সম্মানিত পাঠক, আপনি কি জাল দলিল চেনার উপায় এবং জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই জাল দলিল চেনার উপায়নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে জাল দলিল চেনার উপায় জেনে নেওয়ার পাশাপাশি জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে জাল দলিল সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা – জাল দলিল
জাল দলিল একটি মারাত্মক প্রতারণা! যার কবলে অনেক মানুষের প্রাণনাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে আপনি এই জাল দলিল এর প্রতারণায় প্রতারিত না হন। এজন্য আপনার কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন উক্ত বিষয়ে। চলুন তাহলে হলে আমরা এখন এই জাল দলিল এর বিষয়ে কিছু ধারণা জ্ঞান সংগ্রহ করে নিই।
জাল দলিল চেনার উপায়
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে জাল দলিল চেনার উপায় কি? মূলত সেজন্যই আমরা শুধু মাত্র আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই আজকের পোষ্টের এই পাঠে জাল দলিল চেনার উপায় গুলো বিস্তারিত জেনে নিব। আপনি যদি জাল দলিল চেনার উপায় জেনে না থাকেন, তাহলে এই অংশ টুকু মনযোগ দিয়ে পরে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন। জাল দলিল চেনার উপায় নিচে উল্লেখ করে হল।
দলিল নম্বর দেখে জাল দলিল নির্ণয়
দলিলের প্রথম পাতায় উপরের দিকে মূলত বামে একটি এবং ডানে আরেকটি নাম্বার থাকে। ডান দিকের নাম্বারটি বাম দিকের নাম্বার চেয়ে ছোট হয়ে থাকে; ডানদিকে ৪৮৯৩ থাকলে বামদিকে তার থেকে বড় সংখ্যা হবে যেমন ৪৯৩৮। বামদিকের সংখ্যাকে দলিলের ক্রমিক নাম্বার হিসেবে পরিচিত এবং ডান দিকের সংখ্যাক দলিল নাম্বার হিসেবে পরিচিত। ডান দিকের নাম্বার বাম পাশের তুলনায় বড় অলে সেটি উক্ত দলিলটি জাল হিসেবে একটি সন্দেহের অবকাশ ঘটতে পারে।
দলিলদাতার স্বাক্ষর ও টিপসই যাচাই করে
দলিল দাতার সাক্ষর এবং টিপসই পরীক্ষা করে জালিয়াতি নির্নয় করা যায়। এর জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করতে হয়। আবেদন করা হলে যার হাতের লেখা, টিপসই বা সাক্ষর বলে দাবি করা হচ্ছে তাকে নোটিস দিতে হয়। তারপর, উক্ত ব্যক্তির লেখা, সাক্ষর বা টিপসই নেওয়া হয়।
যদি মৃত্যু বা অন্য কোন কারনবশত দলিলে স্বাক্ষরকারীকে পাওয়া না তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির আগের কোন স্বাক্ষর কিংবা টিপসই অন্য দলিল থেকে কালেক্ট করে সেটা আবার বিশেষজ্ঞের পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দলিলটি জাল কিনা সে সিদ্ধান্তে পোঁছানো যায়।
দলিল লেখার ফরমেট নির্ণয়
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬০ সালের পর থেকে দশমিক পদ্ধতির হিসাব পরিচালনা করা হয় এবং এর পাশাপাশি ১৯৬০ সালের আগের কোন জমির দলিলে যদি দশমিক পদ্ধতিতে জমির হিসাব খাজনার পরিমান উল্লেখ করা থাকে তাহলে সীক্ষেত্রে উক্ত জমির দলিলটি জাল হিসেবে গন্য করা হবে।
কোন রেজিষ্ট্রি দলিল নিয়ে সন্দেহ থাকলে কিংবা সন্দেহ জনক মনে হলে সেক্ষেত্রে আপনাকে তর্কিত রেজিষ্ট্রি দলিলটি সম্পাদন করার সময় সেই অঞ্চলে যিনি সাব-রেজিষ্ট্রার ছিলেন তাকে খুজে বের করে নিয়ে তিনি আগে যেই দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন সেটি কালেক্ট করে সেটার সাথে ভালোমত পরিক্ষা নিরীক্ষার মাধযমেমিলিয়ে দেখে জাল দলিল নির্ণয় করা যায়।
দলিলে লিখিত বিভিন্ন ভাষা বা শব্দ যাচাই
‘ভূমি উন্নয়ন কর’ শব্দটি আসলে ১৯৭৬ সালে অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পরে এক বিশেষ বিবেচনায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে একটি মূখ্য বিষয় হচ্ছে ‘ভূমি উন্নয়ন কর’ শব্দটি যদি ১৯৭৬ সালের আগের দলিলে লিখে তা বরাবরের মতো পরিত্রান করার কথা উল্লেখ থাকে তাহলে উক্ত জমির দলিলটি জাল হিসেবে গন্য বা বিবেচিত হবে।
