জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম বিস্তারিত জানুন

সম্মানিত পাঠক, আপনি কি অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার সঠিক নিয়ম তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। 

জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম জেনে নেওয়ার পাশাপাশি খতিয়ান ও পর্চা কি, খতিয়ান বের করার জন্য যেসব তথ্য লাগে এবং জমির পর্চা যাচাই করার নিয়ম জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে জমির খতিয়ান সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

উপস্থাপনা – জমির খতিয়ান

এখন আপনারা চাইলে অনলাইন এর মাধ্যমে আপনার জমির খতিয়ান বের করে নিতে পারবেন এর পাশাপাশি সেই খতিয়ান এর একটি সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করা যাবে এবং সেটি ডাউনলোড করে নিজের কাছেও নিতে পারবেন।

ভেন্ডার দিয়ে আপনি যদি আপনার জমির খতিয়ান এর সার্টিফায়েড কপি বের করতে চাইলে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে খতিয়ান এর সার্টিফায়েড কপি বের করতে চান তাহলে আপনি ৫০ থেকে টাকার বিনিময়ে ডাউনলোড করতে পারবেন। 

খতিয়ান ও পর্চা কি

খতিয়ান হচ্ছে মূলত এক ধরণের পাকা বই যেখানে জমি সংক্রান্ত সকল বিবরণ দেয়া থাকে। অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে একজন ব্যক্তির ভু-সম্পত্তির সমস্ত বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড তৈরি করা হয় তাকেই খতিয়ান বলা হয়। আর অন্যদিকে পর্চা হল চূড়ান্ত খতিয়ান করার আগে ভূমির মালিকের খসড়া খতিয়ান  যে অনুলিপি তৈরি করা হয় তাকে পর্চা বলে।

আরো পড়ুনঃ-  অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিল

জমির যেকোনো প্রকার কাজ সম্পাদনের জন্য জমির খতিয়ানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি কারণ জমির খতিয়ান ছাড়া জমির কাজ কখনোই সম্পূর্ণ করা যায় না। আশা করছি আপনারা খতিয়ান ও পর্চা কি তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, খতিয়ান বের করার জন্য যেসব তথ্য লাগে তা জেনে নেই।

খতিয়ান বের করার জন্য যেসব তথ্য লাগে 

বর্তমান সময় প্রযুক্তি এত বেশি উন্নত হয়েছে যে আপনি আপনার বাসাতে বসেই এন্ড্রয়েড ফোনের সাহায্যে খতিয়ান বের করতে পারবেন। জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য খতিয়ানের প্রয়োজন হয়। সুতরাং যদি আপনার খতিয়ান হারিয়ে যায় তাহলে এখন চাইলে অনলাইন থেকে খতিয়ান বের করে নিতে পারবেন খুব সহজেই।

অনলাইনে খতিয়ান যাচাই করার ক্ষেত্রে যেসব তথ্য দরকার হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ 

  • পর্চার নাম জানতে হবে
  • জমির দাগ নাম্বার জানতে হবে
  • ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার জানতে হবে
  • জন্ম তারিখে জানতে হবে
  • মোবাইল নাম্বার জানতে হবে
  • জমির স্থান,বিভাগ,জেলা,উপজেলা এবং মৌজা সম্পর্কে জানতে হবে

আপনার কাছে যদি এই তথ্যগুলো থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে অনলাইন থেকে বিনামূল্যে জমির খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন এবং খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি বের করতে পারবেন। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে খতিয়ান বের করার জন্য যেসব তথ্য লাগে তা জানতে পেরেছেন।

জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম

আপনি যদি আপনার জমির খতিয়ান বের করতে চান, কিংবা আপনার জমির পর্চা চেক করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে এখন আপনি একেবারে সঠিক স্থানেই প্রস্থান করেছেন। কেননা আমরা পোষ্টের এই অংশে কিভাবে অনলাইন থেকে জমির খতিয়ান বের করা যায় তা ধাপে ধাপে জানিয়ে দিব।

