প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোন আপনি কি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাহাজ্জুদ নামাজের আগে করণীয়, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত এবং মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম তা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা
প্রতিটি মুসলমানের উচিত হলো তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করা এবং সেই রাতে দোয়া করা। করা কিছু আমল করা কোরআন শরীফ পড়া দোয়া করা এবং হাদিস তেলাওয়াত করা। তাই তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত এবং তাৎপর্য যানা আমাদের জরুরী।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, তাই সকল নামাজের ভিড়ে আমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উত্তম। মহান আল্লাহ তা’আলা ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এরপরে বাকি নামাজ গুলো সুন্নত এবং নফল যেগুলো আদায় করলে না করলে গুনাহ হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করলে সেই দোয়া তিনি কবুল করে নেন। প্রতিটা মুমিনের উচিত নিজেকে পাপমুক্ত করার জন্য এবং শয়তানের ধোকা থেকে বাচার জন্য হলেও তাহাজ্জতের নামাজ আদায় করা। এতে করে আমাদের সকলের ঈমান মজবুত হবে।
তাই মুক্তি পেতে হলে আমাদের উচিৎ আমল করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে কুরআন ও হাদিসে যেসব বিধি বিধান দেওয়া আছে সেগুলো আমাদেরকে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমাদেরকে আমল করে যেতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের আগে করণীয়
তাহাজ্জুদ নামাজের আগে অবশ্যই আপনাকে যথাযথ নিয়ম পালন করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতেন তখন মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত মেসওয়াক করতে হবে। এরপরে অজু করে তাজবীহ পড়তেন এরপরে নামাজ শুরু করতেন।
- ১. আল্লাহু আকবার দশবার
- ২. দশবার আলহামদুলিল্লাহ
- ৩. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ১০ বার
- ৪. সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস
- ৫. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ১০বার
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
আমরা হয়তো অনেকেই জানি এবং অনেকেই জানিনা তাদের জন্য পরিপূর্ণ তাহাজ্জুদ নামাজ এর নিয়ম তুলে ধরা হলো। এবং তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ইতিপূর্বেই আমরা জেনেছি। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সূরা বেঁধে দেওয়া নেই।
তাই যে কোন সূরা দিয়ে এ নামাজ আদায় করা যাবে। আপনারা যদি বড় বড় সূরা মুখস্ত থাকে তাহলে সেই সকল বড় বড় সূরা দিয়ে নামাজ পড়া উত্তম। আমাদের প্রিয় নবী তিনিও তাহাজ্জুদের নামাজ বড় বড় সূরা দিয়ে পড়তেন আর এই নামাজের নিয়ম হলো দুই রাকাত করে আদায় করা।
আপনাকে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। আর এভাবেই তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন আমীন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি ও বাংলা নিয়ত নিম্নে উল্লেখ করে দেয় হলঃ
- আরবি নিয়তঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাতায় সালাতি তাহাজ্জুদি মুতাওয়াজ্জিহান ইল্লা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
- বাংলা নিয়তঃ দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়তে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা
তারাবির নামাজ সর্বেোচ্চ ৮ রাকাত উত্তম। কিন্তু সর্বনিম্ন ২ রাকাত করে নামাজ পড়তে হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বেশিরভাগ সময় তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ ৮ রাকআত পড়ে বেতেরের ৩ রাকাত পড়তেন। প্রিয় নবী সর্বমোট ১১ রাকআত নামাজ আদায় করতেন।
যদি কেউ এশার সালাত আদায়ের পরে বেতরের সালাত আদায় করে তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পরে বেতের নামাজ পড়ার কোন দরকার নেই। এবং তখন দুই রাকাত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেই হবে। আর এই জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মে এবং পুরুষদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মে কোন ধরণের কোন কোন পার্থক্য নাই। তবে ইসলামের সৌন্দর্য এর জন্য মহিলাদের নামাজের আদায় করার ক্ষেত্রে একটু জীর্ণ শীর্ণ ভাবে আদায় করা সবচেয়ে উত্তম। মহিলারা তাহাজ্জুদ নামাজ স্বাভাবিক নিয়মেই আদায় করতে পারবেন। মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের ধারাবাহিক বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
- প্রথমে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে।
- কিভাবে নিয়ত করতে হবে তা আমরা ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ করেছি। নিয়ত করে হাত বাধঁতে হবে।
- তারপরে আপনাকে “ছানা” পাঠ করতে হবে।
- ছানা পাঠ করা শেষ হলে প্রথমে “সূরা ফাতিহা” পাঠ করবেন এবং সূরা ফাতিহা পাঠ করা শেষে অন্য যেকোনো সূরা পাঠ করবেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে লম্বা সূরা পাঠ করবেন।
- সূরা পাঠ করা শেষে রুকুতে যাবেন।
- রুকু থেকে দাঁড়িয়ে আল্লাহর গায়েবী কদম মোবারকে সিজদা করবেন।
এভাবেই দুই রাকাত নামাজ শেষ করে সালাম ফিরাবেন। তাহলেই আপনার তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা হয়ে যাবে। আর আপনি চাইলে এইভাবে ২ রাকাত করে যত ইচ্ছা তাহাজ্জুদের নামা্জের নিয়ত করে পড়তে পারবেন।
পুরুষদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুতের নামাজ দু রাকাত দু রাকাত করে পড়তে হয় আপনি দুই রাকাত থেকে শুরু করে চার রাকাত বা আট রাকাত যত বেশি পড়তে পারেন তত ভালো। এক্ষেত্রে আমরা জানি তাহাজ্জুদ নামাজ হল ঘুম থেকে উঠে যে নামাজ আদায় করা হয় তাই শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
প্রথমত একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জাইগাই দাঁড়ানো তারপরে নিয়ত করা। নিয়ত করা শেষ হলে তাকবিরে তাহরিমা ” ‘আল্লাহু আকবার” বলা। তারপরে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলা। অতঃপর ছানা পাঠ করা।
ছানা পাঠ শেষ হলে সূরা “ফাতেহা” পাঠ করবে এবং সূরা ফাতেহার সাথে মিলিয়ে সূরা পাঠ করবে হবে। এর পরে রুকুতে গিয়ে “সুবহানা রব্বিয়াল আজিম” পাঠ করতে হবে কমপক্ষে ৩ বার। অতঃপর সিজদাহতে গিয়ে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” পাঠ করবে হবে এবং যথারীতি ২য় রাকাত আদায় করে বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরে নামাজ শেষ করতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আর আপনি যদি মনে করেন যে এই বিষয়টি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিবেন তাহলে শেয়ার অপশনে গিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ে এই পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করছি আমাদের আজকের এই সম্পন্ন আর্টিকেলটি পড়ে তাহাজ্জুদ নামাজ খুব সহজেই আদায় করতে পারবেন।