লিখিত দলিলটির মালিকানা যাচাই
সন্দেহকৃত দলিলে যদি বিভিন্ন দলিল বা খতিয়ানের রেফারেন্স দেওয়া থাকে তাহলে উক্ত দলিল বা খতিয়ান পর্যালোচনার মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তরের ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তর্কিত দলিলের সহিত বায়া দলিলের মালিকানা হস্তান্তরের বিবরনের সামঞ্জস্য না থাকলে দলিলটি জাল দলিল হিসেবে গন্য করার অবকাশ থাকে।
বালাম বই বা রেজিস্টার যাচাই
দলিলের রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সন্দেহের উদ্বেগ হলে রেকর্ড রুমে তল্লাশীর মাধ্যমে দলিলটি রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে কি হয় নাই তা জানা যায়। তল্লাশীর মাধ্যমে বালাম বহিতে যদি দলিলটির রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে কোন তথ্য না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত দলিলটি জাল হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বর্তমান সময়ে দলিলে যে ছবি থাকে তা যাচাই করা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা হয় যে, যিনি কোন দলিল নকল বা জাল করে তখন মূল দলিলে ক্রেতা বিক্রেতার গ্রহীতার নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য বিবরণ ঠিক ঠাক রেখে শুধুমাত্র ক্রেতা বিক্রেতার ছবি পরিবর্তন করে থাকে। শুধু অন্য একজনের ছবি সংযুক্ত করে বাকি সব হুবুহু সৃজন করে।
আপনি যখন দলিলটি তল্লাশি দিবেন তখন মুল দাতা-গ্রহীতার নাম, ঠিকানা সবই সঠিক পাবেন এবং দলিলটি যে জাল সেটি সনাক্ত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে দলিলে সংযুক্ত ব্যক্তিটির ঠিকানা এবং তার ছবিটি ভুল রয়েছে কিনা সেটা আপনাকে পরিস্কার ভাবে যাচাই বা অনুসন্ধান করে নিতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনাকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। কোন জমি ক্রয় করার পূর্বে আপনাকে উক্ত বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে নিতে হবে আশা করা যায় তাহলে আপনার জমি ক্রয় করা সম্পূর্ণরূপে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে জাল দলিল চেনার উপায় জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম জেনে নেই।
জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম
জাল দলিল বাতিল করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে মূলত জাল দলিল প্রমানিত হওয়ার সাথে সাথে সেই দলিল বাতিল করার জন্য খুব বেশি দেরি না করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করে ফেলতে হবে। আপনার দলিল জাল প্রমানিত হওয়ার পরে এই মামলা তামাদি আইনের ১ম তফসিলের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যে করা যাবে।
দলিল জালকারীকে দণ্ডবিধির ৪৬৩-৪৭৩ ধারা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করা যাবে। আর উক্ত জাল দলিল বাতিল করতে হলে আপনি চাইলে ১৮৭৭ এর ধারা মোতাবেক শাস্তি হিসেবে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করতে পারবেন।
দলিল বাতিলের সঙ্গে সম্পত্তির দখল পাবার মামলাও করা যায়। আদালত দলিল বাতিলের আদেশ/রায় প্রদান করলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন। উক্ত কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালাম বহিতে লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
জাল দলিল চেনার উপায় সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে জাল দলিল চেনার উপায় নএবং জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম সেই সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার জাল দলিল চেনার উপায় নিয়ে এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে জাল দলিল চেনার উপায় – জাল দলিল বাতিল করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।