অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন কি – অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয়

সম্মানিত পাঠক, আপনি কি অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই নিয়ে সঠিক সন্ধান পেতে আপনি একদম ঠিক স্থানেই এসেছেন। আমরা আজকের এই ব্লগ পোষ্টে আপনাদের সুবিধার কথা ভেবেই অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার সঠিক নিয়ম তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। 

অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয়

তো আপনি যদি আজকের সম্পন্ন ব্লগ পোষ্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম জেনে নেওয়ার পাশাপাশি খতিয়ান ও পর্চা কি, খতিয়ান বের করার জন্য যেসব তথ্য লাগে এবং জমির পর্চা যাচাই করার নিয়ম জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে জমির খতিয়ান সম্পর্কে কিছু বিশেষ তথ্য সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

উপস্থাপনা – অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন

আজ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করছি বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সেনসিটিভ। আপনি যদি জমি ক্রেতা হন, অথবা জমির বিক্রেতা, ওয়ারিস, ভাগীদার, বা পড়শি হয়ে থাকেন তাহলে অগ্রক্রয় বিষয়ে আপনার একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি বলে আমি মনে করছি। কারণ আপনার একটি অবিচক্ষনতা কিংবা অসতর্কতার ফলে ঘটে যেতে পারে নানা ধরনের আইনে জটিলতা।

অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন কি

অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন হচ্ছে মূলত একটি অধিকার যা জমির মালিক সঠিক উপায়ে তার নিজভূমি বিক্রয় করে দেওয়ার পরেও কিছু ব্যক্তি আছে যারা বিক্রি করা জমিটি আবারও পাওয়ার অধিকার রাখে। যা ইংরেজীতে যা রাইট অব প্রিয়েমশন এবং মুসলিম আইনে যা হক শূফা নামে পরিচিত। এ ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের কর্তৃক এ আইনটি সর্বপ্রথম প্রবর্তন হয়।

আরো পড়ুনঃ-  হেবা দলিল কি - হেবা বিল এওয়াজ দলিল বাতিল করার নিয়ম

 

পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলেও চলমান ছিল যা এখন পর্যন্ত চলমান। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা তাদের হক সবার মধ্যে অন্য কোন জাতিগোষ্ঠী বা ব্যক্তি যেন এসে তাদের শান্তি এবং বসবাসের মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য তৎকালীন সময়ে এই আইন প্রচলন করা হয়। যা বর্তমানে মুসলিম পারিবারিক আইন এর মাধ্যমে আজও চলমান।

অগ্রক্রয় মামলার ধরন সমূহ

কৃষি এবং অকৃষি উভয় ধরণের সম্পত্তির ক্ষেত্রেই অগ্রক্রয়ের অধিকার দাবি করে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪ ধরনের অগ্রক্রয় মামলা হয়ে থাকে। নিচে বিষয়গুলো নিয়ে আপনার জানানোর জন্য উল্লেখ করা হলো-

  • মুসলিম আইনের অধিন অগ্রক্রয় মামলা।
  • যেগুলো কৃষি জমি রইয়ছে সেগুলোর ক্ষেত্রে- প্রজাস্বত্ব আইন (সংশোধন ২০০৬) এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন আইন ১৯৫০ এর ৯৬ ধারা অনুসারে অগ্রক্রয় মামলা।
  • অকৃষি জমির ক্ষেত্রে- অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৪৯ এর ২৬ ধারায় অগ্রক্রয় মামলা ।
  • বন্টন আইনের ৪ ধারায় অভিভক্ত বাড়ীর সম্পত্তির ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় মামলা।

তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে অগ্রক্রয় মামলার ধরন সমূহ জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশনের উদ্দেশ্য গুলি জেনে নেওয়া যাক।

অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশনের উদ্দেশ্য

অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারনত কোনো জমি অন্য কোন ওয়ারিশদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত না হয়ে, যে যার হক নিজেদের মধ্যে থাকে এবং উক্ত স্থানে বা জমিতে যাতে বহিরাগত কেউ অধিকার না নিতে পারে। আর পরে যাতে সেরকম পরিবেশের বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। 

এজন্য অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন এর সিস্টেম বা আইন প্রচলিত আছে। বিষয়টি আরেকটু ক্লিয়ার করি! মনে করুন, আপনি একটি ভূমির মালিক। উক্ত ভূমি একটি দাগে আরও আপনার অন্য ওয়ারিশগণের সম্পত্তি রয়েছে বা উক্ত খতিয়ানে আপনার আরও অংশীদার রয়েছে।

