সম্মানিত পাঠক, আপনি কি হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী জেনে নেওয়ার পাশাপাশি হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময়, হেবা দলিল যাদের করা যাবে এবং হেবা দলিল বাতিল না হওয়ার কারণ জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে হেবা দলিল বাতিল সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা
হেবা দলিল বাতিল নিয়ে প্রায় অনেকেরই মাঝে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন জাগে। উদাহরণ হিসেবে মনে করুন আপনারা ২ ভাই বিদেশে থাকেন আর এক ভাই দেশে থাকে। এখন দেশে যেই ভাই থাকে সেই ভাই আপনার মা-বাবার সমস্ত কথা শুনে এবং তাদের যত্ন করত । এখন আমাদের অনুপস্থিতিতে সকল সম্পত্তি রয়েছে সবগুলো তার নামে লিখে নিয়েছে।
কিন্তু এই দলিল বাতিল করার পিছনে আপনাদেরকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। তো বন্ধুরা আসুন এর সম্পর্কে আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা একটু মনযোগ সহকারে পড়ুন।
হেবা দলিল কাকে বলে
কোন মানুষকে আপনার জমি দিয়ে দিবেন অথবা দান করবেন। আপনি সুস্থ মস্তিষ্কে এবং কোন মানুষের চাপ প্রয়োগ করা ছাড়াই। নিজ ইচ্ছায় খুশি হয়ে একজন মানুষকে যেই জমিটি দান করবেন তাকেই মূলত হেবা দলিল বলে। এই সেবাকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায় যথা বাংলা ভাষায় দান।
ইংরেজিতে গিফট এবং আরবি ভাষায় হচ্ছে হেবা। দান মূলত কোন অসহায় মানুষ রয়েছে আপনার অনেক জমি এবং সম্পদ রয়েছে সে ক্ষেত্রে আপনি দয়া করে যদি কিছু ওই অসহায় মানুষকে দেন তাকেই মূলত দান বলা হয়।
হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী
হেবা দলিল বাতিল হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যেগুলো আমাদের সকল্কেই জেনে রাখতে হবে। তাহলে চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে নিচের অংশ থেকে হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্ত কি কি তা জেনে নেওয়া যাক–
পিতা ও মাতার জমি যদি কোন সন্তান কোন বিনিময়ের মাধ্যমে সেটি নেওয়ার আগ্রগ প্রকাশ কিংবা উক্ত জমিটি নেয়ার চেষ্টা করে এবং আপনি যদি আদালতে মামলা করার পর সেটি অতি সক্রিয়ভাবে প্রমাণ করতে পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত জমির হেবা দলিলটি আইনগত ভাবে বাতিল করা হবে।
ভয় দেখিয়ে অর্থাৎ মানসিকভাবে অত্যাচার করে কেউ যদি হেবার করে নেয় এবং তারপরে আপনি আদালতে মামলা করে উক্ত বিষয়টি প্রমান করতে পারেন তাহলে সেই হেবার দলিলটি বাতিল হয়ে যাবে।
দাতা যদি নাবালক কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে থাকে, আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনার জমি যাকে দিয়েছেন তার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হলে সেটা কার্যকর হবে না।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে জমির মালিক ব্যাংক থেকে প্রচূর পরিমাণে ঋণ নিয়ে রেখেছে। সেই ঋণ কোনভাবেই পরিশোধ করতে পারছেন না, এমতবস্থায় তিনি দেশের বাইরে পালিয়েছেন। তখন উক্ত ব্যক্তি দেউলিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে আর তখন সেক্ষেত্রে হেবা দলিল কার্যকর হবে না।
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের জমি খারাপ উপায়ে দখল করে রেখেছেন এবং সেই জমির মালিকানা হওয়ার জন্য তার কোন আত্মীয়কে হেবা করে দেয়। এক্ষেত্রে উক্ত জমিটির হেবা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম কেননা উক্ত জমিটির মালিক আসল না নকল সেটি যাচাই বাছাই করে নকল হলে হেবা দলিল বাতিল হয়ে যাবে।
