সম্মানিত পাঠক, আপনি কি রেকর্ড সংশোধন কি ও জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে রেকর্ড সংশোধন কি তা জেনে নেওয়ার পাশাপাশি জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়, ভূমি রেকর্ড কি, ভূমি রেকর্ডের জন্য কি কি লাগে, রেকর্ড সংশোধন করতে কত সময় লাগে ইত্যাদি জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে রেকর্ড সংশোধন সম্পর্কে কিছু তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা – রেকর্ড সংশোধন
ভূমি মানুষের একটি স্থায়ী সম্পদ। এই স্থায়ী সম্পদের যদি দখল পজিশন কিংবা কাগজপত্র এর কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে মাথার উপর অনেক বোঝা চেপে থাকে। যেন কোন কিছুই ভালো লাগে না, মন বসে না মনে হয় কোন এক অজানা কিংবা জানা সমস্যায় সকল সময় তাড়া করে বেড়ায়। তাই বলবো আপনার নিজ ভূমি এর সকল কাগজপত্র আপটেড রাখুন এবং ভূমি বিষয়ক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত থাকুন।
রেকর্ড ভূমি মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই রেকর্ড যদি কোন কারণবশত ত্রুটি হয়ে যায় তাহলে সেটা কোন মালিকের জন্যই সুখবর বয়ে আনে না, বরঞ্চ চিন্তার কারণ হয়। আজ আমরা আপনাদের চিন্তামুক্ত করার জন্যই উক্ত বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। যাতে করে আপনার রেকর্ডিও কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে তা কিভাবে সমাধান করবেন কোথা গেলে এর সমাধান পাবেন এসব নিয়েই মূলত আজকের আলোচনা।
ভূমি রেকর্ড কি
ভূমি রেকর্ড হচ্ছে সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি মন্ত্রণালয় এর জরিপ বিভাগ কর্তৃক একটি কার্যক্রম। যাহা একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট স্থানে ভূমি মালিকদের মালিকানা প্রমাণস্বরূপ একটি নির্দিষ্ট আয়তনের মৌজাভিত্তিক মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান, দাগ নম্বর এবং মালিকের বৃত্তান্ত উল্লেখপূর্বক যে রিপোর্ট তৈরি করা হয় তা হয় হচ্ছে ভূমি জরিপ।
ভূমি রেকর্ডের জন্য কি কি লাগে
ভূমি রেকর্ডের জন্য যা যা প্রয়োজন তা নিম্নে উল্লেখ করে দেওয়া হলঃ
- রেজিস্ট্রি কৃত দলিল থাকতে হবে।
- পূর্বের রেকর্ডীয় খতিয়ান থাকতে হবে।
- জমিটি নামজারি/মিউটেশন/খারিজ থাকতে হবে।
- ওয়ারিশান সম্পত্তি হলে বন্টন-নামা দলিল থাকতে হবে।
- ওয়ারিশান সনদ সংগ্রহে রাখতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ কালেক্ট করতে হতে পারে।
- ভূমি উন্নয়ন কর এর (হাল-সন) দাখিলা সংগ্রহ করতে হবে।
- জমিটির আগের মালিক আদিবাসী হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি পত্র রাখতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নথিভুক্ত করে রাখতে হবে।
রেকর্ড সংশোধন কি
রেকর্ড সংশোধন হচ্ছে পূর্ব ভূমি মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন ভূমি মালিকের নাম সংযোজন করাই হচ্ছে রেকর্ড সংশোধন। রেকর্ড সংশোধনের প্রক্রিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে-
- নামজারি/ মিউটেশন/খারিজ/জমা ভাগ/ নাম পর্তন (একই জিনিস) এর মাধ্যমে।
- ভূমি মন্ত্রণালয়ে সরকার কর্তৃক পরিচালিত রেকর্ড সংশোধন।
জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই পোষ্টের এই পাঠে তুলে ধরেছি। আসুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আমরা এ বিষয়ে ক্লিয়ার ধারণা জেনে নেওয়া যাক।
করণিক কোন কারণবশত ভুল হয়ে গেলে এক্ষেত্রে প্রথমত আপনাকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিকট একটি আবেদন করতে হবে। একমাত্র তিনিই (ভূমি সহকারী কমিশনার) তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন ভালোভাবে সঠিকতা বিবেচনা করে ভুল সংশোধন করে থাকেন।
