সম্মানিত পাঠক, আপনি কি ই-নামজারি কি? অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে ই-নামজারি নিয়ে সঠিক তথ্য পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন জেনে নেওয়ার পাশাপাশি ই-নামজারি কি, জমির তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য এবং আবেদন সংক্রান্ত ঘোষণা জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে ই-নামজারি কি সেই সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
ই-নামজারি কি
ই-নামজারি হচ্ছে নামজারির একটি অনলাইন প্রক্রিয়া। যাহা ইন্টারনেট সংযোগ এর মাধ্যমে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে (নামজারি,মিউটেশন,খারিজ,জমাভাগ- একই জিনিস) এর আবেদন সম্পূর্ণ করা হয়। যা আগে ম্যানুয়ালি বা হাতে লিখে করা হতো, তাই এখন বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে আপনি আপনার ই-নামজারির আবেদনটি নিজে নিজেই একটিমাত্র স্মার্টফোনের মাধ্যমে করে নিতে পারবেন।
ই নামজারি হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া! যার মাধ্যমে পুরাতন ভূমি মালিক এর নাম পরিবর্তন করে নতুন ভূমি মালিকের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ করা হয়। আর এই ই-নামজারীর আবেদনটি আপনি ঘরে বসেই নিজে নিজে করে নিতে পারবেন, যদি একটিমাত্র স্মার্টফোন ও তার সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে।
এখন আমরা ই-নামজারির আবেদন প্রক্রিয়া গুলো দেখে নিব। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে ই-নামজারি কি তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন কিভাবে করবেন তা নিচের অংশে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন
প্রথমে আপনাকে যেই কাজটি করতে হবে তা হল আপনার কাছে থাকা যেকোন একটি ডিভাইস (স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ) নিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন সচল করতে হবে। এরপর আমরা একটি ব্রাউজার ওপেন করব, আমরা এখন ক্রোম ব্রাউজারটি ওপেন করে নিব। ক্রোম ব্রাউজার এর সার্চ বক্সে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটটি সার্চ করব, ওয়েবসাইটটি হচ্ছে- www.land.gov.bd
উপরোক্ত লিংকে ল্কিক করলে আপনাকে একটি পেইজে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর একটু নিচের দিকে গেলে আমরা কয়েকটি অপশন পেয়ে যাব তার মধ্যে ই-নামজারি নামক অপশনটি বেছে নিব। ই-নামজারি নামক অপশনে ক্লিক করলে আপনারা দেখতে পাবেন আবেদন করার প্রথম ধাপ।
ই-নামজারি নামক অপশনে ক্লিক করার পরে আপনি যদি খেয়াল করেন তাহলে বিভিন্ন নির্দেশিকা দেখতে পাবেন যেমন টিউটোরিয়াল নামক অপশন রয়েছে, নামজারির আবেদন নামক অপশন রয়েছে, খসড়া আবেদন নামক অপশন রয়েছে এবং আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা নামক অপশন রয়েছে। এগুলো অপশনের মধ্যে আমাদের যেহেতু ই-নামজারির আবেদন করতে হবে তাই আপনাকে নামজারি অপশন বেছে নিতে হবে।
নামজারি আবেদন অপশনে প্রবেশ করার পর আমরা একটি ফর্ম পেয়ে যাব, যে ফর্ম টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মনোযোগ সহকারে পূরণ করতে হবে। এখানে কোন তথ্য গোপন করা যাবে না, কোন তথ্য গোপন করলে তা পরবর্তীতে যদি ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আপনার আবেদনটি বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আবেদনের ঘোষণার মধ্যে যা থাকবে
মালিকানার সূত্রের বিবরণ
যে ভূমিটির জন্য নামজারির আবেদন করা হচ্ছে সেই ভুমিটি কিসের ভিত্তিতে মালিকানা প্রমাণ করে তার একটি প্রমাণ পত্র। যেমন ক্রয় সূত্রে মালিক, হেবা, দান-পত্র, ওয়ারিশ সূত্রে, আদালত কর্তৃক ডিগ্রী, নিলাম, অধিগ্রহণ, বন্দোবস্ত ইত্যাদি এগুলো হচ্ছে জমির মালিকানা প্রমাণ পত্রের ধরন। আবেদনকৃত জমি টি যে সূত্র পড়বে সেটি টিক চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে।
ক্রেতা/বাদী/গ্রহীতার তথ্য
