সম্মানিত পাঠক, আপনি কি বায়না দলিল বাতিল করার উপায় ও বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই বায়না দলিল বাতিল করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে বায়না দলিল কি ও বায়না দলিল বাতিল করার উপায় জেনে নেওয়ার পাশাপাশি বায়না দলিলের প্রকারভেদ, বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয়, জমি ক্রয় করার পূর্বে সতর্কতা কি তা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে বায়না দলিল সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা
বায়না পত্র একটি চুক্তি মাত্র, যা দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত হয়ে থাকে। হতে পারে সেটি মৌখিক বা লিখিত। যদি মৌখিক বায়না হয়ে থাকে তাহলে সেটি বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই হয়ে থাকে, বায়না পত্র চুক্তিটি সব সময়ের জন্য লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এর ফলে পক্ষগণ তাদের লিখিত কথাগুলোর ১৯-২০ করতে পারেনা, বা একপ্রকার দায়বদ্ধ থাকে।
বায়না পত্র কি
সাধারনত বায়না পত্র আর বাইনামা দলিল উভয়ই একই কথা, কিন্তু তবে বায়না পত্র কয়েকটি পক্ষ নিয়ে চুক্তি হতে হতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে বায়না পত্র হচ্ছে মূলত দুই বা তার অধিক পক্ষগণের মধ্যে একটি চুক্তি হয়ে থাকে হোক সেটা মৌখিক বা লিখিত চুক্তি তাহাই মূলত বায়না পত্র।
বায়না দলিল কেন করা হয়
বায়না দলিল মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটি চুক্তি, কোন বিক্রেতা জমি বিক্রি করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করলে তখন সেই জমি কোন ক্রেতার কাছে বিক্রয়ের জন্য দাতা গ্রহীতার মধ্যে যে প্রস্তুতিমূলক একটি দলিল ক্রিয়েট করে প্রাথমিক কাজ সম্পাদন করা হয়, তাকেই বায়না দলিল বলা হয়।
এই দলিল সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, উক্ত জমির ক্রেতা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করে ধার্যকৃত অর্থের ১০% থেকে ৪০% অর্থ প্রদান করে।বিশ্বাস-অবিশ্বাস এর জায়গা হতে উভয়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী মধ্যস্থতা কারি হচ্ছে এই বায়না দলিল।
কিছু কিছু এমনও হতে পারে যে, গ্রহীতার পুরো টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু বিক্রেতা উক্ত জমি বিক্রয় করার জন্য যেগুলো নথিপত্র দরকার সেগুলো দিতে ব্যর্থ। মূলত এজন্যই বাইনামা দলিল একটি মধ্যস্থাতা কারি বটে। যাতে করে জমি বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিতে পারে।
ঠিক একই রূপে ক্রেতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য উক্ত সময়ের মধ্যে সে যেন বাকি অর্থ সংগ্রহ করে নিতে পারে। এজন্যই আমাদেরকে জমি ক্রয় বিক্রয় করতে হলে বায়না দলিল করা হয়। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে বায়না দলিল কেন করা হয় তা নিশ্চয় এতক্ষণে জানতে সক্ষম হয়েছেন।
বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ
বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা মূলত বায়না দলিলে লিখিত মূল্যের উপর ভিত্তি করে এর খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। তবে একটি ফরমেট এর মাধ্যমে বা একটি রেঞ্জ এর ভিত্তিতে এই দলিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ হয়ে থাকে-চলুন তাহলে আমরা এর রেঞ্জ বা ধাপগুলো জেনে নিই।
রেজিস্ট্রেশন ফি- দলিলটি লিখিত মূল্য যদি ৫ লক্ষ টাকার নিচে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ পড়বে মাত্র ৫০০ টাকা। আবার বাইনামা দলিলটির লিখিত মূল্য যদি ৫০ লক্ষ টাকা হয় তাহলে এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ ১ হাজার টাকা আপনাকে গুনতে হবে। এবং আপনার দলিলটির লিখিত মূল্য যদি ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হয় তাহলে আপনাকে উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করতে ২ হাজার টাকা গুনতে হবে।
