বিড়াল আমাদের সবার পচ্ছন্দের। সখ করে আমরা অনেকেই বিড়াল বাড়িতে রাখি। তবে অনেক সময় বিড়াল আমাদের শরীরে আচর দিয়ে বসে। জানেন কি বিড়াল আচর দিলে কি করতে হবে? বিড়াল আচর দিলে কি করতে হবে যদি আপনার বিষয়টি জানা না থাকে তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে বিড়াল আচর দিলে কি করতে হয়। এছারাও আরো আলোচনা করা হয়েছে বিড়াল আচর দিলে কোনো ক্ষতি হয় কি না, এর নখের আচর কতটুকু বিপজ্জনক এবং বিড়াল আঁচড় দিলে কি দোয়া পড়তে হয়। তো চলুন বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বিড়াল আচর দিলে কি করতে হবে
জনপ্রিয় একটি পোষাপ্রানী হলো বিড়াল। সখের বসে আমাদেরে মধ্যে প্রায় অনেকেই বিড়াল পোষে। খুবই আদুরে স্বভাবের প্রানী হলো বিড়াল। মানুষের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি এরা বন্ধুত্ব করে ফেলে। বিড়াল আমরা সখের বসে পোষলেও এ প্রানী আমাদের শারিরিক ও মানসিক স্বাস্থের জন্য বেশ উপকারী বলেও গবেষনায় দেখা গেছে।
বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটালে দেহে প্রশান্তি আসে, ভালো ঘুম হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। তবে এ প্রানী আমরা পচ্ছন্দ করে, ভালোবেসে বাড়িতে রাখলেও অনেক সময় খেলার ছলে অথবা অন্য কোনো কারনে বিড়ালের আচর আমাদের শরীরে পড়ে যায়। তখন কি করবো আমরা ভেবে পায় না। তো চলুন জেনে নিন বিড়াল আচর দিলে কি করতে হবে।
বিড়াল আচর দিলে করণীয়: বিড়াল আচর দিলে প্রথমে দেখুন, বিড়ালের আচরে কেমন ক্ষত তৈরি হচ্ছে। ক্ষত যদি সামন্য হয় এবং রক্ত গড়িয়ে না পড়ে তাহলে ভয়ের কোনো কারণ নেয়। আর যদি ক্ষত স্থান গভির হয়, রক্ত গড়িয়ে পড়ে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগে ক্ষতস্থানটি জীবানুনাশক দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
জীবানু রোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকারী একটি উপাদান হলো সাবান পানি। তাই ক্ষতস্থান জীবানুমুক্ত করতে সাবান পানির সাহায্য নিন। ক্ষতস্থান যেমনি হোক না কেন ভালোভাবে সময় নিয়ে সাবান পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে, তাহলে জলাতঙ্কের জীবাণু দূর হয়ে যাবে খুব সহজে।
এবার ব্যকটেরিয়ার আক্রমন ঠেকাতে তরল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন। সেক্ষেত্রে স্যাভলন, ডেটল ইত্যাদি তরল এন্ডিবায়োটিক ব্যবহার করা বেশি ভালো। প্রাথমিক অবস্থায় এ পদ্ধতিগুলো ফলো করবেন।
এরপর আক্রান্ত স্থান ভালো করে খেয়াল রাখুন। ক্ষত স্থান যদি লাল হয়, ফুলে যায়, অতিরিক্ত ব্যাথা করে এবং রক্ত পড়তেই থাকে তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাবেন। অনেক সময় বিড়ালের আঁচর থেকে জ্বর আসে, বিশেষ করে বাচ্চাদের। তাহলেও বাড়িতে বসে থাকা যাবে না, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিড়াল আচর দিলে কি ক্ষতি হয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ততার মাঝে ভালোলাগা জাগায় ছোট্ট প্রাণী বিড়াল। ছোটদের খেলার সাথী হয়ে সঙ্গে থাকে বিড়াল। ছোটদের সাথে আমরা বড়রাও আদর করে দিই বিড়ালকে। তবে এই আদরের ছলে বা খেলার ছলে হঠাৎ করে বিড়াল তার নখ দিয়ে আমাদের আচর দিয়ে বসে। তখন আমরা ভয় পেয়ে যায় এবং ভেবে থাকি কোনো ক্ষতি হবে কি বিড়ালের কামড়ে? সত্যি কি বিড়ালের আচরে কোনো ক্ষতি হয়? বিস্তারিত জেনে নিন।
ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ: বিড়ালের নখের আচরের এক ধরনের সমস্যার নাম হলো ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ। বিড়ালের নখের মধ্যে থাকা এক ধরনের ব্যকটেরিয়া থাকার কারণে এটি হয়ে থাকে। বিড়ালের নখের আচরে এ সমস্যা মানুষের শরীরে হয়ে থাকলে আচরের স্থান লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এ সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ সমস্যার লক্ষনগুলো হলো জ¦র, ক্লান্তি, মাথাব্যাথা ইত্যাদি।
এলার্জি: বিড়ালের আচরে অনেক সময় এলার্জির সমস্যা হতে দেখা যায়। বিড়ালের নখের মধ্যে জীবাণু থাকার কারণে এলার্জির সমস্যা হতে দেখা যায়। ফলে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়, চুলকানি ও প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
টিটেনাস: বিড়াল আচর দিলে সরাসরি টিটেনাস হয় না। তবে আঁচরের জন্য আক্রান্ত স্থানে টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে এবং টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। টিটেনাস হলে শ^াসকষ্ট এবং ঘারের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
