সম্মানিত পাঠক, আপনি কি যে সকল জমি নামজারি করা যায় না সেই সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে নামজারি নিয়ে সঠিক তথ্য পেতে আপনি একদম সঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই যে সকল জমি নামজারি করা যায় না সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে যে সকল জমি নামজারি করা যায় না সেই বিষয়ে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি নামজারি কি এবং নামজারি সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য গুলো জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে নামজারি সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উপস্থাপনা
জমি কেন নামজারি করা হয় আশা করছি বিষয়টি আপনার জানা আছে। যদি জানা না থাকে তাহলেও সমস্যা নেই। আমরা এই আর্টিকেলে আপনাকে কেন নামজারির প্রয়োজন সেটা সম্পর্কেও ধারণা দিয়ে দিচ্ছি। আপনি যে সকল জমির নাম জারি করতে পারবেন না উক্ত বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। চলুন বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।
নামজারি কি
নামজারি হচ্ছে, রেকর্ড পরবর্তী সময়ে একজন ভূমি মালিকের পরিবর্তন হওয়ার প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক মালিকানার যে প্রমাণপত্র সরবরাহ করা হয় অল্প কিছু ফি এর বিনিময়ে এবং ভূমি মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে উক্ত অর্থ আদায় করে নিয়ে সেই অর্থ আবার নতুন ভূমি মালিক কে যে নথিপত্র কালেক্ট করা হয় মূলত এগুলোকেই নামজারি বলে।
নামজারি হচ্ছে একজন ভূমি মালিকের, সকল ভূমির প্রমাণপত্রের উপাদান সমূহের একটি মুখ্য উপাদান। অর্থাৎ সহজ ভাবে আমরা বলতে পারি একটি মালিক তার ভূমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য যে সকল দলিলাদি সরবরাহ করে বা সংরক্ষণ করে তার মধ্যে নামজারি খতিয়ান একটি মুখ্য বিষয়।
অন্যভাবে বলা যায় একজন ভূমি মালিক তার পূর্ব ভূমি মালিকের নাম পরিবর্তন করে নিজ নামে খতিয়ান গ্রহণ করাই হচ্ছে নামজারি অর্থাৎ একটি জমির প্রমান পত্র।
যেসব জমির নাম জারি করা যায় না
আমাদের একটি জমির মালিকানা পরিবর্তন হলেই আমরা উক্ত জমিটির নামজারি করে থাকি। তবে কিছু প্রেক্ষাপট আছে, যে সকল প্রেক্ষাপটে একজন ভূমি মালিক কে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামজারীর অনুমতি দেয় না বা উক্ত জমিটির নাম জারি করা যাবে না বা হবেনা। চলুন উক্ত জমিগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই-
- অংশের বেশি নামজারি করতে চাইলে
- মূল খতিয়ানে আবেদনকৃত জমি না থাকলে
- জমি যদি ভ্যাসটেট প্রপার্টি হয়ে থাকলে
- জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা সঠিক না থাকলে
- জমি এক দাগে নামজারি নিতে চাইলে
- আবেদনকৃত জমিটির দলিল ভুয়া দলিল হয়ে থাকলে ইত্যাদি।
একটি জমি নামজারি করতে হলে আপনাকে উপরোক্ত বিষয়গুলি অবশ্যই পর্যালোচনা করতে হবে। তানাহলে আপনি আপনার জমিটুকু নিজের নামে নামজারি করতে ব্যর্থ হবেন। এবার আসুন, উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে ধারণা নেওয়া যাক।
অংশের বেশি নামজারি করতে চাইলে
ধরুণ, আপনার জমির খতিয়ানে আপনি উক্ত জমির মালিক ৫০ শতাংশের, কিন্তু এখন আপনি যদি ৭০ শতাংশ জুড়ে জমি বিক্রি করে দেন অথবা ভিন্নভাবে নামজারি করেন, তাহলে এক্ষেত্রে আপনি নামজারি করতে পারবেন না। মানে ৫০ শতাংশের মালিক হলে এর বেশি জায়গা নামজারি করতে পারবেন না।
মূল খতিয়ানে আবেদনকৃত জমি না থাকলে
মনে করুন আপনি একটি জমি ক্রয় করেছেন! উক্ত জমির কাগজপত্র আপনি দেখে শুনেই ক্রয় করেছেন। আপনার দলিলে ৬০ শতক জমি ক্রয় করেছেন, দখলেও ৬০ শতক জমে রয়েছে। উক্ত জমিটি আপনি রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিভক্ত করেছেন।
