রুই মাছ আমাদের সবার পরিচিত একটি মাছ। অনেকেই এ মাছ খেতে পচ্ছন্দ করে থাকে। তবে এ মাছ আমরা খেলেও জানি না এর সঠিক উপকারিতা। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো রুই মাছের উপকারিতা সম্পর্কে।
আজকেই এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়লে জেনে যাবেন রুই মাছের উপকারিতা সম্পর্কে। এছারাও জানতে পারবেন রুই মাছের বৈশিষ্ট, রুই মাছের ফুলকা কয়টি, রুই মাছের ফুলকার গঠন, রুই মাছের শ্রেণিবিন্যাস সহ রুই মাছ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ন তথ্যগুলো। তো চলুন তাহলে বিস্তারিত শুরু করা যাক।
রুই মাছের বৈশিষ্ট
বাঙালীদের মাছ প্রিয় একটি খাবার। আর মাছের মধ্যে রুই মাছ তো সবার প্রিয়। তাই এ মাছ বাঙালীরা প্রায় খেয়ে থাকে। তবে রুই মাছ আমরা খেলেও সঠিকভাবে আমরা এ মাছ চিনি না অনেকেই। তাই অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন রুই মাছের বৈশিষ্ট সম্পর্কে। জেনে নিন রুই মাছের বৈশিষ্ট সম্পর্কে।
- রুই মাছের আকৃতি চ্যাপ্টা হয়ে থাকে।
- রুই মাছের পিঠের দিকটা বাদামী বর্ণের ও পেট রুপালি সাদা রঙের হয়ে থাকে।
- রুই মাছের মুখ নিচের দিকে নেমে থাকে ও ঠোঁট ভিতরে ভাঁজ হয়ে থাকে।
- রুই মাছের আঁইশ প্রায় গোল, পাতলা ও চকচকে হয়।
- রুই মাছের চক্ষু ও কানকো প্রশস্ত।
- রুই মাছ হলো তৃণভোজী মাছ। এ মাছ জলজ উদ্ভিদ, শেওলা ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে।
- রুই মাছ সর্বচ্চো লম্বা হয় ২০০ সে.মি এবং এর ওজন সর্বোচ্চ ৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারনা করা হয়।
রুই মাছের ফুলকা কয়টি
ফুলকা প্রত্যেক মাছের খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি অঙ্গ। মাছ তার ফুলকার সাহায্য নিয়েই শ্বাস নেয়। তবে সব মাছ ফুলকার সাহয্যে শ্বাস নেয় না। কিছু মাছ ফুলকার সাহায্য ছাড়া শ্বাস নেয় কিন্তু বেশিরভাগ মাছ ফুলকার সাহায্য নিয়ে শ্বাস নিয়ে থাকে। রুই মাছেও ফুলকা রয়েছে। রুই মাছের ফুলকা কয়টি এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন।
রুই মাছে চার জোড়া ফুলকা রয়েছে। এ ফুলকার সাহায্যে রুই মাছ শ্বাস প্রক্রিয়া সংঘটিত করে থাকে। ফুলকাগুলোর সাহায্যে অক্সিজেন গ্রহন ও কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। এভাবে মাছ শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে। এজন্য মাছের ফুলকায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে মাছের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, চলাফেরা বন্ধ করে দেয় এবং মারা যায়। তাই ফুলকা মাছের খুবই গুরুত্বপূর্ন অংশ।
রুই মাছের ফুলকার গঠন
প্রত্যেক মাছে ফুলকা রয়েছে, মাছের শ^সন অঙ্গ হলো তার ফুলকা। আর প্রত্যেক মাছের ফুলকার গঠন দেখতে প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। রুই মাছের ক্ষেত্রেও তাই। রুই মাছের ফুলকার গঠন সুতোর মতো। দুটি সদ্যৃশ অর্ধাংশ নিয়ে প্রত্যেক ফুলকা গঠিত। প্রত্যেক অর্ধাংশকে বলা হয়ে থাকে হেমিব্রাঙ্ক বা অর্ধফুলকা। আর একসারি করে ফুলকা ল্যামেলা বহন করে থাকে প্রত্যেকটি হেমিব্রাঙ্ক। প্রত্যেকটি ফুলকা, ফুলকা আর্চ এ অবলম্বিত থাকে।
রুই মাছের শ্রেণিবিন্যাস
রুই মাছ আমাদের কাছে সবার পরিচিত একটি মাছ। এ মাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়, বাংলাদেশের অন্যতম মাছগুলোর মধ্যে রুই মাছ একটি। ভারতেও এ মাছ বেশ জনপ্রিয় লাভ করেছে। রুই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো, Labeo rohita। এ মাছের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে জেনে নিন।
রুই মাছের শ্রেণিবিন্যাস:
- Phylum (পর্ব): Chordata
- Sub-Phylum (উপপর্ব): Vertebrata
- Class (শ্রেণি): Actinopterygii
- Family (পরিবার): Cyprinidae