আপনি জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর জানা থাকলে আপনাকে যেকোন একটি ব্রাউজার থেকে অথবা এই লিংকে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনার সামনে একটি ওয়েব পেইজ ওপেন হবে সেখানে মেনুবার থেকে আপনাকে খতিয়ান নামক অপশনটি বাছাই করতে হবে। তারপরে নিচে দুইটি অপশন দেখতে পারবেন একটি সার্ভে খতিয়ান এবং অপরটি জারি খতিয়ান।

আরো পড়ুনঃ-  হেবা দলিল খরচ কত - হেবা দলিল কি বাতিল করা যায়

এবার আপনি যে খতিয়ান টি বের করতে চাচ্ছেন তার ওপর ক্লিক করুন তারপর আপনার সামনে একটি খতিয়ান পেজ ওপেন হবে। এবার আপনি যদি নামজারি খাতিয়ান বের করতে চান তাহলে আপনার জেলা উপজেলা ও খাতিয়ানের নাম্বার এখানে দিতে হবে তাহলে আপনার খতিয়ান বিনামূল্যে দেখতে পারবেন।

এছাড়াও আরো একটি অপশন রয়েছে সার্ভে খতিয়ান আপনি যদি সার্ভে খতিয়ান বের করতে চান তাহলে এখানে আপনার বিভাগ ,জেলা উপজেলা এবং খতিয়ানের ধরন বেছে নিতে হবে তারপর  আপনার উপজেলা অনুযায়ী একটি মৌজা বেছে নিতে হবে, তারপর সেই মৌজা অনুসারে একটি খতিয়ানের তালিকা আসবে সেখানে মালিকের নাম এবং খতিয়ানের নাম্বার দিয়ে আপনার জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন।

খতিয়ান এর সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড

খতিয়ান এর সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে আগে সঠিকভাবে খতিয়ান যাচাই করতে হবে। এরপরে আপনি যদি এখন খতিয়ানার সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করে নিতে চান, তাহলে সেখানে “আবেদন করুন” নামক একটি অপশন রয়েছে সেখানে ক্লিক করতে হবে। 

আপনার সামনে একটি পেয়ে যাবেন আপনি সেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো দিতে হবে অর্থাৎ আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল আইডি নাম্বার। তারপর সঠিকভাবে টাকা পরিশোধ করতে হবে। খেয়াল রাখবেন আপনি খতিয়ান অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন নাকি খতিয়ান সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন।

আপনি যদি খতিয়ান অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে কোন টাকা প্রদান করতে হবে না আপনি বিনামূল্যে এটি ডাউনলোড করতে পারবেন। আর আপনি যদি আপনার জমির খতিয়ান সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড করে নিতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে  ৫০/৬০ টাকা দিতে হবে। 

আপনি এভাবে খুব সহজেই অনলাইন থেকে খাতিয়ান সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করতে পারবেন। মনে রাখবেন আপনি কিন্তু খতিয়ান অনলাইন কপি সার্টিফায়েড কপি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে আপনি জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে এই খতিয়ান সার্টিফায়েড কপি ব্যবহার করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ-  অনলাইনে জমির রেকর্ড বের করার নিয়ম

জমির পর্চা যাচাই

আপনি যদি আপনার জমির দাগ এবং খতিয়ান নাম্বার জানেন তাহলে আপনি আপনার হাতে থাকা মোবাইলের ফোনের মাধ্যমেই পর্চা যাচাই করতে পারবেন। অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার জন্য যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে কিংবা এই লিংকে ক্লিক করলেই আপনাকে একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর “স্মার্ট ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ” অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করতে হবে।

এখানে ক্লিক করার পর চারটি অপশন আসবে তার মধ্যে দুইটি হল সার্ভে খতিয়ান ও নামজারি খতিয়ান। আপনি যদি সার্ভে করতেন বের করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে সার্ভে খতিয়ানের উপর ক্লিক করতে হবে তারপরে সেখানে আপনাকে নিজের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা এবং খতিয়ানের ধরন সিলেক্ট করলে আপনার সার্ভিস খতিয়ান বের করতে পারবেন।

সার্ভে খতিয়ান বের করার জন্য খতিয়ানের দাগ নাম্বার এবং মালিকানার নাম জানতে হবে। এভাবে আপনি খুব সহজে এই জমির মালিকানা বের করতে পারবেন।

জমির খতিয়ান সম্পর্কে লেখকের মতামত

আমরা ইতিমধ্যে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

Leave a Comment