পরক্ষণে নামজারিতে যাওয়ার সময় আপনি বিষয়টি বুঝতে পারলেন যে, আপনি যেই দাগে জমিটি ক্রয় করেছেন উক্ত দাগে আপনার পূর্ব মালিকের ৬০ শতক জমি অবশিষ্ট নেই। এইরকম প্রেক্ষাপটে আপনি আপনার রেজিস্ট্রি দলিল থাকা শর্তেও এবং আপনার উক্ত জমিটি দখলে থাকা শর্তেও আপনি ৬০ শতক জমি নামজারি করতে পারবেন না।
এখানে আপনাকে অংশ মোতাবেক যেটুকু জমি পাচ্ছেন ঠিক ততটুকু জমি নামজারি নিতে হবে। তবে আপনার সাথে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই আপনি আইনের সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের সকলেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা উচিত। আপনার সাথে এরকম ঘটনা ঘটে থাকলে দ্রুত আইনি সহযোগিতা গ্রহণ করুন।
জমি যদি ভ্যাসটেট প্রপার্টি হয়ে থাকলে
আপনার আবেদন কৃত ভুমিটি যদি ভিপি সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে আপনি আপনার নিজ নামে নামজারি করতে পারবেন না। বলা বাহুল্য যে, আপনার কাছে যদি উক্ত জমির উপযুক্ত প্রমাণ না থাকে তাহলে থাকে সেক্ষেত্রে কোর্টের অর্ডার নিয়ে জমিটি নাম জারি করতে হবে।
জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা সঠিক না থাকলে
আপনি আসলে যেই জমির মালিকানা পেয়েছেন সেটি আপনি কিভাবে কখন পেলেন, কোথায় থেকে হয়েছে এ সমস্ত বিষয়ে সঠিক প্রমাণ পত্র দাখিল করতে পারছেন না। অর্থাৎ আপনার জমির আগের যিনি মালিক ছিলেন তার ধারাবাহিকতা ঠিক নেই। এক্ষেত্রেও আপনার প্রাপ্য জমি নিজ নামে নাম জারি করতে পারবেন না।
জমি এক দাগে নামজারি নিতে চাইলে
আপনি একটি জমি মালিকানা পেয়েছেন! একটি দলিলের মাধ্যমে। উক্ত দলিলে বেশ কয়েকটি দাগ উল্লেখ করা আছে এবং এও বলা আছে যে, আপনি ভোগ দখল করবেন একটি দাগে। প্রেক্ষাপটটি যদি এমন হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে উক্ত জমিটি আপনি নিজ নামে নামজারি করতে চাইলে। একটি দাগে আপনি নামজারি করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত দলিলে উল্লেখিত দাগ সমূহেই নামজারি গ্রহণ করতে হবে।
আবেদনকৃত জমিটির দলিল ভুয়া দলিল হয়ে থাকলে
আপনি যে দলিলের মাধ্যমে একটি জমির মালিকানা পেয়েছেন উক্ত দলিলটি যদি জাল হয় বা ভুয়া হয় সেক্ষেত্রে আপনি আপনার দলিল থাকা শর্তেও উক্ত জমিটি নামজারি করতে পারবেন না। আপনি যদি এরকম প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আইনের সহযোগিতা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন আইনের সহযোগিতা ছাড়া আপনি কোন কাজ করলে তা যেন বেআইনি না হয়ে যায়।
নামজারি সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য
আপনি এক খন্ড জমি ক্রয় করবেন কিংবা আপনি যে কোন ভাবে মালিক হবেন। বিষয়টি আপনি বুঝতে পারেন এবং জানতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি উক্ত জমিটির কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নেবেন। প্রয়োজনে একজন আইনজীবীর সহযোগিতা গ্রহণ করুন। আমরাও জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে দিয়ে থাকি প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
জায়গা জমি আপনার বাকি জীবন চলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থায়ী সম্পদ এবং প্রতিটি মানুষের জন্য এটি খুবই সেনসিটিভ বিষয়। জমি নিয়ে কখনই হেয়ালি করবেন না। এতে আপনার এবং আপনার জমি উভয়েরই ক্ষতিসরূপ হতে পারে। তাই ভূমি সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে আপনাকে সঠিক পরিচালনা গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
জমির নাম জারি সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে যে সকল জমি নামজারি করা যায় না সেই সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার যেসব জমির নাম জারি করা যায় না সেই বিষয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনারা চাইলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও এই বিষয়ে জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে নামজারি কি এবং যে সকল জমি নামজারি করা যায় না তা নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম।