কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম – কাঠবাদাম এর উপকারিতা

কাঠবাদাম খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার, যার মধ্যে অসংখ্যা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। অসংখ্যা পুষ্টিউপাদান কাঠবাদামের মধ্যে থাকায়, এ খাবারের উপকারিতাও অনেক। কাঠবাদাম আমরা অনেকেই খায়, তবে এটি খাওয়া সঠিক নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। যার ফলে কাঠবাদামের সঠিক উপকার আমরা পাই না।

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম

তাই কাঠবাদাম খেলে, এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম, খেলে কি উপকার হয় এবং কাঠবাদামের কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কিনা এসব জেনে কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা এসব বিষয় আলোচনা করবো। আপনি যদি কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম

কাঠবাদাম খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। যার মধ্যে অনেক উপকারিগুন রয়েছে। তবে তাই বলে কাঠবাদাম যতটা ইচ্ছা, বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না। কাঠবাদামের সঠিক উপকার পেতে কাঠবাদাম সঠিক নিয়মে খেতে হবে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না, কাঠবাদম খাওয়ার নিয়ম কি। তাহলে নিচের অলোচনা থেকে জেনে নিন কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

কাঠবাদাম খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। শুকনা, গুড়ো করে অথবা ভিজিয়ে কাঠবাদাম খাওয়া যায়। কাঠবাদাম শুকনো অথবা ভিজিয়ে যেভাবেই খাবেন  এর উপকারিতা পাওয়া যাবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য বেশি উপকারি। তাদের মতে কাঠবাদাম মানবদেহে হজম করা কঠিন, তাই তারা বাদাম ভিজিয়ে খেতে বলেছেন।  তাই বলে মুঠ ভর্তি করে বাদাম ভিজিয়ে খাওয়া যাবে না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৬ থেকে ১০ টি  অথবা ৪০ গ্রাম কাঠবাদম ভিজিয়ে খেতে হবে। কাঠবাদামে মোট চর্বি রয়েছে ৮০ শতাংশ। তাই অতিরিক্ত কাঠবাদাম স্বাস্থের জন্য ভালো নয়।

কাঠবাদামের সঠিক উপকার পেতে দৈনিক ১০ টির বেশি খাওয়া যাবে না। আর কাঠবাদাম ৬ থেকে ৭ ঘন্টা মতো ভিজিয়ে খাওয়া স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারি।

কাঠবাদামের উপকারিতা

কাঠবাদাম খুবই স্বাস্থসম্মত একটি খাবার। একজন ব্যক্তিকে সুস্থ রাখতে কাঠবাদামের ভূমিকা রয়েছে। কাঠবাদামের মধ্যে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ই’ সহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যার কারনে কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর বিভিন্ন উপকার পায়। চলুন জেনে নিই কাঠবাদামের উপকারিতা সম্পর্কে।

আরো পড়ুনঃ-  কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

ক্যান্সার প্রতিরোধ: ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কাঠবাদাম অত্যান্ত কার্যকারী একটি খাদ্য উপাদান। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে।

হার্ট ভালো রাখে: নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে হার্টের স্বাস্থ ভালো থাকে। কাঠবাদামে থাকা পটাশিয়াম, ক্যাালসিয়াম, প্রোটিন এসব উপাদান হার্টের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ন। এসব উপাদান হার্টের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে হার্ট অ্যাটাকের  ঝুঁকি কমায়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: কাঠবাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।

ওজন নিয়ন্ত্রন করে: কাঠবাদাম শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কাঠবাদাম খেলে অনেকক্ষন পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। যার ফলে ওজনকে নিয়ন্ত্রনে রাখে।

হাড় ও দাঁত ভালো রাখে: কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস, মিনারেল ও ভিটামিন হাঁড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ কওে এবং দাঁত ও হাড় সুরক্ষা রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: কাঠবাদামে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যার ফলে মানবদেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: মানবদেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে কাঠবাদাম।

কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়: বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান করে।

উপরের অলোচনা থেকে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কাঠবাদাম খেলে আপনার শরীর কতটা ফিট থাকবে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অন্তত ৫ টি করে কাঠবাদাম রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।

ভেজানো কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা

বাদাম বিভিন্ন ধরনের রয়েছে, যার মধ্যে পুষ্টিগুনে সেরা হলো কাঠবাদম। পুষ্টিগুনে ভরপুর কাঠবাদামের গুনের শেষ নেয়। তাই কাঠবাদামকে সুপার ফুড বলা হয়। কাঠবাদাম বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়, যেভাবেই খাবেন কাঠবাদামের পুষ্টিগুনাগুন পাওয়া যাবে। তবে কাঠবাদাম ৮ ঘন্ট মতো ভিজিয়ে, খোস ছাড়িয়ে খাওয়া স্বাস্থের জন্য বেশি উপকারি। জেনে নিন ভেজানো কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতাগুলো কি।

বাড়তি ওজন: মানবদেহে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। সে ক্ষতিকর চর্বিকে কমাতে সহায়তা করে কয়েকটি ভেজানো কাঠবাদাম, যার ফলে শরীরের বাড়তি ওজন কমে যায়। তাই যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভুগছেন তারা নিয়মিত কয়েকটি কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাবেন।

বয়সের ছাপ কমায়: নিয়মিত ভেজানো কাঠবাদাম খেলে বার্ধ্ব্যকের ছাপ কমে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে: কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে, যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে।

