জন্য প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট ৩৬ টাকা।
- হলফনামা: নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৩০০ টাকার নিয়ে হলফনামা প্রিন্ট করে সেটা দলিলের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে।
- কোর্ট ফি: সম্পত্তি হস্তান্তর (এল.টি) নোটিসের আবেদনপত্রে দশ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে।
হেবা দলিল ফিস পরিশোধের উপায়
দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবতীয় ফিস সমূহ স্থানীয় সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি শাখায় জমা প্রদান করতে হবে-
- একটি পে অর্ডারের মাধ্যমে ১-২১৬১-০০০০-১৮২৬ এই কোড নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফি, ই ফি, এন ফি, একসাথে জমা প্রদান করতে হবে।
- এন.এন.ফি নগদে অফিসে জমা প্রদান করতে হবে।
হেবার ঘোষণাপত্র দলিল কি বাতিল করা যায়
জেনে রাখা ভালো যে, কোন দলিল একবার সম্পাদিত হয়ে গেলে তা আর বাতিল করা সম্ভব নয়, কোন অবস্থাতেই নয়। তাহলে এখন আপনার মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে যে, দলিল বাতিলের মামলা, দলিল বাতিল এসব শব্দের উদ্ভব কিসের জন্য হলো-আসলে বিষয়টি হলো কোন দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর তা আর বাতিল হয় না।
বরং আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত দলিলটি রোহিত করণ করা হয় অর্থাৎ যে দলিলটির উপরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেই দলিলটির কার্যক্ষমতা হ্রস করা হয়। যার ফলে সেটাকে আমরা দলিল বাতিল করণ প্রক্রিয়া অথবা দলিল বাতিল বলে থাকি।
হেবা দলিল কি নামজারি করা যায়
জ্বি হ্যাঁ! হেবার ঘোষণা পত্র দলিল দিয়ে উক্ত দলিলের গ্রহীতা নামজারির আবেদন করতে পারে। অন্য সকল দলিল যেভাবে নামজারি করা হয় ঠিক একই ভাবে এই দলিলটিরও নামজারি করা যায়। তবে একটা বিষয়ে বেশ সতর্কতা জারি রাখতে হবে সেটা হচ্ছে, উক্ত জমির দাতা যদি আগেই অন্য কোন গ্রহীতাকে জমিটি বিক্রয় করে দেয় তাহলে এক্ষেত্রে আপনার নাম জারিটি বাধাগ্রস্ত হবে।
হেবার ঘোষণা পত্র দলিলের শর্ত কি কি
কোন বিনিময় ছাড়াই দলিল এর দাতা দলিল যথাসম্ভব সম্পাদন করতে পারবে তবে এক্ষেত্রে তা রেজিস্ট্রি ঘোষণার মাধ্যমে হতে হবে। উক্ত দলিলের গ্রহীতা হেবার ঘোষণাপত্রটি গ্রহণ করতে হয়। দলিল এর দাতা হেবা কৃত সম্পত্তিটি মৌখিক, লিখিত এবং সরজমিনে দখল বুঝিয়ে দিতে হয়।
হেবার ঘোষণাপত্র দলিল কখন বাতিল করা হয়
হেবার ঘোষণা পত্র দলিল, উক্ত দলিলের গ্রহীতাকে দাতা উক্ত জমিটির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বেই দলিলটি বাতিল করার অধিকার রাখে। কারণ এ দলিলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে দলিলদাতা গ্রহীতাকে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে হবে।
- দাতা দলিল সম্পাদন করতে ইচ্ছুক নয় তবুও জোরপূর্বক দলিল সম্পাদনে বাধ্য করলে।
- দাতাকে ভয়ভীতি প্রলোভন দেখিয়ে উক্ত দলিল সম্পাদন করলে।
- দাতা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার পরে দলিল সম্পাদন করা হলে
- হেবার ঘোষণা পত্রের শর্ত সময় হোক পালনে ব্যর্থ হলে।
- দলিল দাতার আগে গ্রহীতা মৃত্যুবরণ করলে।
- উক্ত জমিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে।
কতটুকু সম্পদ হেবার ঘোষণা করা যায়
একজন মুসলিম ব্যক্তি তার মোট সম্পদের, তিন ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি হেবা, দান, উইল, ঘোষণা করতে পারবে। তবে এর বেশি পরিমাণে হস্তান্তর করা আইনত বৈধ হবে না। তার মোট সম্পত্তি তিন ভাগ করে এক ভাগ হেবা করতে পারবে এবং বাকি দুইভাগ তার মৃত্যুর পর, তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশগান এর মধ্যে ইসলামিক আইন অনুসারে বন্টন হবে। তবে উক্ত ব্যক্তি তার সম্পত্তির পুরা অংশ চাইলে সে বিক্রি করতে পারে।
হেবার ঘোষণাপত্র দলিলটি নিছক একটি দান দলিল। যা কোন কিছুর বিনিময় সম্পাদন করা হয় না। বরং এটি ঘোষণার মাধ্যমে দাতা গ্রহিতাকে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে থাকে। তবে দাতা চাইলেই তার পুরো সম্পত্তি দান বা হেবা করতে পারে না। যদি করে বসে তাহলে সেটি বৈধ হবে না। আর একটি একটি মুসলিম পারিবারিক আইন এর বিধি-বিধান। যা শুধুমাত্র মুসলিম ধর্মালম্বিদের মধ্যেই সম্পাদিত হয়ে থাকে।
এই দলিলটি অবশ্যই রেজিস্টিকৃত এবং ঘোষণার মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে। তাছাড়া মৌখিকভাবে এর কোন ভিত্তি নেই।
হেবা দলিল সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে হেবা দলিল খরচ কত এবং হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় সেই সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার হেবা দলিল খরচ কত তা নিয়ে এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে হেবা দলিল খরচ কত এবং হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।