হাতিশুর ভেষজ একটি গাছের নাম। বাড়ির চারপাশে প্রায় এ গাছ চোখে পড়ে অনেকেরই। তবে আমরা জানি কি এ গাছ আমাদের কি কি উপকারে আসে। জানা না থাকলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ুন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে হাতিশুর গাছের উপকারিতা। এছারাও আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন হাতিশুর গাছ খেলে কি হয়, এ গাছের শিকড়ের উপকারিতা কি, খাওয়ার নিয়ম এবং এ গাছের অপকারিতাসহ আরও বেশ কিছু তথ্য জানতে পারবেন। তো চলুন বিস্তারিত শুরু করা যাক।
হাতিশুর গাছের উপকারিতা
গাছের নাম হাতিশুর, নামটা অনেকের কাছে অদ্ভূত মনে হয়। পুরোনো বাড়ি, ঝোপঝাড় অথবা রাস্তার ধারে আগাছা গাছের মাঝে এ গাছের বেড়ে ওঠা। এ গাছ এক থেকে দেড় ফুট মতো লম্বা হয়ে থাকে এবং গাছের কান্ড নরম, রোমযুক্ত ও ফাঁপা। সারাবছর এ গাছে ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুল দেখা যায়। এ গাছকে ঔষধি গাছ বলা হয়ে থাকে। বিভন্ন ঘরোয়া চিকিৎসায় এ গাছের গুনাগুন লক্ষ্য করা যায়। এ গাছের শেকড় এবং পাতার রস বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। আমরা অনেকেই হাতিশুর গাছ চিনি, তবে এ গাছের সঠিক উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারনা নেয়। তাই চলুন জেনে নিন হাতিশুর গাছের উপকারিতা সম্পর্কে।
- শরীরের যেকোনো অংশের ফোলাভাব দূর করতে হাতিশুর গাছ বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীরের ফোলাভাব দূর করতে এ গাছের পাতা ব্লেন্ড করার পর, ব্লেন্ড করা পাতা হালকা গরম করে লাগাবেন
- অনেক সময় আমাদের শরীরে ছত্রাকের আক্রমনের ফলে লাল চাকা দাগ দেখা যায়। এ সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করবেন হাতিশুর গাছের পাতা। হাতিশুর গাছের পাতার রস লাল চাকা দাগ থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে খুব সহজেই।
- বিষাক্ত পোকামাকড়ের যন্ত্রনা কমাতে সাহায্য করে থাকে হাতিশুর গাছ। এ গাছের পাতার রস কামড়ের স্থানে লাগালে যন্ত্রনা অনেকাংশে কমে আসে।
- সর্দির সমস্যা দূর করতে হাতিশুর গাছ খুবই উপকারী। যাদের সর্দির সমস্যা রয়েছে তারা হাতিশুর গাছের পাতার রস বের করে, সে রস খাবেন।
- কাটা ছেঁড়া স্থানে হাতিশুর গাছের পাতার রস দিবেন, কাটা স্থান দ্রুত সারাতে কাজ করে থাকে এ গাছের পাতার রস।
- টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাতিশুর গাছের পাতা কার্যকারী একটি ওষুধ। এ পাতার রস গরম করে পানির সাথে খাওয়ার ফলে টাইফয়েড দ্রুত ভালো হয়।
- একজিমায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাতিশুর গাছের পাতা খুবই উপকারী। এ গাছের পাতা থেতলে আক্রান্ত স্থানে লাগালে একজিমা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
- ব্রনের সমস্যা সমাধানে কার্যকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো হাতিশুর গাছ। এ গাছের পাতা ও কচি ডাল পিসে ব্রণের উপর লাগালে ব্রনের সমস্যার সমাধান হয় এবং নতুন ব্রন আর বের হয় না।
হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
হাতিশুর গাছের শিকড় আমাদের স্বাস্থের জন্য বেশ উপকারী। এ গাছের শিকড় আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই শুনে থাকলে, সঠিকভাবে জানা নেয় এ গাছের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন সঠিক তথ্য জেনে নিন হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে।
- আমাদের শরীরে ব্যকটেরিয়াজনিত কোনো ক্ষত বা কোথাও আঘাত প্রাপ্ত ক্ষত সারাতে হাতিশুর গাছের শিকড় খুবই উপকারী। এ গাছের শিকড় থেকে রস বের করে ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষত দ্রুত সারে।