বিড়ালের আচরের জন্য মানবশরীরে উপরের বলা ক্ষতিগুলো হয়ে থাকে। বিড়ালের আক্রমনে মারাত্মক কোনো ঝুঁকি থাকে না যদি এটি অবহেলা না করেন। গবেষনা থেকে প্রমানিত প্রায় ৪০ শতাংশ বিড়াল তাদের শরীরে ব্যকটেরিয়া বহন করে থাকে। আর এ ব্যকটেরিয়া গুলো বিড়ালের আচরের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে, বিভিন্ন স্বাস্থ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বিড়ালের আচরে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিড়ালের নখের আচর কি বিপজ্জনক
ছোট অথবা বড় সবাই আমরা বিড়াল পচ্ছন্দ করে থাকি। বিড়ালের প্রতি আলাদা এক ভালোলাগা আমাদের সবার মধ্যে রয়েছে। তাই আমরা অনেকেই এ প্রানী বাড়িতে রাখি। তবে অনেক সময় বিড়াল আমাদের শরীরে নখের আচর দিয়ে বসে। কিন্তু বিড়ালের নখের আচর কি বিপজ্জনক? বিস্তারিত জেনে নিন বিড়ালের নখের আচর মানবশরীরের জন্য বিপজ্জনক কি না।
বিড়ালের নখের মধ্যে স্ট্যাফিলোককাস ও স্ট্রেপ্টোককাসসহ বিভিন্ন ব্যকটেরিয়া থাকতে পারে। যার কারণে বিড়াল নখ দিয়ে আচর দিলে, নখে থাকা ব্যকটেরিয়া মানব ত্বকে প্রবেশ করে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ত্বকে ফোলাভাব, লালচে ভাবসহ ত্বকে প্রচন্ড ব্যাথা হতে পারে। আবার ত্বকের সংক্রামন বেশি হলে হলে হাড় পর্যন্ত সংক্রামন পৌঁছে হাড়ের ক্ষতি করে। এছারাও বিভিন্ন শারিরিক সমস্যা যেমন ব্লাড প্রেসার দ্রুত কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ঘাড় ফুলে যাওয়া, ক্ষুদামন্দা, পেটে ব্যাথা, দীর্ঘমেয়াদী জ¦র প্রভৃতি দেখা দেয়।
বিড়ালের নখের আচরে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সকল বিড়াল শরীরে ব্যাকটেরিয়া বহন না করলেও অধিকাংশ বিড়াল ব্যকটেরিয়া তবহন করে থাকে। তাই বিড়াল নখে আচর দিলে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত, নয়লে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিড়াল আঁচড় দিলে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়
শখ করে বিড়াল পোষলে বিড়ালের আঁচড় আমাদের খেতেই হবে। বিড়াল বাড়িতে রাখলে আচর লাগবেই, এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বিড়াল আঁচর দিলে ভ্যাকসিন দিতে হবে কি না এবং কি ভ্যাকসিন দিতে হয় অনেকের সে বিষয়ে ধারণা নেয়। তো চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক বিড়াল আঁচড় দিলে কি ভ্যাকসিন দিতে হয় সে সম্পর্কে।
বিড়াল আঁচড় দিলে ভ্যাকসিন দিতে হবে কি না তা নির্ভর করবে ক্ষতস্থানের গভীরতা অনুযায়ী। তাই বিড়াল কামড় দিলে ক্ষতস্থানের গভীরতা ভালোভাবে দেখা গুরুত্বপূর্ন। বিড়ালের আঁচড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে যদি রক্তপাত হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং তখন টিকা নেওয়াটাও জরুরি। কিন্তু আঁচড়ে যদি রক্তপাত না হয়, তাহলে ভয় পাওয়ার কারণ নেয় এবং টিকা নেওয়ারও প্রয়োজন নেয়। সেক্ষেত্রে আঁচড় দেওয়ার সাথে সাথে সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পরও একবার চিবিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া জরুরি।
বিড়ালের আঁচড়ে কি ভ্যাকসিন দিতে হয় জেনে নিন:
- RABISIN VACSIN
- NOBIVAC Feline 1-HCPC
- Quadricat
- Imovax Rabies
উপরের বলা ভ্যাকসিনগুলো বিড়াল আঁচড় দিলে দেওয়া হয়। বিড়ালের আঁচড় থেকে যাতে কোনো রোগ না হয় সেজন্য এ ভ্যাকসিনগুলো দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ভ্যাকসিনগুলো ব্যবহার করবেন না। কারণ ক্ষতস্থানের ধরন এবং রোগির ধরনের উপর একেক জনের ভ্যাকসিন একেক ধরনের হয়ে থাকে।
বিড়াল আঁচড় দিলে কি দোয়া পড়তে হয়
সুস্থতা মহান আল্লাহর দেওয়া বড় একটি নেয়ামত, অসুস্থ হলেই আমরা সেটা বুঝতে পারি। বিভিন্ন সমস্যা, বিপদ-আপদ এবং সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে যেমন আমাদের দোয়া করা প্রয়োজন তেমনি কোনো সমস্যা বা রোগ বালাই হলে তা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা উচিত। বিড়াল ছোট প্রানি হলেও বিড়ালের আঁচর থেকে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হতে দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানে ব্যাথা, চুলকানিসহ শরীরে বেশ কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে। জানেন কি বিড়াল আঁচড় দিলে কি দোয়া পড়তে হয়? তাহলে জেনে বিড়াল আঁচড় দিলে যে দোয়া পড়বেন।
উচ্চারণঃ আউযুবি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ন কালেমাসমূহের উসিলায় আমি তার নিক তার সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।