এর পাশাপাশি রেকর্ড সংশোধন বিষয়ক কোন কারণবশত ভুল হয়ে থাকলে সেতা আপনাকে দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে সার্ভিস ট্রাইবুনাল এর মাধ্যমে একটি সক্রিয় মামলা করতে হবে তারপরে সেই ভুল সঠিকতা যাচাই করে সংশোধন করে নিতে হয়। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় তা জানতে পেরেছেন।
রেকর্ড অন্যের নামে হলে করণীয়
জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গেলে প্রথমেই আপনার করণীয় কোন ব্যক্তির নামে জমিটি রেকর্ড হয়েছে তা নিশ্চিত করা। এরপর তার সাথে প্রয়োজনে কথাবার্তা বলে বিষয়টা তাকে জানানো। এবং তার কাছে একটি বিষয় পরিস্কার ভাবে ভালোমত জানতে হবে যে কোন ভিত্তিতে বা কি কারণে সেই জমিটির রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে।
যদি সে রেকর্ড করে থাকে তাহলে তার স্বপক্ষে সে প্রমাণপত্র প্রদান করবে। তবে রেকর্ড কর্তৃপক্ষের যদি কোন কারণবশত ভুলে হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় হল তা রেকর্ড সংশোধন মামলার করে সংশোধন করে নেওয়া।
জমিটি রেকর্ড বোঝার উপায়
আপনার খতিয়ানে যদি জমির পরিমাণ কম থাকে তাহলে আপনাকে পার্শ্ববর্তী দাগের মালিকগণের খতিয়ান দেখে নিতে হবে কার নামে আপনার জমির অংশটুকু বেশি রেকর্ড হয়েছে। অনেক সময় খতিয়ানে ঠিক থাকে অথচ দাগে জমির পরিমাণ কম থাকে। দুই ক্ষেত্রেই আপনাকে পার্শ্ববর্তী দাগ সমূহের খতিয়ান এবং ওয়ার্কিং পর্চা সংগ্রহ করে তা হতে তথ্য জেনে নিতে হবে।
উক্ত মালিক বর্গ যদি আপনাকে খতিয়ান ও ওয়ার্কিং পর্চা দিতে অ-সমতি জানাই তাহলে জেলা রেকর্ডরুম বা সেটেলমেন্ট অফিস হতে দাগ নাম্বার প্রদান করে ও সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান করে উক্ত কাগজদয় সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি নিজে নিজে যদি না পারেন, তাহলে এ বিষয়ে যারা এক্সপার্ট অর্থাৎ আপনার এলাকার বিভিন্ন দলিল লেখক এবং ভূমি জরিপ কারকদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তাদেরকে বিষয়টি জানালে তাহারা আপনাদেরকে যথাযথ কাগজ সংগ্রহ করে দিবে।
করণিক ভুল গুলো কি কি
- ভূমি মালিকের নাম ঠিকানাই ভুল।
- দাগ নম্বর ভুল।
- জমির হিসাব ভুল।
- জমির অংশ ভুল।
- বানান ভুল। ইত্যাদি
রেকর্ড সংশোধন মামলায় কি কি লাগে
রেকর্ড সংশোধন মামলায় যা যা লাগে তা নিম্নে উল্লেখ করে দেওয়া হলঃ
- রেজিস্ট্রিকৃত দলিল মামলা কৃত জমির।
- রেকর্ডিও খতিয়ান।
- নামজারি খতিয়ান।
- ওয়ারিশান সনদ।
- working পর্চা বা মাঠ পর্চা।
- সংশ্লিষ্ট জমির মৌজা ম্যাপ।
- পার্শ্ববর্তী সকল দাগের নকশা খতিয়ান ওয়ার্কিং পর্চা।
- জাতীয় পরিচয় পত্র।
- একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী।
ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা গুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে নেওয়া উচিত। নিজের এবং পরিবারের গাফেলতির কারণে অনেক সময় উক্ত ভুলগুলো হয়ে থাকে অতএব জমি জায়গার কাগজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখি এবং ভোগান্তি মুক্ত এবং ত্রুটিমুক্ত স্থায়ী সম্পদ গড়ে তুলি। আমাদের ব্রতই হোক এমন ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র সকল সময় আপডেট রাখবো ঝামেলা মুক্ত সম্পদ গড়বো।
সমস্যা হয়েছে! সমাধান অবশ্যই আছে। এর জন্য টেনশন না করে যথাযথ এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে যথাযথ মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। যদি আমার সম্পদ সঠিক ওয়েতে গড়ে তুলি তাহলে সাময়িক ভুলগুলো সময়ের ব্যবধানে অবশ্যই সমাধান হবে।
রেকর্ড সংশোধন সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে রেকর্ড সংশোধন কি এবং জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় সেই সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার জমির রেকর্ড সংশোধন নিয়ে এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে রেকর্ড সংশোধন কি ও জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।