সম্মানিত পাঠক, আপনি কি বায়না দলিল বাতিল করার উপায় ও বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই বায়না দলিল বাতিল করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে বায়না দলিল কি ও বায়না দলিল বাতিল করার উপায় জেনে নেওয়ার পাশাপাশি বায়না দলিলের প্রকারভেদ, বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয়, জমি ক্রয় করার পূর্বে সতর্কতা কি তা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে বায়না দলিল সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
বায়না দলিল কি
বায়না দলিল হচ্ছে বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে একটি চুক্তিপত্র। যার মধ্যে কিছু শর্ত এবং লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি সময় উল্লেখ থাকে। এবং সম্পাদিত চুক্তি পত্র অর্থাৎ বায়না দলিলটি অবশ্যই সাবরেজিস্টার অফিস করতে রেজিস্ট্রি ভুক্ত হতে হয়।
উক্ত দলিলে যদি কোন রকম মেয়াদ উল্লেখ না থাকে তাহলে সাধারণভাবে বর্তমান আইনের প্রেক্ষিতে উহার মেয়াদ অটোমেটিক এক বছর হয়ে থাকে। একটি জমি ক্রয় করার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে যে দলের সম্পাদন করা হয়।
কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখাটা জরুরি যে আপনার একটি বায়না করা দলিল এর গুরুত্ব মূলত তখনই থাকে যখন আপনার উক্ত দলিল রেজিস্ট্রি ভুক্ত হয়। আরও সহজভাষায় বলতে গেলে যেকোন জমি হোক না কেন সেই জমির দলিল যদি রেজিস্ট্রি করা না থাকে, তাহলে সেই দলিলের কার্যকারিতা থাকে না।
বায়না দলিলের প্রকারভেদ
বায়না দলিল অর্থাৎ বায়না চুক্তি মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে-যথাঃ
- রেজিস্ট্রি ভুক্ত বায়না দলিল
- রেজিস্ট্রি ছাড়া বায়না দলিল
বায়না দলিল বাতিল করার উপায়
বায়না দলিল বাতিল করার উপায় নিয়ে সম্পত্তি হস্থান্তর আইন এর ৫৩ তিপান্ন (খ) ধারা মোতাবেক, জমির বায়না বলবৎ থাকাকালীন সেই জমিটির বায়নাকৃত স্থাবর সম্পত্তিকে যিনি গ্রহীতা রয়েছেন তিনি ব্যতিত সেই জমি দাতা অন্য কারও কাছে বিক্রি বা হস্থান্তর করতে পারবে না। তবে এক্ষেত্রে মূখ্য বিষয় হল যদি না সেই জমির বায়না দলিলটি আইনগত ভাবে বাতিল করা না হয়।
আপনার জমিটির বায়না দলিল যদি রেজিস্ট্রি করা থাকে, আর যদি বায়না মেয়াদ থাকাকালীন সময়ের দাতা ও গ্রহীতার পক্ষ থেকে যেকোন কারণবশত সম্মত থাকে যে তারা তাদের বায়না দলিল বাতিল করবে, তাহলে এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে তারা আগে যে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমিটির বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশন করেছিল তাদেরকে সেই সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই দলিল রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে নিতে হবে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে আপনারা যদি বায়না দলিল বাতিলের মামলা করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে করণীয় হল বায়না দলিলের মেয়াদ ৬ মাসের মধ্যে বায়না দলিল বাতিলের মামলা করা যাবে না।
অতএব, আপনি যদি একজন বিক্রেতা হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রথমে বায়না দলিলে উল্লেখিত সময় মানে ৬ মাস শেষ হওয়া অবদি অপেক্ষা করতে হবে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে বায়না দলিল বাতিল করার উপায় গুলো জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় তা জেনে নেই।
বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয়