যিনি নাম জারির আবেদন ঠিক করবেন বা যার নামে নামজের এর আবেদনটি হবে তার তথ্য এখানে প্রদান। আবেদনকারী যদি ব্যক্তি হয়ে থাকে তাহলে তার নাম ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য প্রদান করতে এবং আবেদন করি যদি নাবালক হয় অথবা প্রবাসী হয় তাহলে তার প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। আর যদি আবেদনকারী কোন প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের সকল লিগাল তথ্য প্রদান করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির তথ্য প্রদান করতে হবে।
আবেদন সংক্রান্ত ঘোষণা
এ পর্যায়ে এসে বেশ কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনাকে দিতে হবে যেমনটি হল-
- সর্বশেষ রেকর্ড অথবা নামজারি হতে জমির ধারাবাহিক মালিকানা আছে কিনা।
- আবেদনকারীর দলিল দাবি ও হিতসা সঠিক রয়েছে কিনা।
- আবেদিত জমি দখলে আছে কিনা।
- উক্ত জমিটি অধিগ্রহণকৃত কিংবা আংশিক খাস অথবা অর্পিত সম্পদ আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।
- জমিটিতে কোন মামলা মোকদ্দমা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
- জমিতে সরকারি কোন স্বার্থ আছে কিনা।
- সর্বশেষ ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদ আছে কিনা।
- আবেদিত জমিটির সর্বশেষ জরিপকৃত তথ্য ইত্যাদি।
জমির তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য
এ পর্যায়ে আবেদনকৃত জমির তফসিল এর বিবরণ প্রদান করতে হবে। যে সকল তথ্য প্রদান করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে-খতিয়ানের ধরন, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, দলিল নম্বর, দলিলের তারিখ এ সকল তথ্যগুলো প্রদান করতে হবে।
ইতিপূর্বেই বাদীর তথ্য প্রদান করায় সেখানে অটোমেটিকলি বাদী বা গ্রাহীতার সমস্ত তথ্য ফিলাপ হয়ে চলে আসবে।
দাতার তথ্য ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংযুক্তি
- দাদার নাম ঠিকানা প্রদান করতে হবে।
- দাতা বেচে না থাকলে তার ওয়ারিশান প্রদান করতে হবে।
- হোল্ডিং নাম্বার প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ এখানে হোল্ডিং নাম্বর বলতে ভূমি উন্নয়ন কর এ যে হোল্ডিং নাম্বার দিতে হয় আপনাকে সেটি প্রদান করতে হবে।
- এন আইডি কার্ড নাম্বার দিতে হবে না দিলেও সমস্যা নেই।
- হস্তান্তরিত জমির পরিমাণটি উল্লেখ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত কারণ
- মূল দলিলের স্ক্যান কপি।
- খতিয়ানের স্ক্যান কপি।
- ওয়ারিশনের প্রয়োজন হলে ওয়ারিশনের কপি।
- জমির চৌহদি সহ হাত নকশার কপি।
- সর্বশেষ একটি অঙ্গীকার নামায় টিক চিহ্ন প্রদান করে আপনাকে পেজটি সাবমিট করতে হবে।
আবেদন সাবমিট করার পর আপনার কাছে ট্রেকিং নাম্বার চলে আসবে, সেই ট্রেকিং নাম্বার অনুসরণ করে আপনি আবেদন ফি প্রদান করলেই আপনার নামজারীর কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। আপনি আবেদন ফি মোবাইল ব্যাংকিং ( বিকাশ, নগর রকেট) অথবা চাইলে ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে প্রদান করতে পারবেন।
আপনি ঘরে বসেই নিজে নিজে ই-নামজারীর আবেদনটি সম্পূর্ণ করে। এর একটি হার্ডকপি আপনার সংগ্রহ রেখে দিন। হার্ডকপিটি যেদিন শুনানির ডেট হবে সেদিন আপনাকে আপনার উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট প্রদান করতে হবে বা দেখাইয়া যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য আপনাকে হার্ড কপিটিও সংরক্ষণ করতে হবে।
ই-নামজারি একটি আবেদন প্রক্রিয়া মাত্র। বর্তমানে আবেদনের পর আপনাকে সরজমিনে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে ই-নামজারির কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
নামজারির আবেদন সম্পর্কে লেখকের মতামত
আমরা ইতিমধ্যে অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার ই-নামজারি কি? অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে ই-নামজারি কি? অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।