পেটের সমস্যা: যাদের হজমে সমস্যাসহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ভেজানো কাঠবাদাম খাবেন। ভেজানো কাঠবাদাম হজম ও পেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

আরো পড়ুনঃ-  গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খেলে কি হয়

সর্দি-কাশি: কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে সর্দি কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ ভালো রাখে: নিয়মিত ভেজানো কাঠবাদাম মানসিক স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয় এবং মস্তিষ্ককে সবসময় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

চোখ ভালো রাখে: নিয়মিত কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে চোখকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে ভালো রাখে এবং চোখের জ্যোতি বাড়ে।

স্ট্রোক প্রতিরোধ করে: অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এসব নিয়ন্ত্রনে না থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর নিয়মিত কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে ডায়াবেটিস, ওজন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে, যার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

স্মৃতি  বৃদ্ধি করে: কাঠবাদাম নিয়মিত ভিজিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়: কাঠবাদাম নিয়মিত ভিজিয়ে খেলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কাঠবাদাম কত টাকা কেজি

কাঠবাদাম খুবই সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় একটি খাবার। কাঠবাদামের মধ্যে অসংখ্যা পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যার কারণে  কাঠবাদামের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কাঠবাদামের ব্যপক চাহিদা থাকায়,বর্তমানে বাংলাদেশেও এখন কাঠবাদাম উৎপাদন করা হচ্ছে। মানবদেহকে সুস্থ রাখতে খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া জরুরি। আর কাঠবাদাম আমাদের শরীরের জন্য অনেক স্বাস্থকর, তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কাঠবাদাম রাখা উচিত। কাঠবাদাম কিনতে হলে আমাদের কাঠবাদামের সঠিক দাম সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। নিচের আলোচনা থেকে কাঠ বাদামের দাম সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কাঠবাদাম কত টাকা কেজি।

কাঠবাদাম সাধারণ ভাবে খাওয়ার পাশাপশি, বর্তমানে সময়ে রান্নার উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঠবাদামের ব্যপক চাহিদার কারণে, এর দাম আগের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আগেকার দিনে প্রতি কেজি কাঠবাদামের মূল্য ছিল ৬০০ টাকা। তবে বর্তমানে দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত কাঠবাদামের দাম হয়েছে।

তবে কোয়ালিটি অনুযায়ী দামের কিছু পার্থক্য হতে পারে। ভালো মানের প্রতি কেজি কাঠবাদামের দাম ১০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর পাইকারি দামে কিনলে দাম কিছুটা কম পেতে পারেন। আবার অনেকগুলো কাঠবাদাম একসাথে কিনলে দামে কিছুটা ছাড় পেতে পারেন।

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

কাঠবাদামের ক্ষতিকর দিক

কাঠবাদাম খুবই স্বাস্থসম্মত একটি খাবার সেটি আমরা আগেই অলোচনা করেছি। স্বাস্থসম্মত খাবারের কারণে এ খাবার ব্যপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে কাঠবাদাম স্বাস্থকর খাবার হলেও অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে কাঠবাদামের কোনো ক্ষতিকর দিক নেয়।  তবে অতিরিক্ত কাঠবাদাম স্বাস্থের জন্য মোটেও ভালো নয়। আবার এমন অনেক রোগ বা সমস্যা আছে, যেগুলো মানুষের দেহে থাকলে কাঠবাদাম খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যেগুলো আপনাদের সামনে আলোচনা করবো। আর আপনাদের কাঠবাদাম খাওয়ার আগে অবশ্যই বিষয়গুলো জানা জরুরি।

  • যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের বাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে বাদাম অল্প করে খেয়ে দেখতে পারেন, যদি সমস্যা না হয় তাহলে খেতে পারেন।
  • ভিটামিন ই’ সাপ্লিমেন্ট যারা নিয়মিত খাচ্ছেন তাদের জন্য বাদাম খাওয়া উচিত নয়। কারণ ২৮ গ্রাম বাদামের ভিটামিন ই’ এর মাত্রা ৭.৪ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে। আর প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই’ গ্রহন করা উচিত। তাই ভিটামিন ই’ সাপ্লিমেন্ট এবং কাঠবাদাম একসাথে খেলে, ভিটামিন ই’ শরীরে অতিরিক্ত হয়ে যাবে। আর শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন ই’ গেলে মাথাব্যাথা, চোখের সমস্যা হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে গ্যাস ও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
  • কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা অতিরিক্ত শরীরে প্রবেশ করলে কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যা হতে পারে।
  • কাঠবাদামে প্রচুর ফ্যাট ও ক্যালোরি রয়েছে,  পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট ও ক্যালোরি মানবদেহের জন্য উপকারি।  তবে অতিরিক্ত ফ্যাট ও ক্যালোরি মানবদেহের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত ফ্যাট মানবদেহে প্রবেশ করলে ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে দেখা যায়।
  • যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা একবারেই অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলবেন। অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরো পড়ুনঃ-  রুই মাছের বৈশিষ্ট্য - রুই মাছের উপকারিতা জানুন

তাই কাঠবাদামের সঠিক উপকার পেতে দৈনিক ৪০ গ্রাম অথবা ৬ থেকে ১০ টা কাঠবাদাম  খেতে হবে। কাঠবাদামের অনেক স্বাস্থগুন রয়েছে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খান এবং সুস্থ থাকুন।

লেখকের শেষ বক্তব্য

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম – কাঠবাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম – কাঠবাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি এই ধরনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে।

Leave a Comment