- দাঁতের মাড়িতে সমস্যা অথবা ফোলা ভাব দূর করতে ব্যবহার করবেন হাতিশুর গাছের শিকড়। এ গাছের শিকড় চিবিয়ে খেলে দাঁতের মাড়ির ফোলাভাব কমে আসে।
- যৌনদুর্বলতার সমস্যায় খাবেন হাতিশুর গাছের শিকড়। এ গাছের শেকড় থেকে রস বের করে পানির সাথে মিশাবেন, তার সাথে সামান্য মধুও মিশাবেন এরপর খাবেন।
- হাতিশুর গাছের শিকড়ের রস লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।
- মূত্রনালীর ইনফেকশন দূর করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে হাতিশুর গাছের শিকড়।
- হাতিশুর গাছের শিকড় থেকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা গ্রহনের ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে হাতিশুর গাছের শিকড়ের ভূমিকা রয়েছে। তাই পেটের সমস্যা দেখা দিলে এ গাছের শেকড় থেকে রস বের করে খাবেন।
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশুর খুবই উপকারী একটি ভেষজ গাছ। এ গাছের পাতা ও শেকড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হাতিশুর গাছের শিকড় খাবেন, তবে অনেকের জানা নেয় এ গাছের শিকড় খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি হাতিশুর গাছের শিকড়ের সঠিক উপকার পেতে অবশ্যই জেনে নিতে হবে, হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
হাতিশুর গাছের শিকড় যদি আপনি খেতে চান, তাহলে আপনাকে হাতিশুরের বয়স্ক গাছ বাছাই করতে হবে। যে গাছে ফুল রয়েছে, সে গাছের শিকড় আপনি খাওয়ার জন্য নির্বাচন করবেন। এরপর পর গাছ গুলো তুলে শিকড় সংগ্রহ করে ব্যবহার করবেন। স্বাস্থ উপকারিতা পেতে কয়েকটি নিয়মে হাতিশুর গাছের শিকড় খেতে পারেন।
হাতিশুর গাছের শিকড় পিসে রস বের করে খাবেন। এ রস খাওয়ার ফলে শরীরের যেকোনো ফোলাভাব দূর হয়, পেটের সমস্যা ভালো হয় এছারাও বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় এ গাছের শিকড় পানিতে দিয়ে সেদ্ধ করে ছেঁকে পানিটুকু খাবেন। এছারাও হাতিশুর গাছের শিকড়ের রস বের করে মধুর সাথে খেতে পারেন অনেক উপকার পাবেন।
আর হাতিশুর গাছের শিকড়ের সঠিক উপকার পেতে এটি সকালে খালি পেটে খাবেন। খালি পেটে এ গাছের শেকড়ের রস খাওয়া স্বাস্থের জন্য বেশি উপকারী। যারা হাতিশুর গাছের শিকড় খেতে চাইছেন তারা এ নিয়মে খাবেন।
হাতিশুর গাছের অপকারিতা
হাতিশুর গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। কিন্তু এ গাছের উপকারিতা থাকলেও, বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। সঠিক নিয়মে এ গাছ ব্যবহার করলে তেমন কোনো অপকারিতা লক্ষ্য করা যায় না। তবে একেবারে যে নিরাপদ তা নয়, কিছু ক্ষেত্রে বা অতিরিক্ত ব্যবহারে কয়েক ধরনের ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক হাতিশুর গাছের অপকারিতা সম্পর্কে।
- গর্ভাবস্থায় হাতিশুর গাছের পাতা, শিকড়, মুল বা কান্ড কোনো কিছু খাওয়া ঠিক নয়। এতে গর্ভবতী মা ও শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
- হাতিশুর গাছের পাতার রস অতিরিক্ত সেবনের ফলে ডায়ারিয়াজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত মাত্রায় হাতিশুর গাছ সেবনের ফলে শরীরের রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- বাচ্চাদের জন্য এ হাতিশুর গাছ খাওয়া নিরাপদ নয়। তাই বাচ্চাদের এ গাছের ব্যবহার থেকে দূরে রাখুন।
- ফসলের জমিতে এ গাছের জন্ম হলে ফসলের ক্ষতি করে বসে এ গাছ। তাই ফসলের জমিতে এ গাছ বের হলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে।
এ ছিল হাতিশুর গাছের অপকারিতা। এ গাছের অপকারিতা থাকলেও, উপকারিতা বেশি রয়েছে। তাই সঠিক নিয়মে হাতিশুর গাছের পাতা, শেকড় ব্যবহার করুন বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতা পাবেন।