একটি জমি ক্রয় করার আগে আপনাকে আইনজীবীর চূড়ান্ত মতামত গ্রহণ করতে হবে। আপনার কষ্টের টাকা দিয়ে যেহেতু একটি জমি কিনবেন সেহেতু উক্ত জমিটি অবশ্যই বুঝে শুনে কিনুন। মনে রাখাটা আবশ্যক যে আপনি যেই জমিটি ক্রয় করবেন সে জমিতে কোন ঝামেলা রয়েছে কিনা তা প্রমাণ করার জন্য কাগজপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জমির দখল সম্পর্কে আপনাকে কঠোরভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। জমিটি একেবারে ঝামেলামুক্ত কিনা সেটা আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। তাড়াহুড়া করে বায়না করবেন না- কোন কাজই তাড়াহুড়া করে করা ঠিক নয়, বিশেষ করে যখন আপনার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে একটি সম্পদ তৈরি করতে যাচ্ছে তখন তো একেবারেই তাড়াহুড়া করবেন না।
মনে রাখবেন তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ। আল্লাহ না করুক তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কোন ধরনের তথ্য মিসটেক করার ফলে আপনার ক্রয় কৃত জমিটি হারাতে হয়। অতএ ব একটি জমি ক্রয় করার পূর্বে অবশ্যই সময় নিয়ে সকল ডকুমেন্টস দেখে বুঝে তারপর বায়না করুন।
যদিও হাত ব্যানার লিখিত থাকলে সামাজিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করা হয় যাহা অনেক সময় ফলপ্রসু হয় না। অতএব আপনি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে টাকা পয়সা লেনদেন করলে অবশ্যই তা রেজিস্ট্রিভূক্ত বায়না দলিল করে নিন।
বায়না দলিল রেজিস্ট্রেশনের পর যেকোন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। যাতে করে পরবর্তীতে কোন ব্যক্তির প্রশ্ন উত্থাপন করতে না পারে যে, উক্ত জমিটি আমার অগোচরে বিক্রি করা হয়েছে অর্থাৎ কোন অংশীদার অথবা অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারে এমন ব্যক্তি যাতে অবগত হয় তার জন্য প্রমাণপত্র হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান করতে হয়। তাড়াহুড়া করবেন না, ধৈর্য ধরুন, সময় নিন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
জমি ক্রয় করার পূর্বে সতর্কতা
আপনি যদি কোন একটি জমি ক্রয় করতে চান, তাহলে আপনাকে সেই জমিটি বায়না করার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল যে প্রথমত আপনি যেই জমিটি ক্রয় করতে যাচ্ছেন সেই জমিটি সম্পর্কে ভালোমতো সঠিক তথ্য নেওয়া এবং সেই জমিটির সমস্ত কাগজপত্র সঠিক কিনা তা ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে।
আর আপনার যদি কাগজ বুঝতে কোন সমস্যা হয় তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে একজন পরিচিত আইনজীবী, দলিল লেখক, অথবা জমি জমা নিয়ে বেশ দক্ষ এমন একজন পবালিক এর নিকট হতে সহযোগিতা নিতে হবে।
আমরাও ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। আপনি চাইলে আমাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন । আপনার ভূমি সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করে আপনার জমিটির দলিলাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমূহ জেনে নিতে পারেন। আপনি আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করলে উক্ত কাগজপত্র দেখে আমরা আপনাকে একটি সুপরামর্শ দিব ইনশাল্লাহ।
আপনি যদি একটি জমি কিনতে চান, তাহলে তা আগে আপনাকে অবশ্যই বাইনামা দলিল সম্পাদন করতে হবে এবং এর পাশাপাশি সেই দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। উক্ত জমিটি বায়নামা রেজিস্ট্রি করার পরে আপনি যথেষ্ট সময় পাবেন। সেই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে সেই জমিটির সম্পর্কে আপনাকে গভীরভাবে তথ্য সংগ্রহ করে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে। এবং উক্ত জমিতে যদি কোন ব্যক্তির দাবী দেওয়া থাকে তাহলে উক্ত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ্যে আসবে।
বায়না দলিল সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে বায়না দলিল বাতিল করার উপায় ও বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার বায়না দলিল বাতিল করার উপায় নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।
এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে বায়না দলিল বাতিল করার উপায় ও বায়না দলিল করার আগে ও পরে করণীয় বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।