- স্ট্যাম্প সুল্ক বাবদ ৩০০ টাকা। (দফা-৫ সি)
- ই.ফি- ১০০ টাকা।
- এন.ফি বাবদ প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠার জন্য ৩৬ টাকা।
- হলফনামা বাবদ ৩০০ টাকার একতি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প নিয়ে সেখানে হলফনামা প্রিন্ট করে উক্ত দলিলের সাথে সঠিকভাবে যুক্ত করে দিতে হবে যেন ক্রেতা বিক্রেতার নাম উল্লেখ থাকে।
- তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দলিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য থাকে না যেমন স্থানীয় সরকার কর, উৎসের আয় কর, কোর্ট ফি এবং মূল্য সংযোজন কর।
- রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির জন্য বরাদ্ধ একটি টাকা যা আপনাকে প্রদান করতে হবে।
তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন খরচ তা নিশ্চয় এতক্ষণে জানতে সক্ষম হয়েছেন। এবার চলুন, বায়না দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ পদ্ধতি জেনে নেই।
বায়না দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ পদ্ধতি
দলিলে লিখিত মূল্যের উপরে ডিপেন্ড করে মূলত যেসব খরচ করতে হয় বা আমাদের বায়না দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ সরকারি খাতে যে টাকা জমা দিতে হয় সেগুলো পে অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি শাখায় হিসাব নম্বরে ট্রেজারি চালান করে দিতে হয়।
মূলত ১-২১৬১-০০০০-১৮২৬ এ হিসাব নম্বরে জমা দিতে হবে। এবং একসাথে একটি ট্রেজারি চালানের মাধ্য, রেজিস্ট্রেশন ফি, ই.ফি, এন.ফি ইত্যাদি।
স্টাম্প সুল্ক পে অর্ডারের মাধ্যমে, দলিলে উল্লেখিত স্টাম্প বাদে হিসাব নম্বর- (১-১১০১-০০২০-১৩১১) এ জমা প্রদান করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে আপনার ব্যবহৃত দলিলে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকার নোট জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা যাবে। এন.এন.ফি নগদে অফিসে জমা প্রদান করতে হবে
বায়না দলিলের মেয়াদ কত দিন
বায়না দলিলে মেয়াদ সাধারণত সম্পাদনের তারিখ হইতে ০৬ মাস পর্যন্ত। তবে এটি উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে এর সময় বৃদ্ধি করা যায়। তবে আপনার জেনে রাখা ভালো যে বায়না দলিলে সম্পাদনের কোন সময় উল্লেখ করে না থাকলে তা অটোমেটিকলি ছয় মাস ধরে নিতে হবে। আর এটি উল্লেখ আছে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৯০৮ এর ৫৪ ধারায়। তবে বর্তমান ২০২৩ এর ভূমি আইনে এর মিয়াদ বৃদ্ধি করে এক বছর করা হয়েছে।
আপনি যে কোনো জমি ক্রয় করেন কিংবা বিক্রয় করেন না কেন তার আগে আপনাকে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে সেটি হল সেই জমিটির সমস্ত নথিপত্র ঠিক ঠাক রয়েছে কিনা। তারপর যেই বিষয়ে গুরুত্ব না দিলেই নয় তা হচ্ছে যেই জমিটি ক্রয় করবেন সেই জমিটির দাম দাম সম্পর্কে জানতে হবে। এরপর আপনি কোন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করবেন আপনাকে সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
বায়না দলিল মূলত থার্ড পার্টি হিসেবে বা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এর গুরুত্ব অপরিসিম। উভয় পক্ষের যে সমস্যা ত্রুটি রয়েছে তাই একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উভয়ই তা সেরে নিয়ে মূল দলিল সম্পাদন করতে পারে তবে এই দলিলটি উক্ত সময়ের জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে বায়না দলিল বাতিল করার উপায় ও বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার বায়না দলিল বাতিল করার উপায় নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।
এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে বায়না দলিল বাতিল করার উপায় ও বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।