আপনি এটি বুঝতে পেরেছেন এবং উক্ত জমি আপনি ক্রয় করতে চাচ্ছেন। এখন আপনি যেটি করতে পারেন সেটি হচ্ছে অগ্রক্রয়। অর্থাৎ উক্ত জমি আপনার বাকি অংশীদার বা ওয়ারিশ আপনাকে না জানিয়েই অন্যত্রে বিক্রয় করেছে। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশনের উদ্দেশ্য কি তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয় তা জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ-  অনলাইনে জমির রেকর্ড বের করার নিয়ম

অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয়

কোন জমি গ্রহীতার কাছে বিক্রয় করে দেওয়ার পরে যদি সেই দাগে থাকা অন্য কোন উক্ত জমির ওয়ারিশগণ উক্ত জমি তাদের নামে রাখতে ইচ্ছা পোষন করে থাকে তাহলে। এমতবস্থায় অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন এর মামলা করা হয়। আপনাকে যদি বিষয়টি আরো ক্লিয়ার করে বলি তাহলে বিষয়টি এরকম হবে-

আপনি ধরে নিন যে, আপনার আপনার নিজ ক্রয় করা জমি অথবা পৈতৃক সম্পত্তি যেই স্থানে অবস্থান করছে উক্ত স্থানের অন্য কোন ওয়ারিশগণ কোন জমি গ্রহীতার কাছে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে, তাহলে এক্ষেত্রে সেই জমিটি আপনি নিকে কিনে নিতে চাইছেন কিন্তু আপনাকে বিক্রেতা উক্ত জমিটি বিক্রি করতে রাজি নন।

কিংবা বিষয়টি এমনও হতে পারে আপনার ক্রয়ের অধিকার সম্পত্তিটি আপনার অজান্তেই বিক্রয় হয়েছে এমত অবস্থায় আপনি জানতে পারছেন উক্ত জমিটি বিক্রয় হয়েছে এখন আপনি উক্ত জমিটি পুনরায় আপনার নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিবেন এমতবস্থায় আপনার করণীয় হচ্ছে অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন। তো আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয় তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, অগ্রক্রয়ের মামলার জন্য কত টাকা প্রয়োজন তা জেনে নেওয়া যাক।

অগ্রক্রয়ের মামলার জন্য কত টাকা প্রয়োজন

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৬(৩) ধারা মোতাবেক অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন মামলা করার জন্য আপনাকে যত টাকা খরচ করে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

দলিলে উল্লেখিত মোট মূল্যের টাকা পরিশোধ করতে হয়।

  • দলিলে টোটাল টাকার উপর ২৫% হারে জরিমানা দিতে হয়।
  • দলিলে টোটাল টাকার উপর শতকরা ৮% হারে সুদ দিতে হ।

অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা যাবে না

আপনারা হয়তো জানেন যে প্রতিতা জিনিসেরই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বিদ্যামান রয়েছে। ঠিক যেমন অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন করতে পারবেন না সেটিরও ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে আসুন আর বেশি কথা না বাড়িয়ে কোন ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন মামলা করা যাবে না তা নিচের অংশ থেকে জেনে নেওয়া যাক-

  • অগ্রক্রয়ের অধিকার আপনার যদি কোন কারণ বশত ক্ষুন্ন হয়ে যায় অর্থাৎ আপনি অগ্রক্রয়ের অধিকার হারান।
  • অগ্রক্রয়ের মামলা করতে যদি তামাদির সময়ে অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে এই মামলা আর করা যাবে না।
  • জমির বিক্রেতা বা হস্তান্তর দাতা পুনরায় যদি তার নিজ নামে জমিটি ফেরত নিয়ে নেই, সেক্ষেত্রে আপনি অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন না।
আরো পড়ুনঃ-  হেবা দলিল খরচ কত - হেবা দলিল কি বাতিল করা যায়

আপনি যে জমিটি ক্রয় করতে চাচ্ছেন বা আপনি কি জমি বিক্রি করতে চাচ্ছেন তাহলে আপনার উচিত হবে আপনার অংশীদারদেরকে প্রথমে জানানো যদি তারা কিনতে সক্ষম হয় তাহলে তাদের কাছে বিক্রি করুন অথবা তাদের ক্রয় করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা না থাকলে অন্যত্রে বিক্রি করুন। অযথা ঝামেলায় জড়াবেন না অর্থ-শ্রম-ভোগান্তির ভাগীদার হবেন না।

অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন সম্পর্কে লেখকের মতামত

আমরা ইতিমধ্যে অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন কি ও অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয় সেই সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন নিয়ে লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই ব্লগ পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের মাঝে কোন মতামত কিংবা মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আপনি চাইলে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানানোর সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন কি ও অগ্রক্রয়ের মামলা কখন করা হয় তা নিয়ে বিস্তারিত অনেক তথ্য আলোচনা করলাম। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

Leave a Comment