হেবা দলিল যাদের করা যাবে
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে হেবা দলিল যাদের করা যাবে। তাই আমরা পোষ্টের এই অংশে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে হেবা দলিল যাদের করা যাবে বা যাদেরকে করতে পারবেন তা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তো চলুন আসুন কতজন মানুষকে বা কাদেরকে হেবা দলিল করা যাবে তা জেনে নেওয়া যাক। হেবা দলিল সাধারনত মোট ১৪ ধরণের মানুষকে করা যাবে যথাঃ
- ছেলে
- মেয়ে
- নাতি
- নাতনি
- বাবা
- মা
- দাদা
- দাদি
- নানা
- নানী
- বোন
- ভাই
- ছেলের- মেয়ে অথবা ছেলেকে
- মেয়ের-ছেলে অথবা মেয়েকে
এক কথায় বলতে গেলে আপনার রক্তের সম্পর্ক ব্যতীত অন্য কোন মানুষকে যদি সেবা করেন তাহলে সেটি আইনযোগ্য হবে না । তবে কেউ যদি এই আইন না মেনে কাজটি করে থাকেন, এরপরে তার নিজের সম্পর্কিত কোন আত্মীয় মামলা ঠুকে দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত হেবা দলিলটি বাতিল হয়ে যাবে।
কিন্তু যারা প্রবাসী তারা যখন দেশে কোন জমি ক্রয় করে সেসময় দলিল লেখকের নিকট পরিস্কারভাবে আলোচনা করে নেওয়ার পরে টাকা পাঠিয়ে দেয়। তখন আইনজীবীরা টাকা নিবে তাই এলাকার কোন ব্যক্তিকে দানপত্র হিসেবে এটি মঞ্জুর করে দেয়।
কারণ হেবা দলিল করার খরচ খুবই কম জমির রেজিস্ট্রি করার থেকে। তাই যারা জমি রেজিস্ট্রি করে তারা টাকার লোভে এই কাজটি করে। কিন্তু আইনের দিক থেকে এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
হেবা দলিল বাতিল না হওয়ার কারণ
কোন জমি যদি হেবা করা হয়ে যায় তারপরে যদি উক্ত জমিটির আকার বা রূপ পরিবর্তন করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত জমিটি আর বাতিল করা যাবে না। যেমন ধরে নিন আপনি আপনার কোন পরিচিত কারও কাছে নিজের জমিটি হেবা বা দান করেছেন। তারপরে সেই ব্যক্তি উক্ত জমি কেটে বিশাল পুকুর তৈরি করেছেন। তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার দান করা জমিটি আইনগত ভাবে বাতিল করা সম্ভব নয়।
আবার মনে করুন আপনি কোন দালান বা বাড়ি হেবা করেছেন এবং তারপরে ভূমিকম্পের কারণে আপনার বাড়িটি ভেঙ্গে গেছে এক্ষেত্রে আপনি চাইলেও এটি আর বাতিল করতে পারবেন না। কোন জমি হেবা দলিল করার পরে যদি দাতা কিংবা গ্রহীতার মধ্যে কেউ একজন মারা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে হেবা দলিল বাতিল করা সম্ভব নয়।
হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময়
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময় কোনটি। তাই আমরা পোষ্টের এই অংশে আপনাদের হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময় জানিয়ে দিব। ধরুন আপনি কারও জমি হেবা দলিল করেছেন এবং তারপরে আপনার মনে হয়েছে যে এটি করা তার ঠিক হয়নি।
এক্ষেত্রে আপনি যদি আদালতে একটি মামলা করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই হেবা করার ১ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। তাই আপনি যদি এইক্ষেত্রে মামলা করতে চান তাহলে আপনাকে ১ বছের মধ্যেই মামলা করতে হবে। তবে আমার মতে আপনি চাইলে ১৫ দিন থেকে ১ এক কিংবা ৬ মাস এর মধ্যে করতে পারেন।
হেবা দলিল বাতিল সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী ও হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময় নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী এবং হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময় নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।