- Order (বর্গ): Cypriniformes
- Genus (গণ): Labeo
- Species (প্রজাতি): Labeo Rohitai
রুই মাছের উপকারিতা
রুই মাছ আমাদের সবার পচ্ছন্দের। তবে এ মাছ শুধু খেতে ভালো তা নয়, সুস্বাদু এ মাছের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থের জন্য উপকারী। পুষ্টিবীদদের মতে রুই মাছের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ই, ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিডসহ আরও বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান। যার কারনে নিয়মিত রুই মাছ খেলে আমাদের স্বাস্থের উন্নতি ঘটে। জেনে নিন রুই মাছের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরে কি কি উপকার করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: হৃদরোগের সমস্যা বর্তমানে প্রায় হতে দেখা যাচ্ছে, তাই এ রোগের ঝুঁকি কমাতে রুই মাছ খাদ্য তালিকায় রাখবেন। রুই মাছের মধ্যে থাকা ওমোগো-৩ ফ্যাটি এসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ ভালো রাখে: রুই মাছের মধ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যার ফলে এ মাছ খেলে হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ ভালো থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: রুই মাছ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে, শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ ভালো রাখে: রুই মাছ থেকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়, যা খাওয়ার ফলে স্নায়য়ুতন্ত্রের স্বাস্থ ভালো থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: রুই মাছ নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যার সমাধান হয়। রুই মাছের মধ্যে থাকা ফাইবার কোষ্ঠাকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
চোখের স্বাস্থ ভালো থাকে: বর্তমান সময়ে প্রায় অনেকের চোখের সমস্যা হতে দেখা যাচ্ছে। তাই চোখের স্বাস্থের উন্নতি ঘটাতে রুই মাছ খাবেন। এ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ’ চোখের স্বাস্থ ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: রুই মাছের মধ্যে থাকা ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের ত্বককে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে, যার ফলে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: রুই মাছের মধ্যে থাকা ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিড স্মৃতিশক্তি হারানোর ঝুঁকি কমায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
ওজন কমায়: যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন তারা পরিমিত রুই মাছ খাবেন। রুই মাছে কম ক্যালোরি রয়েছে যা খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ার সম্ভবনা থাকে না।
স্ট্রেশ দূর করে: রুই মাছের মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। যার ফলে স্ট্রেশ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং স্ট্রেশ দূর হয়।
গর্ভবস্থায় স্বাস্থ ভালো রাখে: রুই মাছের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছারাও গর্ভের সকল ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ হয় রুই মাছ খাওয়ার ফলে।
পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধের ভান্ডার হলো রুই মাছ, উপরের বলা উপকারিতা ছাড়াও আরও বেশ কিছু উপকারিতা এ মাছের মধ্যে রয়েছে। তাই স্বাস্থ ও সুস্থতার জন্য রুই মাছ আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ন যোগ হতে পারে।
লেখকের শেষ বক্তব্য
রুই মাছের বৈশিষ্ট্য – রুই মাছের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি রুই মাছের বৈশিষ্ট্য – রুই মাছের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।